১ বছর পর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম যেমন হবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪, ১১:১৭ এএম
১ বছর পর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম যেমন হবে

ঢাকা: চলতি বছর হাতে প্রয়োজনীয় সময় নেই। দ্রুত বই ছাপার কাজ শুরু করতে না পারলে জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই আগামী বছর ২০১২ সালের কারিকুলাম সামান্য সংশোধন করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে। আর ২০১২ ও ২০২৩ সালের কারিকুলামের সমন্বয়ে ২০২৬ সালে অর্থাৎ আর এক বছর পরই শিক্ষার্থীদের হাতে পরিমার্জিত কারিকুলাম তুলে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া আগের মতো নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ বেছে নেওয়া এবং এক বছরে শিক্ষার্থীদের ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষায় বসার ব্যাপারে পরিপত্রও জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, শুধু আগামী বছরের জন্য আমরা ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে যাচ্ছি। ওই কারিকুলামে যেসব ভুলভ্রান্তি আছে তা সংশোধন ও যতটুকু পরিমার্জন করা যায়, তা করব। তবে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের আগে আমাদের অনেক সময় আছে। তখন ২০১২ সালের কারিকুলামের সঙ্গে ২০২৩ সালের নতুন কারিকুলাম মিলিয়ে একটা পরিমার্জিত কারিকুলাম দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ২০১২ সালে চালু হয়েছিল সৃজনশীল পদ্ধতিতে লেখাপড়া। মুখস্থবিদ্যাকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়াই ছিল এর লক্ষ্য। এই কারিকুলামে ১১ বছরে শিক্ষার্থীরা যখন অনেকটাই আত্মস্থ হয়ে উঠেছিল, তখনই তা বাদ দিয়ে ২০২৩ সাল থেকে চালু করা হয় নতুন শিক্ষাক্রম। আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা ছিল এই কারিকুলাম নিয়ে।

অভিভাবকরা বলছেন, গত দুই বছর নতুন কারিকুলামের নামে শিক্ষার্থীদের নিয়ে চালানো হয়েছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ছিল না তেমন পড়ালেখা। এমনকি পরীক্ষাব্যবস্থাও অনেকটা তুলে দেওয়া হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীরা বাসায় পড়ালেখা বাদ দিয়েছিল। কোনো ব্যাকরণ ও গ্রামার বইও রাখা হয়নি। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়েই শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল। এখন আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ায় তাঁরা স্বস্তিবোধ করছেন। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা  দেবে। এ বছর তারা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে রচিত পাঠ্য বই পড়ছে এবং এরই মধ্যে ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে অংশ নিয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে এই শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে রচিত বইয়ের ওপর আগের মতো সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষায় বসবে। কিন্তু আগামী বছর তাদের বই পরিবর্তন হয়ে যাবে। এমনকি আগের মতো বিভাগ বিভাজনও থাকবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-এর আলোকে প্রণীত সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্য বই তাদের সরবরাহ করা হবে। সে কারণে তাদের ওপর বাড়তি চাপ এড়াতে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, সৃজনশীল পদ্ধতিতে হবে।

সূত্র জানায়, ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য আগের শিক্ষাক্রম অনুসারে প্রণীত বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখাভিত্তিক একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা এক শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই পাঠ্যসূচিটি সম্পন্ন করতে পারে। আর আগামী বছর থেকে নবম ও দশম শ্রেণিতে আগের মতো পৃথক বই পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বছর নবম শ্রেণিতে ২০১২ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্য বই দেওয়া হবে। এসব শিক্ষার্থী নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবে। তবে আগামী বছর থেকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে ২০১২ সালের সংশোধিত কারিকুলামের পাঠ্য বই।

প্রাথমিক স্তরের বিষয়ে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতেও ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে আসা হবে। তবে ২০২৬ সালে বর্তমান পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে পাঠ্য বইগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন কারিকুলামের আওতায় আসেনি। তাই তারা অনেকটাই নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। তারা তাদের মতো করেই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।

এম

Link copied!