ঢাকা: বড়দিন মানেই কেক, ক্রিসমাস ট্রি, সান্তা ক্লজের উপহার। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ঘটা করে পালন করা হয় এই দিবস। পাশ্চাত্য দেশ সহ সব শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে ছোট-বড় রেস্তোরাঁ কিংবা ক্যাফে, শপিং মল সবই সেজে উঠেছে বড়দিনের জন্য। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়েছে বড়দিনের উৎসবের আমেজ।
বড়দিন নিয়ে থাকে নানা আয়োজন। আগের রাতে বাচ্চারা বাড়ির বাইরে বা জানালায় মোজা ঝুলিয়ে রেখে ঘুমাতে যায়। অনেকেই মনে করেন এই মোজার ভেতরেই রাতে সান্তা ক্লজ এসে উপহার রেখে যাবে। হরিণে টানা স্লেজ গাড়ি চেপে সান্তা ক্লজ আসবে। পিঠে লাল রঙের বড় থলি। তিনি নাকি বাড়ি গিয়ে ছোটদের উপহার দিয়ে আসবেন। এমন গল্প প্রচলিত আছে।
আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের ঠিক নয় মাস পূর্বে মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। ২৪ তারিখ রাত ১২টা বাজলেই লাল সাদা পোশাকে ঝোলায় ভর্তি উপহার নিয়ে হাজির হোন সান্তা ক্লজ। তবে বাস্তবেই ছিলেন সান্তা ক্লজ। তিনি দেখতে কেমন ছিলেন জানেন কি?
১৭০০ বছর পর সেই রহস্য উন্মোচিত হলো এবার। সেন্ট নিকোলাস অফ মায়রা। এই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের অনুকরণেই তৈরি হয়েছিল আধুনিক যুগের সান্তা ক্লজ। এবার অত্যাধুনিক ফরেনসিক প্রযুক্তির সাহায্যে সেই সান্তার আসল মুখমণ্ডল প্রকাশ্যে আনলেন বিজ্ঞানীরা। এ যেন রূপকথার চরিত্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলো।
১৭০০ বছর পূর্বে মৃত্যু হয়েছিল সেন্ট নিকোলাস অফ মায়রার। দীর্ঘদিন ধরে ডাটা অ্যানালাইজ করে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে সান্তা ক্লজের। মাথার খুলি, মুখের আদল, চোয়াল, নাক, চোখ সবটাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। সেন্ট নিকোলাস ছিলেন একজন খ্রিস্টান বিশপ। বরাবরই দয়ালু হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। শিশুদের জন্য সাজিয়ে রাখতেন উপহারের ডালি। সেই ব্যক্তিত্বের অনুকরণেই তৈরি হয়েছিল সান্তা ক্লজ চরিত্রটি।
এই প্রজেক্টের প্রধান গবেষক সিসেরো মোরায়েস গোটা বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জানিয়েছেন কীভাবে থ্রিডি মডেলে সান্তা ক্লজের মাথা, মুখের আদল গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৫০ সালে লুইগি মার্টিনো সেন্ট নিকোলাস সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, সেই তথ্য থেকে উপাদান নিয়েই তৈরি হয়েছে সান্তার মুখাবয়ব।
স্ট্যাটিসটিক্যালি প্রজেকশন এবং অ্যানাটমিক্যাল ডিফর্মেশন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে এই গবেষণায়। তাতেই পাওয়া গিয়েছে সান্তা ক্লজের একটি শান্ত-ভদ্র চেহারা। ১৮২৩ সালে লেখা কবিতা ‘টোয়াস দ্য নাইট বিফোর খ্রিস্টমাস’-এ উল্লিখিত সেন্ট নিকোলাসের সঙ্গে এই চেহারার হুবহু মিল রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা।
দেখা যাচ্ছে, ঠিক রূপকথা চরিত্রের মতোই এই সান্তার রয়েছে একগাল দাড়ি, মোটা গোঁফ। চোখে-মুখে দয়ালু এবং নিষ্পাপ ভাব স্পষ্ট। এই প্রজেক্টের গবেষকরা জানাচ্ছেন, কীভাবে একটি রূপকথার চরিত্র যুগের পর যুগ ধরে শিশু তথা সব বয়সি মানুষকে প্রভাবিত করে আসছে, তারই প্রতিফলন এই সান্তার মুখ।
ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ডের ছোট্ট গ্রাম রোভানিয়েমি। এটাই সান্তা ক্লজের ‘অফিসিয়াল’ বাড়ি। রোভানিয়েমি হলো বিশ্বের একমাত্র জায়গা যেখানে আপনি বেড়াতে গিয়ে সান্তা ক্লজের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন, ছবি তুলতে পারবেন এবং নিজের ক্রিসমাস উইশ সান্তা ক্লজকে জানাতে পারবেন। ১৯৮৫ সাল থেকে রোভানিয়েমি সান্তা ক্লজের বাড়ি।
ইউআর
আপনার মতামত লিখুন :