অভিজ্ঞ শিক্ষকদের আগে এমপিওভুক্ত করা আবশ্যক

  • মো. রহমত উল্লাহ | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২১, ০২:০০ পিএম
অভিজ্ঞ শিক্ষকদের আগে এমপিওভুক্ত করা আবশ্যক

আমাদের বেশ কিছু নিবন্ধিত শিক্ষক বিভিন্ন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সরকারি বিধিমোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে নিয়মিত কর্মরত থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে অনার্স মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদানের জন্য সরকারি বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়মিত কর্মরত প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। 

এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও বিধি মোতাবেক নিয়োগ থাকার পরও সরকারি সিদ্ধান্ত এবং প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতার কারণে তারা এমপিও থেকে বঞ্চিত আছেন। এছাড়াও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) পর্যায়ে সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে নিয়মিত কর্মরত থাকার পরও প্রতিষ্ঠানে প্যাটার্নভুক্ত পদ শূন্য/সৃষ্টি না হওয়ায় এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না এমন বেশ কিছু শিক্ষক রয়েছেন।

নিয়োগ লাভের পর থেকেই তারা এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদানকারী বৈধ শিক্ষকগণ এমপিওভুক্ত করার দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন/সংগ্রাম করে আসছেন দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে। 

এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২১ অনুসারে জানা যায় যে, ১২ জুন ২০১৮ তারিখে প্রবর্তিত এমপিও নীতিমালা জারি করার পূর্বে যারা শিক্ষক নিবন্ধন সনদ অর্জন করেছিলেন তাদের বয়স ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলেও তারা আবেদন করতে পারবেন। এটি অবশ্যই তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। যদিও নবীনদের বঞ্চিত করে অধিক বয়স্কদের শিক্ষক হিসেবে নতুন করে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই দ্বিমত করছেন। যারা শিক্ষকতা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত থেকে বয়স কম/বেশি ৪০ পার করে দিয়েছেন তারা নতুন করে শিক্ষকতায় এসে নিজেকে আধুনিক ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে নবীনদের তুলনায় কতদিনে কতটা সফল হবেন এবং কতদিন কর্মোদ্যম নিয়ে সফলভাবে শিক্ষকতা করতে পারবেন এটি অবশ্যই ভাবার বিষয়। তবে যারা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি বিধিমোতাবেক নিয়োগ নিয়েও এমপিও বঞ্চিতাবস্থায় নিয়মিত শিক্ষকতা করে আসছেন তাদেরকে এই নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। কেননা, তারা দীর্ঘদিন শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকায় কিছুটা হলেও তৈরি হয়ে উঠেছেন, অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন।

কিন্তু সরকারি এমপিও থেকে বঞ্চিত থাকায় অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাই তাদের এমপিওভুক্ত করা অথবা এমপিওভুক্ত পদে নিয়োগ করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে নিয়োগে অগ্রাধিকার পাওয়ার সুবিধার্থে তাদের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা উচিত। অর্থাৎ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় তাদের প্রাপ্ত নম্বরের সাথে সরকারি বিধিমোতাবেক শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটা নম্বর যোগ করে আসন্ন নিয়োগের জন্য মেধাক্রম তৈরি করা উচিত। তাহলেই তারা পেতে পারেন বয়স শিথিল করার সুবিধা এবং এমপিওভুক্ত চাকরি পাওয়ার সুযোগ। তা দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

তাছাড়াও সরকারি বিধিমত নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়মিত কর্মরত এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের শূন্য পদের বিপরীতে সমন্বয় করে এমপিওভুক্ত করা উচিত। এক্ষেত্রে জনবল কাঠামো ২০২১ এর ৯.৩ উপধারায় বলা হয়েছে যে, এমপিওভুক্ত উদ্বৃত্ত পদের শিক্ষক/কর্মচারীদের সমন্বয়ের পর অবশিষ্ট শূন্যপদে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত কিন্তু এমপিওভুক্ত নয় এমন একই বিষয়/পদে শিক্ষক/কর্মচারীকে প্যাটার্নভুক্ত শূন্য পদের বিপরীতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সমন্বয় করা হবে।

বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত কিন্তু এমপিওভুক্ত নয় এমন শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে এই ধারাটি অবশ্যই সহায়ক। বিশেষ করে অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের জন্য নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে এই ধারাটি প্রয়োগ করা হলে তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। ফলে মূল্যায়িত হবে তাদের অভিজ্ঞতা, পূর্ণ হবে দীর্ঘদিনের দাবি। এক্ষেত্রে কোনো রকম ‘যদি কিন্তু’ উত্থাপন করে তাদেরকে বঞ্চিত করা মোটেও উচিত হবে না। কেননা, অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের জন্য নিয়োগকৃত হলেও তারা স্নাতক (পাস) ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান করতে পারেন, পারবেন। আবার স্নাতক (পাস) বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করা হলেও তারা অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করতে পারবেন, পারছেন।

অপরদিকে বদলির দাবিতে আন্দলন করে আসছেন এমপিওভুক্ত হাজার হাজার শিক্ষক। বিশেষ করে যারা নিজের এলাকা থেকে অনেক দূর-দূরান্তের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে নিয়োগ নিয়ে কর্মরত আছেন তারা বারবার বদলির দাবি করে আসছেন। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বতন্ত্র থাকায় সরাসরি বদলির সুযোগ বিদ্যমান নেই বিধায় তারা বদলি হতে পারছেন না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করার কথা একাধিক ‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা’য়  বারবার বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। তাই দূর-দূরান্তের প্রতিষ্ঠানে সল্প বেতনে কর্মরত শিক্ষকগণ বিশেষ করে নবীন শিক্ষকগণ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।  বদলি বা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন যে নামেই হোক না কেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মস্থল পরিবর্তনের একটা নিয়মিত সুযোগ চলমান থাকা অত্যাবশ্যক। 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে যোগ্য বিবেচিত হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ আবেদন করে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ আগেও ছিলো, এখনো আছে সীমিত আকারে। চলতি ২০২১ সালে এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কেবল নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমন সুযোগ দেয়া হয়েছে সমপদে। কিন্তু শুধুমাত্র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অর্জিত নম্বরের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা করে এই সুযোগ লাভ করতে পারবেন না অনেক শিক্ষক।

বিশেষ করে প্রথম থেকে পঞ্চম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষকগণ পিছিয়ে থাকবেন এই প্রতিযোগিতায়। তাই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ বৃদ্ধি করতে চাইলে মূল্যায়ন করতে হবে তাদের অভিজ্ঞতার। অর্থাৎ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অর্জিত নম্বরের সাথে তাদের এমপিওভুক্ত শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটা নম্বর যোগ করে তারপর তৈরি করতে হবে মেধাক্রম। তবেই বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের অনেকে পাবেন প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের এই সুযোগ।

উল্লিখিত যৌক্তিক বিষয়গুলো সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে কর্মরত বিপুলসংখ্যক শিক্ষকদের মধ্যে বিরাজমান অসন্তোষ নিরসন করে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলে প্রত্যাশা করি। কেননা, এজন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। 

মো. রহমত উল্লাহ: কলাম লেখক, সাহিত্যিক এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Link copied!