ফেনী : ফেনীতে নতুন বছরের সাত দিন অতিবাহিত হলেও নতুন বই পায়নি ছয় উপজেলার প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তবে বই পেয়েছে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে মাদ্রাসা ও মাধ্যমিকের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত নতুন বই হাতে পায়নি। মাধ্যমিকে জেলার ৩৭ লাখ বইয়ের চাহিদা থাকলেও এখনো বই আসেনি।
জেলায় প্রাথমিকের ৫০% বই এলেও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বই এসেছে মাত্র ১.২৬ শতাংশ। আর তাই পিডিএফ কপি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। তা থেকে প্রিন্ট করে শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর নির্দেশনা রয়েছে বলে জানায় কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে জেলায় মোট বরাদ্দকৃত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৬টি। তারমধ্যে এখন পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শতভাগ বই এসেছে। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির চাহিদার তিন লাখ ১৬১টি বইয়ের একটিও এখনো আসেনি।
জেলা শিক্ষা অফিসার কার্যালয় সূত্র জানায়, ফেনীতে মাধ্যমিক ও মাদরাসায় মোট শিক্ষার্থী তিন লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৮ জন। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বইয়ের মোট চাহিদা ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৬টি। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলাই বই এসেছে ৭৯ হাজার ৩০৪টি। বিগত বছরের শেষ দিন পর্যন্ত ফেনী সদর উপজেলায় মাধ্যমিকে নবম শ্রেণির তিনটি বিষয় করে ৩৪ হাজার ৫০০টি বই এবং মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ১২ হাজার ৯০০টি বই এসেছে। সোনাগাজী উপজেলায় মাধ্যমিকে নবম, দশম শ্রেণির দুইটি বিষয়ে (বাংলা, গণিত) ২৫ হাজার ৮০০টি বই ও মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির তিনটি বিষয়ে (বাংলা, গণিত, ইংরেজি) আট হাজার ৪০০টি বই এসেছে।
বই না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ফেনী সদর উপজেলার গোয়াডুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শারমিন আক্তারের। এ শিক্ষার্থী জানায়, বছরের প্রথম দিন বিদ্যালয়ে এসেছি। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পেলেও আমরা বই পায়নি। আরও পরে বই দেবে বলে শিক্ষক জানিয়েছেন।
দাগনভূঞা উপজেলার লালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অনিন্দ্র দে বলেন, প্রতিবার বই উৎসব হত। এবার তা—ও হয়নি। নতুন বইও পায়নি। বই কবে দেবে তা—ও ঠিক জানাতে পারেননি শিক্ষকরা।
ফেনী শিশু নিকেতন কালেক্টর স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের অভিভাবক জাফর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, প্রথম দিন নতুন বই পাবে না জেনে তার ছেলে স্কুলে যায়নি। সরকার আরও আন্তরিক হলে শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতেই বই পেত।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, নতুন বছরের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য নতুন বই আসেনি। কয়েকটি বই আসলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। কবে নাগাদ চাহিদার সব বই পাবো তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে পিডিএফ কপি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। তা থেকে প্রিন্ট করে শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর নির্দেশনা রয়েছে।
নতুন শিক্ষাবর্ষে দেরিতে বই পাওয়া নিয়ে অভিভাবকরা শঙ্কা প্রকাশ করলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি মাসেই শিক্ষার্থীদের হাতে উঠবে নতুন বই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের নতুন বইয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে। তবে সরকার পতনের পর আগের কারিকুলামে ফিরে আসায়, বই সরবরাহে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসমুখী হতে চাইবে না, যা আমাদের জন্য কিছুটা অসুবিধার কারণ হতে পারে। তবে, আশা করি সরকার সকল প্রতিষ্ঠানে অতিদ্রুত বই সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শতভাগ বই বিতরণ শেষ হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই হাতে পেলেই বিতরণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফী উল্লাহ বলেন, নতুন বছরে আগের মত আনুষ্ঠানিকভাবে বই উৎসব হয়নি। মুদ্রণ জটিলতায় ও কিছু পরিবর্তনের কারণে ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলায় কিছু বই এসেছে। জেলায় চাহিদার সব বই আসতে আরও প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো লাগতে পারে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :