আশার চরে শুঁটকি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা 

  • মাহমুদ হাসান তাপস, বরগুনা  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৩, ০৪:৫৭ পিএম
আশার চরে শুঁটকি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা 

বরগুনা: ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে অতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বরগুনার শুঁটকি পল্লীতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে এ পেশায় জড়িত ও শ্রমিকরা। 

বরগুনার তালতলী উপজেলার সাগর উপকূলের সোনাকাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে শতাধিক শুঁটকিপল্লী এখন এই দৃশ্য সর্বত্র। এখানে সাগরের নোনা জলের পাশাপাশি মিষ্টি পানির দেশি মাছের শুঁটকিপল্লী বলে পরিচিত তালতলীর আশার চর। শুঁটকি পল্লীতে শ্রমিকের কর্মজজ্ঞের ঘিরে শুঁটকি উৎপাদন ঘিরে তাদের মধ্যে বিরাজমান উৎসবের আমেজ।

এ সকল পল্লীতে এখন সারি সারি শুকানো হচ্ছে নানা জাতের মাছ। তালতলীর পল্লী থেকে খাবার উপযোগী হয়ে শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে দেশ ও দেশের বাহিরে বিদেশে। এখাতে জড়িত ব্যবসায়িদরে দাবি সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতায় রপ্তানি হলে লাভবান হতো শুঁটকি শিল্প। 

কোন প্রকার কীটনাশক ছাড়া শুধু মাত্র লবণ মেখে প্রক্রিয়াজাত করায় এই অঞ্চলের উৎপাদিত শুটঁকির রয়েছে আলাদা স্বাদ এবং চাহিদা। তবে নির্দিষ্ট ভাবে কোন পল্লী না থাকায় বছরের ৬ মাস চলে এ ব্যবসা। ফলে বছরের বাকি ৬ মাস কর্মহীন। তাই মৌসুম নির্ভর এ ব্যবসার স্থায়ীত্বের পাশাপাশি স্থায়ী পল্লী নির্মাণ হলে শুঁটকি হয়ে উঠতে পারে সম্ভাবনাময় আয়ের অন্যতম বড় উৎস। 

তালতলীর আশারচর, সোনাকাটা, ফকিরহাট,  জয়ালভাঙ্গা চরে অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র- এই পাঁচ মাস সরব থাকে শুঁটকি পল্লীর ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকদের পদচারণায়। উৎপাদন ঘিরে প্রায় শতাধিক শুঁটকি পল্লীতে প্রায় ১২ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান রয়েছে । 

এখানের প্রতিটি শুঁটকিপল্লী হতে প্রতি সপ্তাহে ১০০ থেকে ১৫০ মণ মাছ রপ্তানি হচ্ছে। নদী থেকে কাঁচা মাছ শুঁটকি পল্লীতে নিয়ে আসার পর নারী শ্রমিকেরা তা পরিষ্কার করে। এরপর মাছগুলো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে মাঁচায় শুকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। নদী থেকে চিংড়ি, লইট্টাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ একসঙ্গে কিনতে হয় এবং দাম হয় ৫ থেকে ৭শ টাকা। শুকানোর পর দুই-আড়াই কেজি শুঁটকি বিক্রি করে ২ থেকে ৪ শ টাকা লাভ থাকে। এখানের শুঁটকিতে কেনো ধরনের বিষ-কিটনাশক ছাড়াই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয় । এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা থাকায় এখান থেকে শুঁটকি চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয় এখানে। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোপা অন্যতম। এছাড়াও চিংড়ি, ছুড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রয়েছে চাহিদা। বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা, রূপচান্দা এক হাজার, মাইট্যা ৬০০ থেকে এক হাজার, লইট্যা ৮’শ থেকে ৯’শ,চিংড়ি ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ২০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এখানকার শুঁটকিপল্লির মাছের গুঁড়ি সারা দেশে পোলট্রি ফার্ম ও ফিশ ফিডের জন্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

তালতলীর আশার চর শুঁটকিপল্লীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলে ও মালিক পক্ষ মিলে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ কাজ করছেন। সেখানে প্রায় ৩০টি ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। পল্লীতে কেউ মাছ মাচায় রাখছেন, কেউ মাচায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন, কেউবা শুকনো মাছ কুড়িয়ে জমা করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন চরের শুঁটকিপল্লীতে শুঁটকি উৎপাদন শুরু করেছে।

আশার চর শুঁটকি পল্লীর নারী শ্রমিক সাজেদা বেগম বলেন, সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর মাত্র তিনশ টাকা বেতন পাই। এ টাকা দিয়ে তো আর পরিবার চলেনা। এখন পর্যন্ত সরকারি কোন ভাতা কিংবা অনুদান পাইনি। 

আশার চর শুটকি পল্লীর হানিফ বলেন, নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় এই বছর শুঁটকি উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। তা ছাড়া এ বছর কাঁচা মাছের চাহিদা বেশি, দাম কম থাকায় শুঁটকিতে লাভ ভালো হবে বলে আশা করছি। তবে সরকারিভাবে দেশে বিদেশে এই শুঁটকি রপ্তানি হলে খুব লাভবান হওয়া যাবে।

আশার চর শুঁটকি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখানে শুঁটকি শুকানো শুরু করেছি। সাগর পাড়ে শুঁটকি খুব ভালো শুকায়। তাই বাধ্য হয়ে এখানে টং পেতেছি। স্থায়ী জায়গা নির্ধারণ করলে বছরের বারো মাস এ ব্যবসা করতে পারতাম। 

তালতলী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার বলেন, এ উপজেলা শুঁটকি মাছের জন্য বিখ্যাত। এই পেশাকে আরো আধুনিকায়ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

এমএস

Link copied!