ঢাকা : সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন আবার শুরু হলে এক পর্যায়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে আসতে থাকে কর্মসূচি; যেটির নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতাদের আধিক্যের তথ্য সামনে এসেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারকে তুলে ধরা হলেও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছাত্রশক্তির নেতাদের নিতে দেখা যায়।
সমন্বয়কদের কমিটির তালিকায় দেখা যায়, ২৩ জন সমন্বয়কের মধ্যে ৯ জনই গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা।
প্রায় ১০ মাস আগে গঠিত ’ছাত্রশক্তির’ নেত্বত্বে রয়েছেন ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ’সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ অন্যতম নেতা আখতার হোসেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আখতার হোসেনেরে নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে নতুন এ ছাত্র সংগঠন।
ডাকসু ভবনের সামনে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্বৃত্বে থাকা সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তার পাশে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।
ডাকসু ভবনের সামনে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্বৃত্বে থাকা সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তার পাশে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।
এবার হাই কোর্টের রায়ের পর নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরুর পর তা কোটা সংস্কার আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গত ৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা ৬৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন, সেখানে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহসমন্বয়ক রয়েছেন।
এদের মধ্যে ছাত্রশক্তির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা হলেন- ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব নাহিদ ইসলাম, যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুল্লাহ আল গালিব, নুসরাত তাবাসসুম, রাফিয়া রেহনুমা হৃদি ও সদস্য সোহাগ মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, সদস্যসচিব মো. আবু বাকের মজুমদার ও যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল হান্নান মাসুদ।
এছাড়া কমিটির সহসমন্বয়ক রিফাত রশীদ, হাসিব আল ইসলাম, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, নিশিতা জামান নিহা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন ছাত্রলীগ থেকে মনোনীত অমর একুশে হল ছাত্র সংসদের সদস্য সারজিস আলম। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকার কথা আলোচনায় এসেছে।
ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সদস্যসচিব উমামা ফাতেমাও সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন।
কোটা নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলামসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক বর্তমানে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে গোয়েন্দারা তাদের হেফাজতে রেখেছেন বলে সরকারের তরফে বলা হয।
কমিটিতে কেন ছাত্রশক্তির নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হল- ডিবি হেফাজতে যাওয়ার আগে এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, হাই কোটের্র রায়ের পর ৫ জুন আমাদের আন্দোলন শুরু হয়। শুরু থেকে যারা সংগঠক হিসেবে কাজ করেছে, সময় দিয়েছে তারাই কমিটিতে অগ্রাধিকার পেয়েছে। ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কয়জনই বা কমিটিতে আছে? এখানে ছাত্রলীগের কয়েকজন রয়েছে, ছাত্র ফেডারেশনের রয়েছে।
আমরা বলেছি, এটা কোনো দলীয় বা সাংগঠনিক ঐক্য নয়, এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপেন প্ল্যাটফর্ম। এখানে কারো দলীয় পরিচয় মুখ্য নয়। এটা শুধু কোটা বৈষম্য নিরসনের জন্যই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দাবি পূরণের সাথে সাথে এ প্ল্যাটফর্মের কার্যকারিতা হারাবে।
২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনেরে নেতৃত্বে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশের দিন বলা হয়েছিল, এটি হবে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিমুক্ত স্বতন্ত্র একটি ছাত্র সংগঠন।
‘ছাত্রশক্তির’ আত্মপ্রকাশের দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন আখতার হোসেনসহ কয়েকজন নেতা।
ওই সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছিল, আখতার ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে আখতার তখন তা অস্বীকার করেন।
আখতার পরিচিত পান সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের আন্দোলন চলাকালে। তখন আন্দোলন চলেছিল সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে।
পরে ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে এ ব্যানারের প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল হক নুর। তার সঙ্গী আখতার হোসেন হয়েছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ করা হয়।
চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আখতার হোসেনের সঙ্গে ছিলেন চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, মো. আবু বাকের মজুমদার, নুসরাত তাবাসসুম।
চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আখতার হোসেনের সঙ্গে ছিলেন চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, মো. আবু বাকের মজুমদার, নুসরাত তাবাসসুম।
পরে নুরুল হক নূর গণঅধিকার পরিষদ নামে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। ছাত্র অধিকারের কেন্দ্রীয় নেতারা নুরের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদে গিয়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করছে অভিযোগ এনে ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা।
পরে ৪ অক্টোবর তারা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেন। প্রাথমিকভাবে গঠিত ২১ সদস্যের কমিটিতে আখতার হোসেন নিজেই আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. নাহিদ ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়। এক বছরের জন্য এই কমিটি আগামী ৪ অক্টোবর মেয়াদ শেষ হবে।
এছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক এবং মো. আবু বাকের মজুমদারকে সদস্য সচিব করে ছাত্রশক্তির ৩৩ সদস্যের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সূত্র : বিডিনিউজ
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :