ঢাকা: মাধ্যমিকের দুটি শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের বিতর্কিত বিষয়গুলো বাতিল করে ৩০ টি সংশোধনী দিয়েছে সংশোধনী কমিটি। এসব সুপারিশের আলোকে পাঠ্যবইয়ের চূড়ান্ত ড্যামির কাজ শুরু করেছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। মূল ড্যামিতে বইয়ের ভুলগুলোর সংশোধনী নিয়ে সফট কপিতে রুপান্তর করা হবে। পরে নতুন করে সংশোধনীসহ পুনরায় পরিবর্তিত আকারে পাঠ্যবই ছাপা হবে। তবে চলতি বছরেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুর বইয়ের সংশোধনীসহ তুলে দেয়া সম্ভব হবে কিনা বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হলেও আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সংশোধনীসহ নতুন বই হাতে পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই থেকে মানব বিবর্তন বাতিল, বিভিন্ন অধ্যায়ে বানান ভুল, ছবি নির্বাচন ও উপস্থাপনে ত্রুটি, ইংরেজি বইতে বাংলা অনুবাদ, সর্বনাম ব্যবহারে ভুল, পাঠ্যবই প্রণয়নে প্রস্তুতির ঘাটতি ও তড়িঘড়িকরণ, পৃষ্ঠা সংখ্যা অতিরিক্ত করে বইয়ের ভার বাড়ানোসহ বেশ কিছু ভুল চিহ্নিত করেছে পাঠ্যপুস্তক বিশেষজ্ঞ কমিটি।
এসব সংশোধনে ৩০টির মতো সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ এ কমিটির প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটির দেয়া সুপারিশগুলো নিয়ে গত ২৭ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত টানা সপ্তাহব্যাপী একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেই মূলত পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে যেসব সংশোধনীগুলো এসেছে সেগুলোর আলোকে সফট কপিতে সংশোধন করা হবে। এটাই হলো মূল ড্যামির কাজ। এই ড্যামির কাজ শেষ হলে সংশোধনীসহ পাঠ্যবই পুনরায় ছাপানো হবে। তবে এখন দেখার বিষয় হলো, চলতি বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীরা ভুল হওয়া বইগুলো তারা সংশোধনী আকারে হাতে পাবে কিনা ? তবে এনসিটিবি এটা নিশ্চিত করেছে যে, আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সবাই সংশোধনী আকারের সব হাতে পাবে।
অন্যদিকে কমিটির দেয়া প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির নতুন পাঠ্যপুস্তক তড়িঘড়ি করে প্রণয়ন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। লেখক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও প্রেসের সমন্বয়হীতার কারণে নানা ধরনের ভুল চিহ্নিত হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ তিন স্তরে সঠিকভাবে সমন্বয় করা হয় সে জন্য সুপারিশ করেছে মূল্যায়ন কমিটি। ষষ্ঠ শ্রেণির বই থেকে মানব বিবর্তনবাদ অধ্যায় বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন অধ্যায়ে বানান ভুল, ছবি নির্বাচন করা ও উপস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। কয়েকটি অধ্যায়ে অসঙ্গতি বাদ দিতে বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহেদুজ্জামান চাঁন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) লুৎফর রহমান, কারিগরি মাদরাসা বিভাগের একজন উপসচিব, ইসলামি ফাউন্ডেশনের একজন পরিচালক ও মতিঝিল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল নাহার শাহীন।
কমিটির সদস্যরা জানান, আমরা চেষ্টা করেছি অতিতের শিক্ষাক্রমের চাইতে কিছুটি পজিটিভ পরিবর্তন আনতে। শিক্ষার্থীরা পড়ার সঙ্গে সেগুলো মূল্যায়ন করা শিখবে। উপস্থাপন করা শিখতে পারবে। তবে কিছু অধ্যায় আগের মত রাখা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীর অ্যাকটিভিটিস রাখা হয়নি সেগুলো নিহ্নিত করে সংশোধন করতে সুপারিশ করা হয়েছে। ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে ভালো উপস্থাপন করা হলেও অনুশীলন বইটিকে মূল রেখে অন্যটিকে রেফারেন্স হিসেবে রাখতে বলা হয়েছে। এর বাইরেও বির্বতনবাদ অধ্যায় বাদ দেওয়াসহ নানা ধরনের ভুল চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধন করতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। এসব বই সংশোধনে মোট ৩০টি সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, কমিটির মাধ্যমে আমরা যেসব সুপারিশ পেয়েছি সেগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা এক সপ্তাহের একটি কর্মশালাও করেছি। আমরা সুপারিশগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে নতুনভাবে সেগুলো পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত করতে কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ভুলগুলো নিয়ে চূড়ান্ত ড্যামির কাজ শুরু করেছি। এই কাজটি একটু জটিল এবং সময় সাপেক্ষও বটে। ভুলগুলো এখন পাঠ্যবইয়ের সফট কপিতে সংশোধন করে সেটিকে ড্যামি আকারে নিয়ে পরে পুনরায় মূদ্রণের কাজ করা হবে। এটা করতে সময় লাগবে। তাই চলতি বছরে আমরা সীমিত পরিসরে চেষ্টা করবো শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে। অন্যথায় আগামী শিক্ষাবর্ষের সব শিক্ষার্থীরা সংশোধনীসহ সব বই হাতে পাবে বলে আমরা আশা করছি।
সোনালীনিউজ/এসআই/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :