ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে সবাইকে জাতীয় বেতন কাঠামোর ১৩তম গ্রেড দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিগত বছরের অক্টোবরে।
আরো পড়ুন : গেজেটের ৩ দিনের মধ্যে এইচএসসির ফল প্রকাশ
অর্থ বিভাগের সম্মতিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড-১৪ (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) এবং বেতন গ্রেড-১৫ (প্রশিক্ষণ বিহীন) থেকে গ্রেড-১৩ তে উন্নীত করা হয়।
এই ১৩ তম গ্রেড প্রাপ্তি ছিল শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সগ্রামের ফসল।এই সফলতার পেছনের গল্প জানালেন এক শিক্ষক নেতা।
ফেসবুকে দেয়া তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
আলহামদুলিল্লাহ!
শিক্ষকদের কতটা ভালবাসলে, ভালোবাসা পেলে এতটা হতাশায় থাকতে হয় তা বুঝেছি একা একা, বুঝাতে পারিনি কাউকে।
প্রিয় সহকারী শিক্ষক বৃন্দ।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আন্দোলনের সফলতা একটি ছিল ৯/২/২০২০ তারিখের ১৩ -তম গ্রেডের গেজেট ও উচ্চ ধাপে ফিক্সেশন।
তখন থেকেই শিক্ষকগণ হতাশায় থাকত উচ্চধাপে ফিক্সেশন ও সবাই পাবে কিনা।কাশেম ভাইয়ের একটি পোস্টে জানিয়েছিলেন যে ৫ নং কলামের কারণে সকল সহকারী শিক্ষক এই ১৩ তম গ্রেডের সুবিধা পাবে না।
এই নিয়ে শিক্ষকদের মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকে। আমিও কাশেম ভাইয়ের ঐ স্ট্যাটাসের প্রতিবাদ করেছিলাম।
বলেছিলাম সবাই পাবে এবং উচ্চ ধাপে। দিন যেতে থাকল,নিম্ন ধাপের ঘোষণা এল, আবারও ফেসবুকে সোরগোল চলতে থাকল, নেতাদের শুনতে হলো কথা, তবে সবার চেয়ে বেশি মানসিক চাপে আমিই ছিলাম।কারণ আমিই প্রথম এবং নিয়মিত জোর দিয়ে বলেছি ১৩ তম গ্রেড সবাই পাবে এবং উচ্চ ধাপে। আমি জানতাম এবং বিশ্বাস করতাম পরর্বতীতে সংশোধনী আসবে। কিন্তু একথা কাকে বলব, বুঝাব, কে-ইবা শুনবে! আসল উচ্চ ধাপে ফিক্সেশন চিঠি, কেটে গেলো অন্ধকারের ধোঁয়া কিছুটা,শুধু কাটল না সকলে পাবে কিনা এই কুয়াশা।
সকল শিক্ষক ১৩ তম গ্রেড পাবে না, এই বিশ্বাসকে লালন করেই সুনীল দেবনাথ, আনিস ভাইকে নিয়ে সিজিএ অফিস ও ibas++ থেকে ফিরে এসে নিশ্চিত হয়ে আমাকে ফোন দিয়ে জানাল জাকির ভাই, সবাই ১৩ তম গ্রেড পাবে না।
সত্যিই, সেদিনই বুঝেছিলাম এই না পাওয়ার বেদনা কতটা কষ্টের, অপমানের।
বললাম আমি ঢাকা আসছি। ফোন করে আসতে বললাম রবিউল ভাইকে।আনিস ভাইকে ঐক্য পরিষদের মিনিং ডাকতে অনুরোধ করলাম। মিটিং হলো, সিদ্ধান্ত হলো, তার মাঝে একটি ছিল সংবাদ সম্মেলন করারও সিদ্ধান্ত।
পরের দিন ছুটলাম ঢাকা,অধিদপ্তরে,সচিবালয়ে উক্ত চিঠির সংশোধনী চেয়ে আবেদন করলাম স্তরে স্তরে। চলছে মহামারী করোনা প্রভাব, কোন অনুমতি নাই সচিবালয়ে ঢোকার, তবুও ঢুকেছি চেষ্টার ত্রুটি না করে। আজকের মহাপরিচালক আলমগীর আল মুনসুর স্যারের কাছেও দিলাম কপি।তখন স্যার ছিলেন অতিরিক্ত সচিব। তবে স্যার সেদিন কথা দিয়েছিলেন আমরা প্রস্তাব পাঠাব,জানি না অর্থ মন্ত্রণালয় মেনে নিবে কিনা।স্যারের কথায় বুকের পাঁজরে যেন হতাশা জমতে শুরু করল। ছিল সিনিয়র সচিব আকরাম আল হাসান স্যারের শেষ মূহুর্ত। তবু্ও অনেক আশা,বিশ্বাস, ভালোবাসা নিয়ে গেলাম সিনিয়র সচিব মহোদয়ের কাছে। কিন্তু সেদিন যেন ছিল স্যার এক ভিন্ন সচিব স্যার। এক পর্যায়ে রেগে বলেছিলেন তোমাদের বেশি দেওয়া হয়ে গেছে।ফিরে আসতে আর কেহ চোখের জল মুছেছে কিনা জানি না।তবে অপমানের লজ্জা আর শিক্ষকদের কথা ভেবেই চোখের পানি মুছে ফেলেছি টিস্যু পেপার দিয়ে। কাটতে থাকল রাতের পর রাত এপাশ ওপাশ করে হতাশায়। কেননা, কেবল মাত্র আমিই একজন যিনি জোর করে বলেছিলাম সবাই পাবে। লিখতাম ফেসবুকে, লক্ষ লক্ষ শিক্ষকের আঙুলের চাপে এক একটা স্ট্যাটাস মূহুর্তে ভাইরাল হওয়ার কথা,কিন্ত হয় না। কারণ লাইক, কমেন্ট করে যদি চাকুরী চলে যায়!
কতজন নিষেধ করেছে,জাকির লেখা বন্ধ করো, মনের জোরেই লিখতাম, সত্য তুলে ধরতাম,তাতে যদি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত বা অন্য কোন শাস্তি পেতে হয় তা মাথা পেতে নিব।
জানি না কেন এতটা জেদ চেপে বসত।এটাই বুঝি নেতৃত্ব দিতে হেরে না যাওয়ার অভয় ও জিদ।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মহোদয়ের নজরে আসবে কিনা সন্দেহে ইনবক্সে, ই-মেইলও পাঠাতাম লেখা। এটিও সত্য যে সর্বশেষ যে লেখাটি আকরাম আল হাসান স্যারের ইনবক্সে দিয়েছিলাম, তার একদিন পরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হলো সকলকে ১৩ গ্রেড দেবার চিঠি। স্যার যে আন্তরিক ছিল তা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হলো আরো একবার।
খুশিতে শিক্ষকেরা সতেজ হলো।তবে আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি তাদের কাছে যিনি আমার পোস্ট শেয়ার করে ফোনে বলত, জাকির ভাই,আমি আপনার পোস্টটা শেয়ার করেছি।আমি ধন্যবাদ দিতাম খুশি হয়ে,তখন তিনি বলতেন আমার সাথে সচিব স্যার ফ্রেন্ড আছেন,আমি শেয়ার করলে বা কমেন্ট, লাইক করলে স্যারের নজরে আসবে।তখন ভাবতাম আমিই শুধু নয়,সাধারণ শিক্ষককে ভালবাসতে সাধারণ শিক্ষকের মাঝে আছে অসাধারণ শিক্ষকও।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না সংবাদ সম্মেলন। কেন হলো না, তা বলছি না।
তবে এটাও সত্য যে সেখানেও হয়ত ছিল নেতাদের গড়িমসি। এই নিয়ে আমাদের মধ্যেও যে ভুল বুঝাবুঝি,রাগারাগি হয়নি তাও কিন্তু নয়।
মনে মনে ভাবলাম যা হয় হোক,১৩ সকলে পাক বা না পাক, চাকুরীর আর মাত্র ক'বছর পলকেই কেটে যাবে।
সবচেয়ে খারাপ লাগত তখন যখন কিছু শিক্ষক নামে চাকুরীজিবি নেতাদের বিভিন্ন অশালীন ভাষায় কমেন্ট করত।আবার প্রতি দিন ফোনে,ইনবক্সে, সহজ সরল শিক্ষক বলত স্যার আমরা কি ১৩ তম গ্রেড পাবনা, আমরা কি প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাবনা? বুঝতাম কতটা হতাশা!
কতটা স্বার্থপর,অকৃতজ্ঞ হলে যোগ্য, অযোগ্য নিয়ে পোস্ট, কমেন্ট করা যায়!
৭০% বঞ্চিত শিক্ষক লজ্জায় প্রতিবাদ করত না। তারা হয়ত মনে মনে ভাবত যদি কমেন্ট বা লাইক দেই তাহলে তো বুঝে যাবে আমিও অযোগ্য!
এই যখন সমীক্ষা, তখনও কেহ কেহ বলতে ছাড়েনি এসব এমনি এমনি হতো,কেহ কেহ বলত এটা ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতিতে আছে তাই হচ্ছে। কেহ বলে নিজেকে নেতা সাজানোর কৌশল, ইত্যাদি কতকথা!
তবে আমি মিথ্যে বলছি বা আমার কথা কল্পনাপ্রসূত কিনা, তাহলে ফিরে যাওয়া দিনের কোন এক কেন্দ্রীয় বড় নেতার পোস্ট বা ভূমিকা দেখাতে পারেন কিনা?
