ঢাকা : ১১ নভেম্বর, ২০০২ সাল। সকাল ৮টা। বুড়িগঙ্গা নদীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নিচে পিলারের উঁচু জায়গায় অজ্ঞাতনামা এক যুবতীর লাশ। কয়েকজন মানুষের ভিড়। শ্যামপুর থানার এসআই গোলাম মাওলাসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও হাজির হলেন। ঘটনাস্থল কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায় হওয়ায় বিষয়টি বেতার মারফত কেরানীগঞ্জ থানাকে জানানো হয়।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ থানার এএসআই মো. শফিউদ্দিন ঘটনাস্থলে এসে লাশটি নদীর তীরে তোলেন। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে লাশ নিয়ে যান। ময়নাতদন্ত শেষে দাবিদার না থাকায় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কর্তৃক জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
লাশে জখমের চিহ্ন : সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির সময় পুলিশ লাশের শরীরের বিভিন্ন অংশে থেঁতলানো জখম দেখতে পায়। মাথার খুলিতে ভোঁতা অস্ত্রের আঘাত দেখতে পায়। আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, এটি কোনো হত্যাকাণ্ড।
এএসআই শফিউদ্দিন ওইদিন দুপুরে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। মামলায় সন্দেহ করা হয়, আগের দিন রাতের আঁধারে অজ্ঞাতনামা তরুণীকে হত্যা করে লাশ গোপন করার জন্য বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
লাশটি মডেল তারকা তিন্নির তা কেউ জানত না। মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তরের সময় তুলে রাখা ছবি ২০০২ সালের ১৬ নভেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠে ছাপা হয়। পত্রিকায় ওই ছবি দেখে আত্মীয়-স্বজন লাশটি তিন্নির ছিল বলে শনাক্ত করেন। তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পত্রিকায় ছবি প্রকাশ না হলে হয়তো কেউ কোনোদিন জানত না লাশটি কার। কবর থেকে লাশ আবার তোলা হয়। আত্মীয়স্বজনও তিন্নির লাশ শনাক্ত করেন।
১৯৭৭ সালের ২২শে অক্টোবর ঢাকায় জম্মগ্রহণ করেন তিন্নি। তিন্নি নামে পরিচিত হলেও তার পুরো নাম সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি।
২০০০ সালের কেনাকাটা করতে বনানীতে গেলে তার সঙ্গে দেখা হয় জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নির্মাতা আফজাল হোসেনের। দেখার পর আফজাল হোসেন তাকে মডেল হবার জন্য প্রস্তাব দেন। ইডেন কলেজে ইংরেজি বিভাগে পড়ে এমন সুযোগ পেয়ে মডেল হতে রাজি হন। কয়েক মাস পরে তিন্নি মডেলিং করেন হেনোলাক্স স্পট ক্রিমের একটি বিজ্ঞাপনে। এক বিজ্ঞাপন দিয়েই তিন্নি পৌঁছে যান হাজারো দর্শকদের হৃদয়ে।
একের পর এক অভিনয় করেন স্টারশিপ কনডেন্সড মিল্ক, লিজান মেহেদী, গন্ধরাজ তেল, কোয়ালিটি আইস্ক্রিম ও রিচি জুসের বিজ্ঞাপনে। মৌ-এর পর তিন্নি হয়ে উঠেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া মডেল।
মডেল হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর নাট্য নির্মাতারা তাকে নাটকে অভিনয় করার প্রস্তাব দিতে থাকেন। তিন্নি অনেক নাটকের অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও জনপ্রিয় পরিচালক মোহন খানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারেননি। ২০০২ সালে মোহন খান পরিচালিত মেঘবতী নাটকে অভিনয় করেন। এরপর তিনি ধারাবাহিক নাটক তখন ছিলাম আমি ও সমুদ্র সীমানায় নাটকে অভিনয় করেন। তার জনপ্রিয়তা দেখে চলচ্চিত্র পরিচালকেরা তাকে ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেন। বাদল খন্দকার পরিচালনায় প্রিয় সাথী নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বিষয়ে পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়। কিন্তু চলচ্চিত্রে আর অভিনয় করা হয়ে উঠেনি তিন্নির। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা তিন্নি তার আগেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব ওরফে তিন্নি (২৪) হত্যা মামলায় বহুল আলোচিত বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভিকে খালাসের রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :