ঢাকা: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার (৫ জানুয়ারি) প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ ছিল লেনদেন। টেকনিক্যাল বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।গত এক দশকে এরকম ঘটনা কম করে হলেও ১২ বার ঘটেছে, আর রোববারের ঘটনাসহ তিন বছরে বছরে ৭ বার কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বিনিয়োগকারীরা। তাদের অভিযোগেরও শেষ নেই। তবে এর সমাধান মেলে না।
যান্ত্রিক বা প্রযুক্তিগত কারণে লেনদেন বন্ধ থাকার ঘটনা এখন অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেলেও বিষয়টি ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে তারা স্টক এক্সচেঞ্জের অদক্ষতা, চেষ্টা ও উদ্যোগের অভাব বলে মনে করছেন।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লেনদেন বন্ধ থাকায় বিনিয়োকারীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে ডিএসই। একইসঙ্গে এর কারণ ব্যাখ্যা ও উচ্চতর তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এদিন সকাল ১০টায় নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু করতে গিয়ে জটিলতা ধরা পড়ে। ত্রুটি সারিয়ে লেনদেন শুরু করতে বেলা সাড়ে ১১টা বেজে যায়। দেড় ঘণ্টা দেরিতে লেনদেন শুরু হওয়ায় লেনদেনের ও নিষ্পত্তির জন্য সময় বাড়ানো হয়। দুপুর ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত লেনদেন চলে। লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য পোস্ট ক্লোজিং সেশন ছিল ১০ মিনিট। অর্থাৎ, বিকাল ৩টা পর্যন্ত লেনদেন হয়।
এ বিষয়ে এক বিনিয়োগকারী সানী বলেন, আমি চরম হতাশ। বারবার এরকম যান্ত্রিক ত্রুটি যুক্তিযুক্ত নয়। কয়েক দিন পরপরই সমস্যা। আর কোথাও এত সমস্যা হয় কি না, আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, ঠিক মতো চালাতে পারে না, নাকি কাউকে সুবিধা দিতে এরকম করা হয়, সেটা তো আমরা বাইরে থেকে দেখতে পাই না। কিন্তু দিন শেষে লোকসান হয় বিনিয়োগকারীদের।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সমস্যা হতে পারে, তবে আমাদের এখানে অনেক বেশি বেশি হচ্ছে। ত্রুটির সংখ্যা বেশি হচ্ছে। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার (সিটিও) পদ এক বছর ধরে শূন্য। স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান ইঞ্জিন শতভাগ প্রযুক্তি নির্ভর। সিটিও যদি না থাকে, তাহলে কে বলবে, এই জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা থাকলে সমাধান কী, এগুলো বলা যার দায়িত্ব, তিনিই নেই।
সাইফুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকারীরা স্টক এক্সচেঞ্জে টাকা ঢুকাচ্ছেন, সেই জায়গায় কেন এরকম হচ্ছে, সেটা বিনিয়োগকারীদের জানা উচিত। প্রথম, জনবল ঘাটতি পূরণ এবং এরপর অডিট ট্রায়াল রান করা উচিত। কারণ, এগুলো কেন হচ্ছে, কীভাবে রোধ করা যায়, তার জবাব আমরা এখনো পাইনি। আমাদেরকে অবশ্যই জানাতে হবে। বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রাখা যাবে না।
এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসই জানিয়েছে, ডিএসইর সেন্ট্রালাইজড অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) ডিএসই ফ্লেক্সটিপিতে কনফিগারেশনজনিত সমস্যার কারণে ট্রেডিং কার্যক্রম চালু করতে বিলম্ব ঘটে।
ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নাসডাক ওএমএক্স ও ফ্লেক্সট্রেড সিস্টেমসের সহযোগিতায় অটোমেটেড ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম চালু করে ডিএসই। নাসডাক ওএমএক্স সরবরাহ করে ম্যাচিং ইঞ্জিন ও ফ্লেক্সট্রেড সরবরাহ করে ওএমএস। গত দশ বছরে ওই সফটওয়্যার দিয়েই ডিএসইর লেনদেন চলছে।
পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষ হওয়ার পরে মোট লেনদেনের তথ্য ‘ওএমএস’ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেয়ে যায় ব্রোকারেজ হাউজগুলো। ওই তথ্য দিয়ে ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সম্পন্ন করা হয় সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) মাধ্যমে। এরপর বিনিয়োগকারীর কেনাবেচা হওয়া শেয়ার ও নগদ টাকার তথ্য পুনরায় সফটওয়্যারে হালনাগাদ করতে পারে ব্রোকারেজ হাউজ, যাতে পরের দিনের লেনদেন সম্ভব হয়।
সফটওয়্যার জটিলতায় এর আগেও অসংখ্যবার ডিএসইর লেনদেন বিঘ্নিত হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের ১০ মার্চ কারিগরি ত্রুটির কারণে ডিএসই সূচকে অস্বাভাবিক পরিসংখ্যান দেখানো হয়। ওই ঘটনায় ডিএসইর প্রযুক্তিব্যবস্থার কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল।
২০২৩ সালের আগষ্টে ফ্লেক্সট্রেডে ক্রুটির কারণে আগের দিনের শেয়ার কেনাবেচার নিষ্পত্তি হতে পরদিন ভোর হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে ব্রোকারেজ হাউসগুলো। ওই বছর জুলাই মাসে পরপর দুই দিন সার্ভার ত্রুটিতে লেনদেন বিভ্রাটে পড়ে ডিএসই।
তারও আগে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে এক সপ্তাহে পরপর দুবার কারিগরি ত্রুটির মধ্যে পড়েছিল ডিএসই।
ঘন ঘন কারিগরি ত্রুটির কারণ খতিয়ে দেখতে ডিএসইর পাশাপাশি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এরপর ওই বছরের ৩১ অক্টোবর বিএসইসির ৮৪৩ তম কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে লেনদেন বিঘ্নের ঘটনায় ডিএসইর সিটিওকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, টেকনিক্যাল ফল্টের কারণে লেনদেন বন্ধ ছিল। দ্রুত সময় ঠিক করে চালু করা হয়েছে। ডিএসই তদন্ত কমিটি করেছে। প্রতিবেদন দিলে বিস্তারিত জানা যাবে।
রেজাউল করিম বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এরকম ঘটনা আর না হয়, তার জন্য ডিএসই কার্যকরী উদ্যোগ নেবে বলে আমার ধারণা। ভবিষ্যতে আর এরকম হবে না। আর ডিএসইর তদন্তে যদি কারও কোনো গাফিলতি উঠে আসে, তাহলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এএইচ/এসএস
আপনার মতামত লিখুন :