সিলেট: শারদীয় দূর্গাপূজার টানা ৪ দিনের ছুটিতে পর্যটকে সরগরম হয়েছে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) থেকে শুরু করে আজ রোববার (১৩ অক্টোবর) পর্যন্ত ছিল সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড়। গেল তিনতিনের প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটেছে এখানে। আর রোববারও তেমনি পর্যটকদের আগমন ঘটে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে। এতে করে দীর্ঘদিনের মন্দাভাব থেকে চাঙা হচ্ছে সিলেটের পর্যটন অর্থনীতির।
বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটন নগরী সিলেটের হোটেল মোটেলে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। অনেকেই সিট না পেয়ে বিপাকে পড়েন। হজরত শাহজালাল (র.) ও হজরত শাহপরান (র.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেটে দিগন্তবিস্তৃত হাওর, পাহাড়, ঝরনা, সবুজ ঢেউ খেলানো চা-বাগান, বনবনানী, দূরে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়, গভীর নীলে ভরা আকাশসহ প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের ডালি মেলে ধরেছে। জলার বন রাতারগুল, বিছনাকান্দি, জাফলং, টাঙ্গুয়া, হাকালুকি হাওরসহ বিভিন্ন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক স্পট সিলেট বিভাগকে দিয়েছে আলাদা স্বকীয়তা।
গত বৃহস্পতি, শুক্র, শনি ও রোববার সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর, জাফলং, রাতারগুল, চা-বাগান, বিছনাকান্দি, লালাখাল, পান্থুমাই, মায়াবী ঝরনাসহ পর্যটন স্পট সমূহে যে দিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটন এলাকার মাঝি, ব্যবসায়ী, ফটোগ্রাফারসহ সংশ্লিষ্টরা। কয়েকমাসের খরা কাটিয়ে পর্যটকেরা ফেরায় হাসি ফুটেছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মুখে। আর পর্যটকরাও স্বাচ্ছন্দ্য ঘুরছেন সিলেটে। পর্যটকদের আগমন ঘিরে সবগুলো স্পটে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিলেটে শীত, বর্ষা, হেমন্ত-সব মৌসুমই উপভোগ্য। কয়েক দিনের ছুটি পেলেই পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। এবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ পূজার ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় পর্যটকদের আগমনও বেড়ে গেছে। সবুজ পাহাড়, নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা, চা-বাগানের সবুজ সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়। টিলার ফাঁকে ফাঁকে আঁকাবাঁকা রাস্তা, জাফলং, ভোলাগঞ্জ, ডাউকী ব্রিজ, তামাবিল স্থলবন্দর, মাধবকুণ্ড, লাউয়াছড়া, বিছনাকান্দিসহ শ্রীমঙ্গলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হন পর্যটকরা। এর মাঝে মাঝে হঠাৎ বৃষ্টির পরশ-সে এক অন্যরকম অনুভূতি। বিছনাকান্দিতে জলের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথরগুলো প্রকৃতির সৌন্দর্যে যোগ করেছে এক অন্যরকম মাত্রা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরে ২ ঈদ ও পূজায় পর্যটনখাতের মানুষগুলো বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু গত ঈদুল ফিতরে কিছুটা ব্যবসা হলেও ঈদুল আযহার সময় সিলেটে দফায় দফায় বন্যা হওয়ায় তা ভেস্তে যায়। এতে করে সিলেটে পর্যটন খাতে স্থবিরতা নেমে আসে। তবে এখন শুক্র ও শনিবার পর্যটকদের আগমন ঘটায় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আবারো তাদের ব্যবসা জমজমাট হওয়ার।
সাদা পাথরের হোটেল আল বেলার মালিক লিটন মিয়া জানান, দীর্ঘদিন পরে সাদা পাথর ফের পর্যটকে মুখরিত হয়েছে। আন্দোলন আর গণঅভ্যুথান শেষে এই চারদিনে বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে এখানে। প্রতিদিন প্রায় ১০/১৫ হাজারের মতো পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এতে করে পর্যটন ব্যবসা মোটামুটি চাঙ্গা হয়েছে। বিকিকিনিও ভালো হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা জানান, এই চারদিনের প্রতিদিন সাদা পাথরে কয়েক হাজার পর্যটকের আগমন ঘটেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এটাই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আনাগোনা। পর্যটকরা আসছেন, ভালোভাবে ঘুরছেন, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অসুবিধার কথা জানান নি। উপজেলা প্রশাসন থেকে সবধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, গোয়াইনঘাটে গত ঈদের পর শুক্রবারই বেশি পর্যটকের আগমন ঘটে। জাফলংয়ে প্রায় হাজার ত্রিশেক আর রাতারগুলে প্রায় ৭/৯ হাজারের মতো পর্যটকের আগমন ঘটেছে প্রতিদিন। এছাড়া উপজেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও বেশ কয়েক হাজার পর্যটকের আগমন ঘটেছে। শনিবার শুধু একজন পর্যটক পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এছাড়া আর কোনো সমস্যা হয়নি কারও। আমরা সজাগ আছি সবসময়।
দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মুজিবুর রহমান মিন্টু জানান, সিলেটে কয়েক দফা বন্যা আর আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এখন পর্যটন ব্যবসা জমে উঠেছে। পূজার ছুটিতে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোর একটাও খালি নেই, শতভাগ পূর্ণ। পর্যটকরা এসে সিলেটের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। সিলেটের সকল পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেই রয়েছে নানা সমস্যা। এগুলোর যদি সমাধান না করা হয়, তাহলে এখানে পর্যটকরা আসতে আগ্রহ হারাবে। পর্যটকদের ধরে রাখতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর নানা সমস্যার সমাধান করতে হবে। আর সিলেটের বেশিরভাগ পর্যটকই শাহজালাল (র.) মাজারে আসেন। কিছুদিন পূর্বে মাজার নিয়ে হওয়া নানা ঘটনায় পর্যটকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন এখানে আসতে। এভাবে যদি এগুলোর প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া না হয়, পর্যটন নগরীর খেতাব হারাবে সিলেট।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বলেন, টানা ছুটিতে প্রতিদিন সিলেটে প্রায় লক্ষাধিকেরও বেশি পর্যটকের ঢল নেমেছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে সিলেটের সকল পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরেছেন। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমরা পাই নি।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :