শিশুদের খেলনা বেঁচেই চলে হাসান আলীর জীবিকা

  • একেএম সুমন, রংপুর ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৩, ০৪:৩০ পিএম
শিশুদের খেলনা বেঁচেই চলে হাসান আলীর জীবিকা

রংপুর: বৃষ্টি হোক বা ঝড় সপ্তাহের ৭দিনই শিশুদের খেলনার পসরা সাজিয়ে বিনোদন পার্কের সামনে দেখা যায় পঞ্চাষোর্ধ হাসান আলীকে। সকাল থেকে রাত অবধি বুদবুদ বেলুন উড়িয়ে মজা দেন পার্কে ঘুরতে আসা মানুষদের। এতে কেউ খুশি হয়ে টাকা দিতে চাইলে নেন না তিনি। সহযোগীতা করতে চাইলে কিনতে বলেন তার খেলনা।

বলছি রংপুর নগরীর বিনোদন পার্ক সুরভী উদ্যানের সামনে ১৩বছর ধরে খেলনা বিক্রেতা হাসান আলীর কথা। বিক্রি হওয়া বাচ্চাদের এই খেলনার টাকায় সংসার চলে তাঁর। মঙ্গলবার (১১জুলাই) পার্কটির সামনেই কথা হয় তার সাথে।

হাসান আলী থাকেন নগরীর ২৭নং ওয়ার্ডের হনুমান তলার সরকারী খাস জমিতে গড়ে ওঠা বস্তিতে। সংসার জীবনে তার ৩মেয়ে ২ছেলে। মেয়েদের ইন্টার মিডিয়েট পর্যন্ত পড়িয়ে সম্প্রতি বিয়েও দিয়েছেন। আর ২ ছেলের বড়জন এবার ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্র।

তিনি বলছেন, সকাল ৮টায় এসে খেলনার দোকান খুলি সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যবসা করে যা বেচা-বিক্রি হয়। এটা দিয়েই কোন মতে টিকে আছি। এই এক জায়গায় আছি ১৩বছর ধরে আল্লাহ যতদিন রাখে আছি। কাজ করে খাবো মানুষের কাছে হাত পেতে খাওয়ার চাইতে কষ্ট করে চলবো। আমার কাছে সেটাই আনন্দের।

সারাদিনে কেমন বিক্রি হয় সংসার চলে কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তরে হাসান আলী বলেন, আকাশ ভালো থাকলে ব্যবসা যদি ভালো হলে ১৫শ থেকে ২ হাজার পর্যন্ত বিক্রি হয়। তখন ৮শ/হাজার পর্যন্ত আয় হয় কিন্তু এটা খুব কমে হয় হঠাৎ দুএকদিন। প্রতিদিন কমবেশি সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মত আসে। আগে তো জিনিসপাতির দাম কম ছিলো মাঝে-মধ্যে মাংস খাওয়া হতো এখন আর সে চিন্তাই করা যায় না। চাল কিনলে সেদিন আর তরকারী হয়না। তার মাঝে আবার ছেলেদের লেখা-পড়ার খরচও দেওয়া লাগে। এখন আর আগের মত সব খাওয়া হয় না।

সরকারী সহযোগীতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে করোনার সময় ২৫০০ টাকার জন্য আইডি কার্ড নিয়েছিল কিন্তু আর পরে কোন খবর পাই নি। তারপরে টিসিবির কার্ডেও নাম আসে নাই। আমাকে সহযোগীতা না দিক তাতে কষ্ট নেই। প্রশাসনের কারো বিরুদ্ধে অভিযোগও নেই।

প্রশাসনের কোন অনুদান না পেয়ে অভিযোগের বদলে উল্টো পার্কের সামনে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ায় প্রশংসায় ভাসালেন জেলা প্রশাসককে। বলেন, ভিক্ষা নয় কর্ম করে খাওয়াতেই স্বাচ্ছন্দ্য পাই।

তবে হাসান আলীর জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগে ছেলেদের জন্য এক টুকরো মাথা গোজার ঠাঁই পেতে প্রশাসনসহ সকলের কাছে সহযোগীতা কামনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীতো কত মানুষকে ঘর করি দিচ্চে। আমাকেও যদি একটা ঘর দিত তাহলে জীবনের বাকি দিন কটা নিজের ঘরে কাটিয়ে শান্তিতে মরতে পারতাম। 

সোনালীনিউজ/এম

Link copied!