যখনই দাবী আদায়ের চিঠি আসে তখন বুঝা যায় কে কত ভূমিকা রেখেছে।
দেখেছি অনশন পরবর্তী নাটক।দেখেছি ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবরের মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর সাথে কমলাপুর মিটিং শেষে এসে নেতাদের মনোবল। জাকির বড় নেতা না হলেও বড় বড় নেতাদের সহায়তায় কতটা ভূমিকা রেখেছে তা বিধাতা ও আমার শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ জানেন।
দেখেছি সেদিন রবিউল ভাইয়ের দুর্দান্ত মনোবল,নয়ত ২৩ অক্টোবরের মহাসমাবেশই হতো না। ফিরে যেতে হতো রাস্তা থেকে। তবে আমি ও কেন্দ্রীয় সকল নেতাদের পক্ষ থেকে সকল সাধারণ শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ যে তারা নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সরকারকে বুঝিয়ে দিয়েছে আন্দোলনের সফলতা। সফলতা তো এটা, যে শিক্ষকের পথ রুদ্ধ করতে শত শত পুলিশ শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে জমায়েত হয়েছে মধ্যে রাতে।
জানতাম না নেতৃত্ব একটা নেশা,একটা জিদ,একটা স্বপ্ন, একটা পরিকল্পনা।
তারপরও কতকথা শুনতে হয় নেতাকে,তারা বুঝতেই চায় না নেতাদের হাতে কলমের শক্তি থাকে না,তারা বোঝেনা সরকার তাদের প্রশাসন ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দিয়ে দাবিয়ে রাখতে চায়।
তারপর থাকে নেতৃত্বের বড় পদের লোভ। তবে বলবেন আমার লোভ নেই?
না নেই,কাজ করতে চাইলে যেকোন পদ থেকেই করা যায়। যদি আন্তরিকতা, সততা,ভালোবাসা থাকে।
বিশ্বাস না হয় আমার নেতা আনিস ও রবিউল ভাইকে গোপনে জেনে নিবেন তাদের কাছে কোন পদের আবদার করেছি কিনা?
তবে এটাও সত্য তাদের সাথে এতঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকাতেও চায়তে মন চায়নি । এমন মনোভাবাপন্ন যদি সব নেতাদের থাকত তাহলে একই পেশা জিবি চাকুরীতে এতটা সংগঠন হতো না।কেহ হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে কেহ লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধ ভাবে উপার্জন করে গাড়ি বাড়ি করছে।
আমাদের শিক্ষক চায় সবসময় আপডেট দিতে। কিন্তু তারা বুঝতে চায়না কিছু অর্জনে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়,বলা যায় না সব কথা ফেসবুকে।
যেমন বলতে পারিনি কোন কোন নেতা চায়নি ১৩ তম গ্রেড পাক সকলে।
চায়নি তারা ওরাও পদোন্নতি পাক।কত কথা বলেছে অনুমতি বিহীন সার্টিফিকেট সংযুক্ত করনে।এটা যেএকটা বিশাল অর্জন তা ভাবেনি। ভেবেছে শুধু নিজেকে। কত ঠাট্টা, অট্টহাসি দেখেছি যখন ibas++ ফিক্সেশন পাওয়া গেল।তখন কত শিক্ষক গলা শুকিয়ে বলত জাকির স্যার, আমরা কি ১৩ পাব না স্যার! তখন কেন যেন আমার কান্না আসত, বুঝতে দেবনা বলে পাবেন ভাই,সংশোধনী আসবে। বলেই কেটে দিতাম ফোনটি, ছুটে এলাম ঢাকাতে,আবেদন লিখলাম প্রধানমন্ত্রী বরাবর।এই আবেদন কর্তৃপক্ষের নজরে আসতে ব্যবস্থাও নিলাম।
আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায় আমার সোনালী আপা মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের খুব কাছের এক জন,ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই মানিকগঞ্জের আমার বাবার নামে নাম আব্দুল খালেক স্যারকে। তিনি আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। ধন্যবাদ আমার কেন্দ্রীয় সভাপতিকে ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল ভাইকে। শিক্ষকদের জন্য রবিউল ভাই যে কতটা ত্যাগ করেন তা অদ্বিতীয়।
সকলে ১৩ তম গ্রেড পাওয়ার সংশোধনী চিঠি আসবে,কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আসবে তা কেহই ভাবেনি।
জেনেছি অজানা কথা।
তাহলে কেহনা কেহ, কোন নেতৃত্ব চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে প্রচারকে চেপে রেখে,এটাতেও সন্দেহ?
পরিশেষে আমরা পদের লোভে, নিজের স্বার্থে সংগঠন না করি, শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে এগিয়ে চলি।জয় ইনশাআল্লাহ আসবেই।
আসুন সকল সংগঠনের সকল নেতৃত্ব আবার এক কাতারে বসি, ঘোষণা নিয়ে মাঠে নামি নতুন দাবী নিয়ে,দাবী আদায়ে ঐক্য আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নাই।
এই কামনায়
আপনাদেরই বিশ্বস্ত
টি,এম, জাকির হোসেন।
সোনালীনিউজ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :