ঢাকা: গত কয়েক দিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক এলাকায় হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে চলে গেছে। দেখা মিলছে না সূর্যের। ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবন। এছাড়া অনুভূতি বেশি হওয়ায় এবার শীতের কাঁপুনিও বেশি। এই অবস্থায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হবে। এরপর তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এতে শীতের এই প্রকোপের মধ্যে বৃষ্টি জনজীবনে নতুন করে দুর্ভোগ নিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, ১৭ জানুয়ারি দেশের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। এরপর সারাদেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে হালকা থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হবে।
তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, বৃষ্টির আগে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। আবার কোনো কোনো জায়গায় কুয়াশার পরিমাণটা কমে আসবে। মূলত বৃষ্টির কারণে বাতাসে শুষ্কভাব থাকবে। তবে শুষ্কভাব কেটে গেলে আবারও শীত পড়তে শুরু করবে। বিশেষ করে আগামী ২০ জানুয়ারির পর থেকে তাপমাত্রা আবারও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশও। তিনি জানান, মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকে ১৭ জানুয়ারি ভোরের মধ্যে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী মেঘালয় পর্বতের ওপরে অল্প বজ্রপাতসহ হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ১৭ জানুয়ারি দুপুর ৩টার পর থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোনো কোনো জেলায় সামান্য পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এই আবহাওয়াবিদ জানান, বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাত ১২টার পর থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যাঞ্চলে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হবে। এরপর বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে ও সকাল ৮টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে বৃষ্টিপাত হবে।
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে চলা হাড় কাঁপুনি শীতের মধ্যে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) কোথাও কোথাও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এদিন বরিশালে দেশের সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার (১৪ জানুয়ারি) এই তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুরে রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামগ্রিকভাবে সারাদেশের তাপমাত্রা রোববারের তুলনায় বেড়েছে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারাদেশে সোমবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও রাত থেকে আবারও বাড়তে পারে তাপমাত্রা। এরপর বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর, বরিশাল ও ভোলা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। তবে আগামী কয়েক দিন দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। এ সময় মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
আবহাওয়া অফিস আরও বলছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা খুলনা বিভাগে হালকা বৃষ্টি অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিন সারাদেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :