ঢাকা : সারাদেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই দ্রুত তুলে দিতে ছাত্র সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। একই দাবিতে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে দেওয়া হয়েছে স্মারকলিপি।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে সংগঠনটি।
পরে মিছিল নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কার্যালয় বরাবর যাওয়ার পথে শিক্ষা চত্বরে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে চারজনের প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরে তার আশু কাজ ছিল- শিক্ষার নীতিগত দিক নিয়ে কাজ করা; শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য বিলোপে কার্যকর নীতি নির্ধারণ করা; বিগত স্বৈরাচারী শাসনামলে প্রশ্নফাঁসের সাথে যারা যুক্ত ছিল- শিক্ষাক্রম নিয়ে যারা অপব্যয় করেছে ও দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিল, সেই কর্তাব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা এবং শিক্ষার সংকট নিরসনে এদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সকল অংশীজনের মতামত দিয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করে শিক্ষা বৈষম্য বিলোপ করা।
সরকার সেদিকে না হেঁটে- মবের মুখে পড়ে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন, তার কোনোটিই যৌক্তিক বলে বিবেচিত হয়নি।
চলতি শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় মাসের শেষ সপ্তাহ বাদেও সব বই হাতে পায়নি স্কুল শিক্ষার্থীরা। অষ্টম ও নবম শ্রেণির এবং এবতেদায়ী পর্যায়ের কিছু বই এখনো ছাপার অপেক্ষায়। প্রাক-প্রাথমিক আর প্রাথমিকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কিছু বইয়ের অপেক্ষা কাটছে না শিক্ষার্থীদের।
এনসিটিবির হিসাব অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০ কোটি কপির বেশি বই বিতরণ বাকি আছে। ছাপা বাকি আছে সাড়ে ৫ কোটি কপি। মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট বইয়ের দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেছে। আর প্রাথমিক পর্যায়ের ১৪ লাখ কপি বই ছাপা বাকি আছে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ক্লাস হওয়ার পর মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্কুলগুলোতে শুরু হয়েছে রোজার ছুটি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে গেছে ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্লাসের পর।
মুক্তা বাড়ৈ বলেন, কেন এতো বিলম্ব হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছাতে তার কার্যকর কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। অপরদিকে বাজারে বিনামূল্যে বিতরণের বই চড়া দামে যারা বিক্রি করছেন, তারাও থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই পরিস্থিতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তথা দেশের সার্বিক সুস্থতার জন্যই হুমকিস্বরূপ।
ছাত্র ফ্রন্টের ৭ দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. কাল বিলম্ব নয়, দ্রুততম সময়ে সারাদেশে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দিতে হবে; শিক্ষা ব্যবস্থা সচল করতে হবে।
২. বিনামূল্যে বিতরণের পাঠ্যপুস্তক যারা বাজারে বিক্রি করছে, অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৩. সাম্প্রদায়িক-কুপমণ্ডুক শিক্ষা নয়; সেক্যুলার ও বিজ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ বেতন কাঠামো ও সামাজিক মার্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সারাদেশে নতুন নতুন সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজ নির্মাণ করতে হবে।
৬. বিগত সরকারের আমলে শিক্ষা নিয়ে দুর্নীতি, প্রশ্নফাঁস, কারিকুলাম নিয়ে অপব্যয় ও শিক্ষা ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৭. শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফ্রন্টের সহ-সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুহাইল আহমেদ শুভ, দপ্তর সম্পাদক অনিক কুমার দাস। সমাবেশ পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :