আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ধাওয়া দিলেন ইবি শিক্ষার্থীরা

  • ইবি প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ধাওয়া দিলেন ইবি শিক্ষার্থীরা

ঢাকা : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করলে সভায় বাধা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। 

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের উপস্থিতিতে প্রশাসন ভবনের তৃতীয় তলার সভাকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা সভাস্থল ত্যাগ করেন। পরে প্রশাসন ভবন থেকে বের হলে তাদের ‘স্বৈরাচারীর দোসর ও দালাল’ স্লোগান দিয়ে ধাওয়া দেয় শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, বেলা ১২টায় ভর্তি কমিটির সভায় বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় সভাপতিদের সঙ্গে একাডেমিক দায়িত্বে থাকা আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরাও অংশ নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা সভাস্থলে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। 

এসময় সভায় আওয়ামীপন্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ড. শেলীনা নাসরীন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আসাদুজ্জামান, আইন অনুষদের ডিন ড. খন্দকার তৌহিদুল আনাম, ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি ড. রবিউল হক, অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক পার্থ সারথি লস্কর, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার, জিওগ্রাফী অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায়, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শিরিনা খাতুনসহ অন্যান্যরা। 

পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা সভা ত্যাগ করেন। শিক্ষকরা ভ্যানে করে নিজ নিজ বিভাগে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা তাদের পেছন থেকে ‘দালাল ধর, দোসর ধর’ বলে  ধাওয়া দেয়। পরে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে গিয়ে বিভাগের সভাপতি শহিদুল ইসলামকে বুধবার থেকে ক্যাম্পাসে না আসতে হুমকি দেয় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্বৈরাচারের দোসর এসব শিক্ষকরা জুলাই আন্দোলনে সরাসরি শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা করেছিল। তারা গত বছরের ৪ই আগস্ট আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের ব্যানারে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ‘নৈরাজ্যবাদী কর্মকান্ড’ আখ্যা দিয়ে মিছিল করেছিল। এছাড়া শিক্ষক শহিদুল আন্দোলন পরবর্তী সময়েও প্রতিনিয়ত শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ বিভিন্ন পোস্ট করে আসছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক তানভীর মন্ডল বলেন, ‘বিগত আওয়ামী শাসনামলে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা জিয়া পরিষদের ও গ্রীন ফোরামের শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলাসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতাকারী আওয়ামী শিক্ষকদের সঙ্গে এমন কিছু করতে চাই না। আমরা চাই, ওইসব শিক্ষকরা তাদের ভুল স্বীকার করে ফিরে আসুক। তারা তাদের রুটিন কাজগুলো করুক কিন্তু তারা যদি এখনো তাদের পূর্বের রাজনৈতিক ধ্যান ধারণা লালন করে তাহলে আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘সভায় আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানালে আমরা তাদেরকে সভা থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বের করে নিয়ে আসি।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষকই আওয়ামীপন্থী। একাডেমিক শৃঙ্খলা রক্ষায় চাইলেও তাদেরকে মাইনাস করার সুযোগ নেই। তবে যারা আন্দোলনের বিরোধীতা করেছিলো তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে সর্বশেষ সিন্ডিকেটে আলোচনা হয়েছে।’

এমটিআই

Link copied!