ঢাকা : বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় না সরকার। শুধু মানসম্মত শিক্ষা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং নৈতিকতার চর্চার মধ্যদিয়ে মানবিক মানুষ গড়ার জন্য শৃঙ্খলায় আসনে চায় সরকার। একইসাথে শিক্ষকদের আর্থিক সমস্যা নিরসন করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব কিছু সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা ঠিক নয়। স্কুল-কলেজ যারা তৈরি করেন তারা সৎ উদ্দেশেই করেন। তাই সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ঠিক নয়।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি রয়েছে, সেই নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি থাকেন, বোর্ডের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি থাকেন। এখন যদি সবাই অনৈতিকভাবে অনিয়ম করেন তাহলে ঠেকাতে পারবে? তবু অনিয়ম যদি করে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
সরকার আইনের মাধ্যমে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় কীনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি সব কিছুর সরকারের ওপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যতটুকু করা প্রয়োজন ততটুকই করা হবে।
ততটুকুর মধ্যেই সরকারের হাত সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, ততটুকই থাকবে। সব কিছুই যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে নিজেদের জায়গা-জমি অর্থ দিয়ে কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন করবে? যদি কোনও কর্তৃত্বই তাদের না থাকে তাহলে কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করবে।’
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেক শিক্ষক থাকলেও আমরা এমপিও দেই অল্প সংখ্যক শিক্ষককে। বাকি শিক্ষকরা চলেন প্রতিষ্ঠানের টাকায়। সে কারণে সব কিছুর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা যাবে না। আমাদের দেখতে হবে কোয়ালিটি। কোয়ালিটি সম্পন্ন লেখাপড়া করাতে হবে।
যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে, কমিটি কোনও অর্থ আত্মসাৎ করতে পারবে না। অনৈতিক কিছু পড়াতে পারবে না। সেটা নিশ্চিত করতে এই শিক্ষা আইন ছাড়া এনটিআরসিএ আইন, শিক্ষা বোর্ডের আইন সব কিছু দিয়ে সেফগার্ড আমাদের রয়েছে। তা যদি সঠিক প্রয়োগ না হয়, সে ব্যর্থতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়, আমাদের। সরকারের উচিত নয় যে, বেসরকারি সবকিছু পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করবে।’
প্রসঙ্গত, নন-এমপিও নিম্ন-মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি (ম্যানেজিং কমিটি)। আর আর উচ্চশিক্ষা স্তরে ননএমপিও শিক্ষক নিয়োগ দেয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (গভর্নিং বডি)। নিম্ন-মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতি দেয় মন্ত্রণালয়। আর উচ্চশিক্ষা স্তর অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা সম্পর্কে দীপু মনি আরও বলেন, ‘যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করছেন, যারা চালাচ্ছেন, তাদের কোনও এখতিয়ারই না থাকে তাহলে কেন তারা চালাবেন? অধিকাংশ মানুষ ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে। কিন্তু দেখা যায় ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে মন্দ লোক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পাড়া-মহল্লা থেকে অনেক সময় খারাপ লোকরা ঢুকে যায়। সমস্যা সৃষ্টি তারা করে।’
এদিকে, গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ‘শিক্ষা আইন, ২০২১’ এর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই খসড়া আইনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন বিধান যুক্ত করা হয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধ করা এবং আর্থিক দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। তবে তা পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, শিক্ষকদের কল্যাণে এবং মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :