শুরু হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২১, ১০:৩৬ এএম
শুরু হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি

ফাইল ছবি

ঢাকা : শুরু হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি। উপজেলাভিত্তিক সহকারী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। বর্তমানে সারা দেশে সহকারী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হবে। আর কোনো সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হবে না। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ সরাসরি নিয়োগ ও পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। 

নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা দিয়ে পদোন্নতি শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে এই উপজেলার সহকারী জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পদোন্নতি দিতে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে গত মাসে পিএসসিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ উপজেলার সম্মিলিত জ্যেষ্ঠতা তালিকায় ২৬৩ জনের নাম রয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিযোগ্য ১৯টি পদের বিপরীতে ৪০ জন শিক্ষকের এসিআর, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) রতন চন্দ্র পন্ডিত গত মঙ্গলবার বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির করায় পদোন্নতি দিতে পিএসসির সুপারিশ লাগে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে পিএসসিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মতামত পেলে পদোন্নতি দেওয়া হবে। 

শুধু খালিয়াজুরী উপজেলার শিক্ষকদের তালিকা পাঠানো হয়েছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকরা বদলি হয়ে জেলা শহরসহ অন্য উপজেলায় চলে যান। নিয়োগবিধি অনুযায়ী অন্যত্র বদলি হলে সেখানে যোগদানের তারিখ থেকে সিনিয়রিটি গণনা করা হয়। শিক্ষকদের মামলার কারণে সিনিয়রিটি নিয়ে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। খালিয়াজুরী উপজেলাটি দুর্গম হওয়ায় সেখানে অন্য উপজেলা থেকে কেউ বদলি হয়ে আসেনি। সিনিয়রিটি নিয়ে কোন জটিলতা নেই। যে কারণে সেখানকার শিক্ষকদের পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পদোন্নতি দিতে শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে মাঠ পর্যায় বলা হয়েছে। প্রস্তাব পেলেই পিএসসিতে মতামতের জন্য পাঠানো হবে।

জানা গেছে, সরকারি প্রধান শিক্ষকের পদটি ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। এর ফলে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি পিএসসির অধীনে চলে যায়। নিয়োগ বিধিমালা, সহকারী শিক্ষকদের সিনিয়রিটিসহ নানা সমস্যার কারনে পদোন্নতি বন্ধ হয়ে যায়।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এ বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষকের ৬৫ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। তবে, প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যাবে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে কমপক্ষে সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতির বিবেচনায় আসবে। আর সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে সরাসরি। নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী পিএসসি বিসিএস চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকে নন-ক্যাডার পদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করে আসছে। কিন্তু ২৩ ভাগে বিভক্ত শিক্ষকদের মামলার কারণে প্রধান শিক্ষকের ৬৫ শতাংশ শূন্য পদে পদোন্নতি আটকে যায়। শিক্ষকদের দাবি প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে ২০১৭ সাল থেকে উপজেলাভিত্তিক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব দিয়ে আসছে।  

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণায় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১৮ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। তিনটি ধাপে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও জাতীয়করণ করা হয়েছে। যে বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক নেই, সেখানেও সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি দায়িত্ব নিয়েও নানা সমস্যা রয়েছে। অনেক সহকারী শিক্ষক নিজের সুবিধামতো স্কুলের দায়িত্ব না পেয়ে চলতি দায়িত্ব নেননি। তারা চলতি দায়িত্ব নিতে অপারগতা লিখিতভাবে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি তপন কুমার মন্ডল বলেন, ২০০৯ সাল পর্যন্ত সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যারা উন্নয়ন প্রকল্পের শিক্ষক ছিলেন তারা সিনিয়রিটি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলার কারণে পদোন্নতি বন্ধ হয়ে যায়। সহকারী শিক্ষকরা পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত অবস্থায় একজন শিক্ষককে পদোন্নতির আদেশ দেন আদালত। রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক পদটি তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করায় ফের পদোন্নতি আটকে যায়। আগে উপজেলায় পদোন্নতি কমিটি ছিল। ওই কমিটি সহকারী শিক্ষকদের সিনিয়রিটি দেখে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির সুপারিশ করতো। পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করায় নিয়োগবিধি ও পদোন্নতি কমিটি অকার্যকর হয়ে যায়। পরে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের দাবি তুলে ধরলে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু চলিত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে পদে স্থায়ী করা হয়নি।

শিক্ষক নেতা তপন কুমার মন্ডল আরো বলেন, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তারা দীর্ঘদিন ধরে চলতি দায়িত্ব পালন করলেও পদোন্নতির মাধ্যমে পদে স্থায়ী না হয়ে বহু শিক্ষক অবসরে চলে যাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পান চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তা পান না। দায়িত্ব পালন করলেও প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড-১১ অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না। মাসে মাত্র দেড় হাজার টাকা দায়িত্বপালন ভাতা পান। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা বদলিতে সমস্যায় পড়ছেন। কেউ জেলার বাইরে বদলি হতে চাইলে তিনি ওই জেলার সহকারী শিক্ষকদের চাকরিতে জুনিয়র হলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে বদলি হতে হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তরা সামাজিকভাবেও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকদের সভা-সমাবেশে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তরা অংশ নিলে সরাসরি প্রধান শিক্ষক হয়েছেন যারা তাদের অনেকে নানাভাবে কটাক্ষ করেন। কারণ, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তরা সহকারী শিক্ষক। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। এনএমএস।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!