সিরাজগঞ্জ: ‘তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে/সবগাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতার মতো তালগাছ আকাশে উঁকি মারে বলেই বজ্রপাতের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। বজ্রনিরোধক হিসেবে তাই তালগাছের পরিচিত রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে বজ্রপাতের হার আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক জীবন হানির ঘটনা ঘটছে।
আর বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে তালগাছের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ‘ভিলেজ ভিশন’ নামের একটি সংগঠন। ২০১৯ সাল থেকে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মো. শরীফ খন্দকার চলনবিল অঞ্চলে রোপণ করে চলেছেন তালবীজ (আঁটি)। গত ৫ বছরে তিনি রোপণ করেছেন ত্রিশ হাজার তালবীজ।
জানা গেছে, চলনবিল অধূষ্যিত তাড়াশ-সলঙ্গা, তাড়াশ-বারুহাঁস, তাড়াশ-নিমগাছি, তাড়াশ-মাগুড়াবিনোদ, তাড়াশ-রানীরহাট, গোন্তাবাজার-কাটাগাড়ি, সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট, চায়না বাঁধসহ নানা স্থানে ২০১৯ সালে এক হাজার, ২০২০ সালে পাঁচ হাজার, ২০২১ সালে ১৫ হাজার, ২০২২ সালে এক হাজার ৫০০, ২০২৩ সালে তিন হাজার ৫০০, ২০২৪ সালে অক্টোম্বর পর্যন্ত চার হাজার ৫০০ সহ পাঁচ বছরে প্রায় ৩০ হাজার তালবীজ রোপন করা হয়েছে। আরও ৭০ হাজার তালবীজ রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে সংগঠনটি তা ব্যাস্তবায়নে নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অবশ্য, সেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘ভিলেজ ভিশন’ নামের এ সংগঠনটির তালবীজ রোপন ছাড়াও নানান মানবিক, সামাজিক এসব ব্যাতিক্রমি কাজ করে এলাকার মানুষের প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
সংগঠনের সেচ্ছাসেবক মাসুম বিল্লাহ, ইতি মিলনসহ অনেকে বলেন, ‘ভিলেজ ভিশন’এর মাধ্যমে নানান মানবিক কাজে অংশ গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত ভাবি। আর তালবীজ রোপন বা বৃক্ষ লাগানোর কাজে সবুজ দেশ গড়তে দেশের সকল তরণদের এগিয়ে আসা উচিত।
মানবতার কাজে সবার পাশে থাকা তাড়াস্থ্য অলাভজনক ও সেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘ভিলেজ ভিশন’ এর তালবীজ রোপনসহ মানবিক নানা কাজের প্রসংসা করেন তাড়াশের প্রবীণ শিক্ষক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সংগঠনটি সচ্ছতার মাধ্যমে ৫০ জন উদ্দ্যোমী সেচ্ছাসেবক তরুণ-তরুণী নিয়ে এ সংগঠনটি মানবিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তা প্রসংশার দাবী রাখে। বিশেষ করে পথ শিশুদের শিক্ষা উপকরণ, খাবার বিতরণ, অস্বচ্ছল পথ শিশুদের গণ মুসলমানি সর্বপরি সবুজ দেশ গড়তে বৃক্ষ রোপনের মত মহতি ব্যাতিক্রমি কাজকে স্বাগত জানাই।
সংগঠনটির উপদেষ্টা সমাজসেবক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সবুজ দেশ গড়তে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বিভিন্ন সড়ক, টিলা বা উচু ভিটায় এক লাখ খেঁজুর বীজও রোপন কার্যক্রম শেষ করেছেন। এছাড়াও সংগঠনটির পক্ষ থেকে পঞ্চগড়, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকার ডেমরা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন আরও পাঁচ হাজার তালবীজ বিনামূল্যে ওই সকল প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শরীফ খন্দকার বলেন, দেশের বিত্তবান ও প্রবাসীদের দান অনুদানে বর্তমানে প্রায় ১৯ বছর হলো ৫০ জন উদ্দ্যোমী সেচ্ছাসেবক তরুণ-তরুণী নিয়ে এ সংগঠনটি মানবিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কাজের মধ্যে রয়েছে -পথ শিশুদের সহযোগিতা, অস্বচ্ছলনারীদের আয় বর্ধকমূলক প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন বিতরণ, অসুস্থ্য বৃদ্ধদের মাঝে ঔষধ-পথ্য বিতরণ, শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, প্রতিবন্ধীদের মাঝে উপকরণ ও আয় বর্ধকমূলক কার্যক্রম পরিচালনা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে সহযোগিতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও সবুজ দেশ গড়তে ঔষুধি, ছায়াবৃক্ষ, বজ্রপাত নিরোধক তালবীজ রোপনের মত বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করা।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, ভিলেজ ভিশন তার স্বেচ্ছাসেবি টিম নিয়ে মানবিক হরেক রকম কাজের সাথে তালবীজও রোপন করছেন। আর বাংলাদেশেও আবহাওয়া জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে বজ্রপাতের হার আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যাওয়ায় অনান্য বৃক্ষের চারার সাথে তালবীজ রোপনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। যা তারা ভালভাবে শুরু করেছেন। আমি সংগঠনের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি সংগঠনটির মানবিক কোন কাজে সহযোগিতা চাইলে উপজেলা প্রশাসন সাধ্য মত তা করবে।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :