তিতুমীর কলেজে দুই যুগের বেশি সময় ধরে নেই ছাত্র সংসদ

  • তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
তিতুমীর কলেজে দুই যুগের বেশি সময় ধরে নেই ছাত্র সংসদ

ফাইল ছবি

ঢাকা: রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী একটি কলেজ সরকারি তিতুমীর কলেজ। এটির প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল জিন্নাহ কলেজ। স্বাধীনতার পর এ কলেজের নামকরণ করা হয় সরকারি তিতুমীর কলেজ। প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাস সরকারি তিতুমীর কলেজের যাত্রা ১৯৬৮ সালে। শুরুতে এখানে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ক্লাস নেওয়া হতো। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এ কলেজে তিনটি অনুষদের অধীনে ২২ টি বিষয়ের উপর স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পরপরই ১৯৬৯-৭০ সালে এ কলেজে গঠিত হয় প্রথম ছাত্র সংসদ। ১৯৯৬-৯৭ সালে নির্বাচিত হয় সর্বশেষ কমিটি। এর পর গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাত্র ১০ বার।

সরজমিনে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে কলেজের ছাত্র সংসদ ভবন। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে ছাত্র সংসদ ভবনটি ব্যবহার করতো শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর কারনে আন্দোলনের সময়ে দুর্বৃত্তদের হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হয়েছিলো ছাত্র সংসদ ভবনটি। ভিতরে দেওয়ালে সাঁটানো অনার বোর্ডে সংরক্ষিত রয়েছে ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদকদের (এজিএস) নাম। এতে দেখা যায়, প্রথম ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা, জিএস মফিজুল ইসলাম এবং সর্বশেষ ১৯৯৬-৯৭ সালে গঠিত কমিটির নির্বাচিত ভিপি ছিলেন আক্কাছুর রহমান আঁখি ও জিএস আনোয়ারুল হক আনোয়ার।

কলেজে দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ না থাকার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার হল এই ছাত্র সংসদ। সাধারণত ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা এবং বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও উন্নয়নে ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ছাত্র সংসদের উদ্দেশ্য। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। বর্তমানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে তাঁদের বিভিন্ন দাবি ও ন্যায্য অধিকার পূরণ করতে পারবে।

ছাত্রসংসদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসাইন বলেন, যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় তাহলে ছাত্রদল অবশ্যই অংশগ্রহণ করবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য সময়ের প্রয়োজন, পরিবেশ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য রাজনীতি করে দীর্ঘ সময় জেল জুলুমের শিকার হয়েছে। ক্যাম্পাসে প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠন দৃশ্যমান হওয়ার পড়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হাওয়া দরকার।

এ সম্পর্কে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আফতাব মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ সম্পূর্ণভাবে দলীয় লেজুরভিত্তিক মুক্ত একটি আদর্শিক নতুন ধারার ছাত্র সংগঠন। আমরা দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। ছাত্র সংসদ কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতির মনোভাবকে আমি সম্পূর্ণভাবে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এমন মনোভাবকে আমরাও ধারণ করি এবং শুরু থেকেই আমরা এমনটাই বলে এসেছি। ক্যাম্পাস গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং ছাত্র সংসদ ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সেখানে আমাদের অংশগ্রহণ অবশ্যই থাকবে।

তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্র ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সর্বদা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে। আমার ছাত্র সংসদ কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতি চাই সেটা আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট কাঠামোয় এটি আর সম্ভব হয়নি। আমরা দখলদারিত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই।

ছাত্রসংসদ চালুর ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজের তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন এটা যুগের দাবি, এটা সময়ের দাবি। ছাত্র সংসদ থাকাটা অবশ্যই দরকার এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি দাবি ছিলো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা এবং ছাত্র সংসদ কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতি চালু করা। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া সব সময় থাকবে তার জন্য একটি সংগঠন দরকার তাই আমি মনে করি ছাত্র সংসদ থাকাটা অবশ্যই জরুরি। 

এসএস

Link copied!