ঢাকা : সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় পদোন্নতি আসছে। ৪২৩ জন শিক্ষক পদোন্নতিযোগ্য থাকলেও ২৬২ জনকে দেয়া হবে পদোন্নতি। এরমধ্যে ১৮ জনকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ২৪৪ জন সহকারী প্রধান শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক করার কার্যক্রম চলছে।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে পদোন্নতি পেতে ঘুষ, দুর্নীতি ও এসিআর লোপাটের মতো ঘটনা ঘটছে। যে কারণে সম্প্রতি পদোন্নতির গেজেট প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পর এই পদোন্নতি পেতে শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে অর্থ সংগ্রহ ও তদবির-বাণিজ্য।
অথচ সময় কম থাকায় বিভিন্ন শহর থেকে ঢাকায় এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন) বিমানে উড়িয়ে আনা হয়েছে।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানশিক্ষকের পদ বেশি থাকলেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হতেই একটি শ্রেণি তোড়জোড় শুরু করেছে। কারণ একজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রশাসনিক ক্ষমতা ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যে কারণে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগের বিধি-বিধান থাকলেও অনেকেই অনৈতিকভাবে এই পদ বাগাতে চান।
জানা যায়, সারাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি বিদ্যালয় আছে ৩৫১টি। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক দিয়েই গোজামিলে চলছে কাজ। সম্প্রতি এই অচলাবস্থা দূর করতেই বিশেষ এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এর আগে সরকার ফিডারপদ পূর্ণ না হওয়ায় এ পদে নিয়োগ দিতে পারেনি। কারণ নিয়ম অনুযায়ী প্রধানশিক্ষক হতে হলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে পাঁচ বছর কর্মরত থাকার বিধান ছিল। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে এমন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন না থাকায় পদোন্নতি দেয়াও সম্ভব হচ্ছিলো না। কিন্ত ৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতার যে নিয়ম ছিলো তা প্রমার্জন করে পদোন্নতি দিতে চলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন সরকারি মাধ্যমিক চলছিলো ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকদের উপর ভর করে।
এছাড়াও জেলা পর্যায়ে ছিলো না জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। আশা করা হচ্ছে সামনে নতুন শিক্ষকদের যোগদান ও এই পদোন্নতি সম্পন্ন হলে সরকারি মাধ্যমিকে গতি ফিরবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, পদোন্নতি পেতে ৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা লাগে। এটি শিথিল করতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তর হয়ে এই অভিজ্ঞতা প্রমার্জন করা হয়েছে। আর এই প্রমার্জন ও আনুসঙ্গিক খরচ বাবদ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে প্রায় ৩৩ লাখ টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রমার্জনের গল্প দিয়ে শিক্ষকদের থেকে এই অর্থ তুলেছেন বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদোন্নতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে। সর্বশেষ বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির বৈঠকের পর ৩০ ডিসেম্বর পদোন্নতি ঘোষণার কথা ছিলো।
এর আগেই কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে অনেক শিক্ষকের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) হারিয়ে যায়। ফলে সর্বশেষ পদোন্নতি কমিটির যে বৈঠক ছিল তা স্থগিত করা হয়।
কারণ হিসেবে জানা যায়, চলতি মাসেই অন্তত ৩০-৬০ জন শিক্ষক অবসরে যাবেন। যেকারণে নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতির ঘোষণা না হওয়ায় পেছনের সিরিয়ালের একাধিক শিক্ষক পদোন্নতির সুযোগ পাবেন।
অভিযোগের বিষয়ে জালাল উদ্দিন সরকার বলেন, টাকা-পয়সা লেনদেন তো নয়, যদি কিছু লাগে এর জন্য সমিতির একটা ফান্ড থাকে। এর আগেও সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতির সময় খাওয়া-দাওয়া এসিআর ঠিক করা এসব কাজে ফান্ড থেকেই টাকা খরচ করা হয়েছে।
শিক্ষকদের থেকে চাঁদা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
কিন্তু শিক্ষকদের ফান্ড থেকে এসিআর ঠিক করা ও চা-নাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সালমি বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে চাঁদা তোলার কোনো সুযোগ নেই। চা-নাস্তা ও ফাইলের যে গল্প বলা হচ্ছে এসব কারণ দেখিয়ে আমাদের সমিতি চাঁদা তোলে না। কোনো ব্যক্তি যদি এমন কিছু করে থাকে এর দায়ভার সংগঠন নেবে না।
সরেজমিনে শিক্ষা ভবনে ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকর্তারা ব্যস্ত পদোন্নতিযোগ্য শিক্ষকদের যাচাই-বাছাইয়ে। অফিস কক্ষ আটকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন)। ভবনের শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, ১৮টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদে যোগ্যপ্রার্থী রয়েছে ৫২ জন। এদের মধ্য থেকেই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হবে।
আর প্রধান শিক্ষকদের পদ ২৬২টি হলেও জেষ্ঠ্যতার হিসেবে ৩৩৪ সিরিয়াল পর্যন্ত যারা আছেন তাদেরকেই প্রতিষ্ঠান প্রধান করা হবে। কারণ এরই মধ্যে ৬৯ জন অবসর ও তিন জন মারা গেছেন। ফলে সিরিয়ালে যারা পিছিয়ে আছেন তাদেরও পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে।
টাকা লেনদেন ও তদবিরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (বিদ্যালয়) বেলাল হোসাইন বলেন, এমন কোনো ঘটনা হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখনো এমন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।
কিসের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি আরোও বলেন, সম্প্রতি যে সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতি হয়েছে এই গ্রেডেশন তালিকার ভিত্তিতেই পদোন্নতি দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা (মন্ত্রণালয়) আমাদের কাছে যেসব কাগজপত্র চেয়েছে আমরা তা পাঠিয়ে দিয়েছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সরকারি) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, পদোন্নতি পাওয়ার জন্য একটি টাকাও খরচ করার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি টাকা লেনদেন করে থাকে তা সম্পূর্ণ অন্যায় কাজ। সূত্র : বংলাদেশ জার্নাল
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :