আলু-তেলের পর এবার কোনটা, দাম বাড়া নিয়ে শঙ্কায় ক্রেতারা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ১১:৫৫ এএম
আলু-তেলের পর এবার কোনটা, দাম বাড়া নিয়ে শঙ্কায় ক্রেতারা

ঢাকা : বছরের শেষভাগে এসে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। সবজি, চাল, আটা, ছোলা, আলু, পেঁয়াজসহ বেশিরভাগ পণ্যের দর গত সপ্তাহের চেয়ে কমেছে।

অন্যদিকে দাম বাড়ার বাজারে স্বল্প পরিমাণে আসতে শুরু করেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে আবার অন্তর্বর্তী সরকার কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কর ছাড় দেওয়ার কারণে পণ্যের আমদানি বেড়েছে।

এতে সরবরাহ বাড়ছে বাজারে, যা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখছে ইতিবাচক ভূমিকা।

তবে ভোক্তারা বলছেন, আপাতত কিছু পণ্যের দাম কমলেও ফের কখন নতুন করে বাজার লাগামহীন হয়ে ওঠে, সেই শঙ্কা তাদের মন থেকে কাটছে না। কারণ, চলতি বছর শুরু থেকেই বাজারদরের অস্থিরতা ভুগিয়েছে ভোক্তাদের।

এরপর জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতা তাতে যোগ করে নতুন মাত্রা। গেল কয়েক মাস ধরেই এক পণ্যের দাম কমলে আরও দুই পণ্য কিনতে বাড়তি পয়সা গুনতে হয়েছে ভোক্তাদের।

ফলে সরকারের উদ্যোগ কিংবা পণ্যের সরবরাহ বাড়ার কারণে বাজারদরে এখন যে প্রভাব পড়েছে তাকে স্থায়ী ভাবতে পারছেন না তারা। বাজারে যাওয়ার সময়ই কোন পণ্যটি বাড়তি দামে কিনতে হবে, সেই শঙ্কা নিয়ে বেরোতে হচ্ছে।

গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সবজির বাজার সব থেকে বেশি চড়া ছিল। ১০০-১৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যায়নি। পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ১৩০-১৪০ টাকায়। পেঁয়াজের পর চড়ে ছিল ডিমের দাম। আলুর দামও ১০০ টাকায় ছুঁয়েছিল। সেই আলু এখনো ৭৫-৮০ টাকার কমে মিলছে না। ওই সময়ে দাম না বাড়লেও বাজারে সংকট দেখা দিয়েছিল ভোজ্য তেলের। পরে চলতি মাসে তেলের দাম ফের বেড়েছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে সরকারের লক্ষ্য ছিল দাম না বাড়িয়ে শুল্ক সুবিধা দিয়ে হলেও তেলের সরবরাহ ঠিক রাখা।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে প্রায় দুই মাস আগে সরকারকে চাপ দিয়ে ভোজ্য তেল আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট কমিয়ে নেন তেল ব্যবসায়ীরা। এতেও তেলের বাজার স্বাভাবিক হয়নি। উল্টো ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকারকে চাপে ফেলে তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নিয়েছেন।

ফলে মূল্য ভোক্তার নাগালের বাইরে গেলেও নির্ধারিত দাম অনুযায়ী বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন থেকে বিক্রি হবে ১৭৫ টাকায়, যা এত দিন ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৫৭ টাকা। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়েছে।

এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬০, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।

বাজারে যাওয়া ভোক্তারা বলছেন, বছর জুড়ে ব্যবসায়ীদের নানা টালবাহানা থাকে। তেল, চিনি, চাল, আটাসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বাজার গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর দখলে থাকায় যখন-তখন ভোক্তাদের জিম্মি করেন তারা। এমনকি সরকারও তাদের হাতে জিম্মি হয়ে যায়। ফলে তারা কোন দিন কোন পণ্যের সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন, তা কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর অসহায় ভোক্তাদেরও করার কিছু থাকে না। অনেকে চাহিদা সংকুচিত করতে বাধ্য হন।

বৃহস্পতিবার মহাখালীর সাততলা বাজারে কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. ইফতেখার আহমেদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, বাজারের নিয়ন্ত্রণ অসাধু ও অর্থলোভী ব্যবসায়ীদের হাতে থাকায় তারা প্রায় দেশের মানুষকে জিম্মি করেন। দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বিষিয়ে তুলেছেন। এদের বিরুদ্ধে সরকারও সবসময় সফল হতে পারে না। তাই বাজারে আসার আগেই মনে হয়, আজ হয়তো নতুন কোনো পণ্য বাড়তি দামে কিনতে হবে।

এদিকে ওইদিন সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের কাঁচা সবজির দামে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম কমে এসেছে। প্রতি কেজি সবজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। যা কয়েক দিন আগেও ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতো।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, বনানীর বউবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। তবে কারওয়ান বাজার থেকে অন্যসব বাজারে সব ধরনের সবজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। তাছাড়া বেগুন ৪০ থেকে ৫০, শিম ৩৫ থেকে ৫০, মুলা ৪০ থেকে নেমেছে ২০ টাকায়।

এ ছাড়া প্রতি কেজি শালগম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আকারভেদে প্রতিটি ফুল ও বাঁধাকপির কিনতে ক্রেতার খরচ হবে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। পাঁচ-ছয় দিন আগে প্রতি পিস ফুলকপির দর ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

মহাখালী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী তাকদির হোসেন বলেন, সবজির দাম নির্দিষ্ট থাকার উপায় নেই। বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে। আবার পথের নানা খরচের জন্য আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।

সবজি কেনার পর শুধু কারওয়ান বাজারেই প্রতি কেজি সবজিতে অন্তত দেড় টাকা খাজনার নামে দিতে হয়। এরপর যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে সবজি কেজি প্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা খরচ পড়ে।

চলতি বছর জুড়ে চালের বাজার ছিল বেশ চড়া। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনের সময় দর আরও বেড়ে যায়। তবে এখন কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় মাঝারি চাল (বিআর-২৮ ও পাইজাম)।

বৃহস্পতিবার এ ধরনের চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৭ থেকে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ ধরনের চালের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৩ টাকার মতো কমে মোটা চালের (চায়না ইরি ও গুটি স্বর্ণা) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

এ ছাড়া সরু চালের (মিনিকেট) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। ছয়-সাত দিন আগে এ ধরনের চাল কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। সেই হিসাবে কেজিতে কমেছে ২ থেকে ৫ টাকা।

কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী শাওন আহমেদ বলেন, বাজারে নতুন ধান ওঠায় চালের দামে কিছুটা চাপ কমে এসেছে। বিশেষ করে মাঝারি মানের চালের কেজিপ্রতি অন্তত ৫ টাকা কমেছে। তাছাড়া সরু চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সবজির দাম কমায় ডিমের দামে কিছুটা চাপ কমলেও মুরগির দাম আগের মতোই রয়েছে। বাজারে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম কেনা যাচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। মুরগির দর অপরিবর্তিত দেখা গেছে। গেল সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮৫ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এমটিআই

Link copied!