ঢাকা : অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনেছেন তার স্ত্রী সায়রা বানু।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সায়রার আইনজীবী বন্দনা শাহ তাদের বিচ্ছেদ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেন।
সেই বিবৃতিতে বলা হয়, বিয়ের বহু বছর পর স্বামী এ আর রহমানের সঙ্গে বিচ্ছেদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সায়রা বানু। তাদের সম্পর্কের মধ্যে মানসিক চাপের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। একে অপরের প্রতি তাদের গভীর ভালবাসা সত্ত্বেও, এই দম্পতি খেয়াল করেছেন তাদের মধ্যে অনেক ব্যবধান, দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যা এই মুহুর্তে কোনও পক্ষই পূরণ করতে সক্ষম নয় বলে মনে করছেন তারা।
১৯৯৫ সালে সায়রা বানুর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন এ আর রহমান। তাদের তিন সন্তান খতিজা, রহিমা ও আমিন। বিচ্ছেদের আগে এক সাক্ষাৎকারে এ আর রহমান জানিয়েছিলেন, স্ত্রী সায়রার সঙ্গে তার মধ্যে বেশকিছু মতপার্থক্য রয়েছে। যদিও বিষয়টি তারা সামলে চলেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এ শিল্পী জানিয়েছিলেন, সায়রা বানু তার পছন্দ ছিলেন না। তবে সেসময় তিনিও বিয়ের জন্য মেয়েও খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে সায়রা বানুকে বিয়ে করেছিলেন এ আর রহমান। সেই বিয়ের ২৯ বছর পর পথচলা অবশেষে শেষ হলো।
এদিকে নাসরিন মুন্নি কবীরের বই ‘এ আর রহমান: দ্য স্পিরিট অফ মিউজিক’-এ অস্কারবিজয়ী সঙ্গীত শিল্পী তার স্ত্রী সায়রার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে মুখ খুলেছেন। সেখানে এ আর রহমান বলেন, তার তখন অল্প বয়স, তবে তিনি অন্য কোনো নারীর দিকে কখনওই তাকাতেন না।
এ আর রহমানের কথায়, ১৯৯৪ সালে যখন তার বয়স প্রায় সাতাশ, তখন তিনি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কেননা কিছু কারণে তখন নিজেকে বয়স্ক মনে করতেন তিনি।
অস্কারজয়ী এ শিল্পী বলেন, ‘আর আমি সবসময় খুবই লাজুক ছিলাম, মেয়েদের সঙ্গে বেশি কথা বলিনি। অনেক তরুণী গায়কের সঙ্গেই আমার আলাপ হয়েছে। স্টুডিওতে যখন আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম তখনও আমি কোনো মেয়ের দিকে তাকাতাম না এই ভেবে যে আমার সময় নেই। আমি ঘড়ি ধরে কাজ করতাম।’
সেখানেই সায়রার সঙ্গে দেখা হওয়ার বিষয়ে এ রহমান বলেন, ‘সায়রা খুবই সুন্দর ও ভীষণ ভদ্র ছিলেন। ১৯৯৫ সালের ৬ জানুয়ারি আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল, সেটা ছিল আমার ২৮তম জন্মদিন।’
খুবই স্বল্প সময়ের জন্য সেই সাক্ষাৎ হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে আমরা বেশিরভাগ সময়ই ফোনে কথা বলতাম। সায়রা কচ্চি এবং ইংরেজিতে কথা বলত। তবে আমি ওকে বলি, যদি সে আমাকে বিয়ে করতেই চায় তাহলে যেন ও ইংরেজিতেই কথা বলে। সায়রা অবশ্য তখন খুব শান্ত ছিল।’
এরপর থেকে সায়রা বানু অবশ্য গুজরাটের কচ্চি ভাষা ছেড়ে এ আর রহমানের সঙ্গে ইংরেজিতেই কথা বলতেন।
পরে সিমি গারেওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্ত্রী সায়রা বানুর চরিত্রের আরও একটা দিক তুলে ধরেছিলেন এ আর রহমান। শিল্পী বলেন, ‘সায়রার চরিত্রের দুটি দিক আছে, যখন সে শান্ত খুবই শান্ত, আবার যখন সে রেগে যায় প্রচণ্ড রেগে যায়। হয়ত ও শপিং-এ বের হতে চাইছে, তবে পারছে না, তখন ও খুব রেগে যেত।’
এরপর সিমি সঙ্গীতশিল্পীকে প্রশ্ন করেছিলেন সায়রা কি তবে মানিয়ে নেয় নি? উত্তরে রহমান বলেছিলেন, ‘আমি সম্পর্কের শুরুতেই তাকে বলে দিয়েছিলাম, ও বিয়ের পর কেমন জীবন কাটাতে পারবে। ও শর্তে রাজি ছিল।’
এ শিল্পী গারেওয়ালকে জানিয়েছিলেন, তাদের যৌথ পরিবার ছিল, তাই কোনো নতুন সদস্যের সেখানে এসে শুরুতে মানিয়ে নিতে একটু অসুবিধা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে সন্তান আসার পর তাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল বলেই জানান এ আর রহমান।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :