ঢাকা: প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে প্রস্তাবিত ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ বা রান্না করা খাবার বা খিচুড়ির খাওয়ানোর প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। এক হাজার কর্মকর্তার বিদেশ সফরসহ অন্যান্য ব্যয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় থাকা প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হলে এটি বাদ দেয়া হয়।
একনেকের মঙ্গলবারের (১ জুন) সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
রান্না করা খাবার বা খিচুড়ির খাওয়ানোর প্রস্তাবের কারণে গত সেপ্টেম্বরে ‘খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ সফর’ নামে সংবাদও প্রকাশ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বিদেশ সফর বাদ দেয়ার কথা বলেছিলেন। যদিও বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলেও মত দিয়েছিলেন তিনি।
একনেক সভা শেষে আজ ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একনেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ প্রকল্পটি বাদ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এটি পছন্দ করলেও এর কাঠামো পরিবর্তন করতে বলেছেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীদের খাবার দেয়া অব্যাহত রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তা রান্না করা খাবার হিসেবে নয়। নতুন কোনো ফরম্যাটে।
‘স্কুলে খাবার রান্না করা হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নতুন কোনো ফরম্যাটে স্কুলের শিক্ষার্থীদের খাবার দেয়ার প্রকল্প নিতে বলা হয়েছে।’
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, এ প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রস্তাবে বিদেশে প্রশিক্ষণসহ বেশ কিছু খাত বাদ দেয়া হয়েছিল।
এ প্রকল্পের শুরুতে এক হাজার কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। এতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রাক-মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রকল্পটির এ ব্যয়সহ অন্যান্য কিছু ব্যয় নিয়ে আপত্তি তুলে তা সংশোধনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ফেরত পাঠানো হয়।
প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের চাল, ডাল, শাকসবজি মিশিয়ে দুপুরে রান্না করা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দেয়ার কথা ছিল।
শুধু বিদেশ সফরই নয়, প্রকল্পটিতে দেশেই প্রশিক্ষণের জন্য আরও ১০ কোটি টাকা, সামাজিক সংহতির জন্য সাড়ে সাত কোটি ও পরামর্শকের জন্য ছয় কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ ছাড়া দুই কোটি টাকা দিয়ে ফার্নিচার, মিটিং, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা নিয়েও আপত্তি তুলেছিল পরিকল্পনা কমিশন।
পাশাপাশি পরিদর্শন ও মূল্যায়নের জন্য পাঁচ কোটি টাকা, খাবার সরবরাহের জন্য ১৭ কোটি টাকা, প্লেট কেনার জন্য ১১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল।
সমালোচনা ও পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির পরে ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়। শুরুতে প্রস্তাব ছিল ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকার। পরে প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি খাত মিলিয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমানোর কথা বলা হয়েছিল।
এর আওতায় পাঁচ বছর ধরে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীকে পুষ্টিকর বিস্কুট ও রান্না করা খিচুড়ি দেয়ার প্রস্তাব ছিল।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টির জোগান বাড়াতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪৯২টি উপজেলা ও ২১টি শিক্ষা থানার শিক্ষার্থীদের দুপুরে স্কুলে রান্না করা গরম খাবার দেয়ার কথা ছিল। ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১০ থেকে ২০১৪ মেয়াদে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় ‘স্কুল ফিডিং’ শীর্ষক প্রকল্প নেয়। এতে ২৩ জেলার নির্বাচিত ৮৬টি উপজেলায় নির্দিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুষ্টিকর বিস্কুট বিরতণ করা হতো।
এরপর আওতা বাড়িয়ে ৩৯ জেলার নির্বাচিত ১০৪ উপজেলার ৩১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষার্থীকে স্কুলে পুষ্টিকর বিস্কুট সরবরাহ করতে প্রকল্পটি সংশোধন করে ২০১৭ সালে একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হচ্ছে।
সোনালীনিউজ/এমএইচ
আপনার মতামত লিখুন :