পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বললেন

লাভ হবে না, এমন প্রকল্প বাদ দেওয়া হবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
লাভ হবে না, এমন প্রকল্প বাদ দেওয়া হবে

ঢাকা : রাজনৈতিক সরকারের মতো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প আর থাকবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

তিনি বলেন, নতুন যে প্রজেক্টগুলো আসবে সেগুলো একনেকে যাওয়ার আগে বিচার বিবেচনা করে দেখতে হবে।

সোমবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি ভবনে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। সভায় পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবদুল বাকী। সভায় পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য সদস্য, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প কিংবা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে, এমন প্রকল্প আবার যাচাই-বাছাই করা হবে। এসব প্রকল্প দ্রুত মূল্যায়ন করা হবে। প্রয়োজনে ছাঁটাই করা হবে।

তিনি বলেন, চলমান প্রকল্প হলেই রেখে দিতে হবে, তা নয়। লাভ হবে না, এমন প্রকল্প বাদ দেওয়া ভালো। এমন অনেক প্রকল্প আছে, যেগুলো খুবই অপচয়মূলক। সড়কসহ বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্পে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে বলে দেখা গেছে। অনেক সময় ঠিকাদারদের স্বার্থ দেখা হয়েছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা প্রকল্পগুলো দ্রুত মূল্যায়ন করে যে প্রকল্পে লাভ হবে না, সেটি বাদ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, সরকারের অনেক বড় বড় দুর্নীতি আছে, যেটা নকশা পরিবর্তন করতে হয়, ব্যয় বাড়াতে হয়, এগুলো বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে। দেশীয় ঠিকাদারের রাজনৈতিক প্রভাব আছে। এটা যাতে না হয়। সবগুলো আমাদের দেখতে হবে। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, মেগা প্রকল্প বা বড় প্রকল্পের বিষয়ে কোনো নীতি নেই। এগুলো নির্ভর করবে কোন পর্যায়ে আছে। প্রকল্পের বিষয়ে সময় একটা বড় বিষয়। এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এগুলো এগোবে নাকি এগোবে না। কিছু খরচ হয়ে গেলেই প্রকল্প শেষ করতে হবে বিষয়টা এমন না। কিন্তু যৌক্তিক অর্থনৈতিক বিবেচনা হলো কত খরচ করেছি তা না, বাকি কাজ করতে কত লাগবে এটা বড় বিষয়। পুরো প্রকল্প থেকে কত সুবিধা পাব এটাই বিষয়। প্রকল্পে লাভ-ক্ষতি দেখতে হবে। কিছু খরচ হয়ে গেছে বলেই মানসিক চাপ থাকবে, প্রকল্প শেষ করতে হবে বিষয়টা এমন নয়। এটা অর্থনীতির যুক্তিতে চলে না। সরকারি অর্থ খরচের পেছনে কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির বিষয়ে আবার নতুন করে বলতে হবে না। এটা বন্ধে আমরা কাজ করছি। আমরা কিছু কাজ করব। বড় প্রকল্পে নকশা কেন সংশোধন করা হলো এটা আমরা ক্ষতিয়ে দেখব। ভবিষ্যতে যাতে ভুল না করি এটা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করব।

তিনি আরও বলেন, ব্যয় সংকোচনে উন্নয়ন ব্যয় কমানোর বড় জায়গা। প্রকল্প যাচাই করা জরুরি। প্রকল্পে বিশৃঙ্খলা আছে। অনেক বড় প্রকল্পে সমস্যা আছে। প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে এটা যাচাই করে ছাঁটাই করতে হবে। চলমান থাকলে রাখতে হবে বিষয়টি এমন নয়। প্রকল্পে বিশৃঙ্খলা আছে। নকশা, ব্যয়, সময়সীমা নিয়ে অনিয়ম আছে। অনেক প্রকল্পে দুর্নীতি আছে যা কম খরচে হতে পারত, কিন্তু নকশার কারণে ত্রুটি আছে। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে প্রকল্পে বেশি খরচ হয়। অনেক প্রকল্প আছে, কেন আছে জানি না। দেশীয় ঠিকাদার আছে সেগুলো বাদ দেওয়া হবে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন অনেক বেশি। আমাদের খরচ কমাতে হবে। প্রকল্প গ্রহণে সেসব বিবেচনা করতে হবে। এখন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা বড় বিষয়। আমাদের অর্থনীতির মাপকাঠি জিডিপি। অথচ কর্মসংস্থান বাড়ানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, জিডিপি বাড়ানো জরুরি নয়।

বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যের সমালোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্য মূল্যস্ফীতি-জিডিপি সূচক নিয়ে বহুদিন ধরে সন্দেহ আছে। এগুলো সম্পর্কে সব জানি। বহুদিন ধরে কাজ করেছি, কোথায় ত্রুটি বিচ্যুতি আছে, ইচ্ছেকৃতভাবে এটা করা হচ্ছে কি না দেখা হবে।

শিক্ষা খাত সম্পর্কে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা অভিভাবক নিরুদ্দেশ। দেশে এ মুহূর্তে ৫৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টির বেশি ভিসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সবাই নিরুদ্দেশ।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে আমাদের কী ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে সবাই জানেন। সব বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা বিরাট সমস্যা। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন।

৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও এমনকি চতুর্থ পর্যায়ের মানুষও নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। কাজেই কাকে দিয়ে চালু করব? সারা দেশে প্রশাসনের একই অবস্থা। সেখানে লোকবল দেওয়াই এখন অন্যতম প্রধান কাজ।

এমটিআই

Link copied!