সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া অফিস, এখন অপেক্ষা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১, ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া অফিস, এখন অপেক্ষা

ঢাকা : উষ্ণ মাস এপ্রিল শেষ হতেই আবহাওয়া নিয়ে মিলেছে স্বস্তির খবর। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, অবশেষে দেখা মিলবে বৃষ্টির, দেশজুড়ে একমাসের বেশি সময় ধরে চলা তীব্র গরম কমে আসবে তাতে। 

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বুধবার (১ মে) অধিদপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে অনেক জায়গার তাপমাত্রা কমে আসার সম্ভাবনা আছে৷  ময়মনসিংহ বিভাগ, সিলেট বিভাগ, ঢাকা বিভাগ এবং কুমিল্লা অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি শুরু হবে বৃহস্পতিবার৷  তবে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমের জেলাগুলোর তাপমাত্রা শুক্রবার পর্যন্ত আগের মতই থাকবে ।

যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী এসব এলাকায় আরও দুয়েকদিন পর বৃষ্টি হবে৷ ৩/৪ তারিখের পর সারাদেশেই বৃষ্টি হবে৷ তবে জলীয়বাষ্পের কারণে অস্বস্তি ভাবটা থেকে যাবে। তারপরও সহনশীলতায় চলে আসবে৷

৫/৬ দিনের বৃষ্টিপাতের পর দেশের তাপমাত্রা আবার বাড়তির দিকে যাবে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।

বুধবার দেশের তাপমাত্রা কেমন থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই এলাকাগুলোতে ( যশোর, চুয়াডাঙ্গা) আজও কালকের মতই তাপমাত্রা আসতে পারে।

যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার উপর দিয়ে এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নওগাঁ,  সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও খুলনা বিভাগের বাকি অংশের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। আর মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে দেশের অন্যান্য এলাকার উপর দিয়ে।

পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। 

বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

টানা দাবদাহের মধ্যে মঙ্গলবার দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে। চুয়াডাঙ্গায় থার্মোমিটারের পারদ ওঠে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে।

আর ঢাকায় তাপমাত্রা ওঠে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে।

এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এতদিন দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। মঙ্গলবার তা ভেঙে যায়।

আর স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

চলতি মৌসুমে ৩১ মার্চ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ৩১ দিন ধরে এই পরিস্থতি বিরাজ করছে দেশে।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, এর আগে ২০১৪ সালে ৫-৩০ এপ্রিল টানা ২৬ দিন টানা তাপপ্রবাহ ছিল। ২০১৬ সালে ৬-৩০ এপ্রিল টানা ২৫ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। ২০২৩ সালে ১৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

এবার তাপপ্রবাহের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। 

এর কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক  বলেন, সবসময়ই এসব এলাকায় তাপমাত্রা বেশি আসে, বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। কারণ এই এলাকাগুলো ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গের পাশে। ওইসব এলাকায় ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছে গতকাল, সেটার আঁচ এসেই পড়ে এখানে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শেষ তিন দশকে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, এসময় জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাওয়ার ফলে দেশে গরম বেশি পড়ছে।

বৃষ্টি হতে হলে জলীয়বাষ্পটা থাকতে হবে, সেটা বাংলাদেশের উপর ছিল না। যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প আসছে, সেটা উপরে চলে গেছে, সেটা হিমালয়ের আরও উত্তরে বিশেষ করে চায়না এসব দিকে পূঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে এতদিন দেশে বৃষ্টি হয়নি।

উষ্ণতম মাস এপ্রিল শেষে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ‘আকস্মিক বন্যার’ আভাস এসেছে।

মঙ্গলবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ও উজানের মেঘনা অববাহিকায় ২৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। তাতে দেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে। 

এসময় সিলেট অঞ্চলের সুরমা নদীর কানাইঘাট, লুভাছড়া নদীর লুভাছড়া, সারিগোয়াইন নদীর সারিঘাট ও গোয়াইনঘাট পয়েন্টে অল্প সময়ের জন্য পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এমটিআই

Link copied!