ঢাকা: দেশে ‘প্রযুক্তি খাতের মাফিয়া’ বলা হতো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে। তার সঙ্গে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকাসহ অনুগত সিন্ডিকেট সদস্যরা।
তাদের নিকট আত্মীয়দের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও বাড়ি রয়েছে এ দম্পতির। তারা মাঝেমধ্যেই সেসব দেশে অবকাশ যাপনের জন্য যেতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পলক তার অনুগত সিন্ডিকেট সদস্যদের দিয়ে নামে-বেনামে সিংড়া ও আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার বিঘা জমি কিনেছেন। সেইসঙ্গে চাকরি, বদলি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি কমিশন, খাসজমি বরাদ্দসহ অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। নিজ এলাকায় তার তার ‘ফাইভ স্টার’ নামে একটি সিন্ডিকেট বাহিনী রয়েছে।
এই বাহিনীর সদস্যদের একজন হলেন- পৌরমেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি আগে বিড়ি/সিগারেট বিক্রি করতেন। এখন মাটি বালুর ব্যবস্থা, ইটভাটা, গরুর খামার, সরকারি জায়গা দখল করে দোকান বাণিজ্য, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে চাঁদাবাজি, ডিও ব্যবসা ও সরকারি শতাধিক পুকুর/দিঘি দখল করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
আরেক সদস্য সাজ্জাদ হোসেন আগে আতর-সুরমা-টুপির দোকান করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সিংড়া দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হন। পলকের আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটিও বাগিয়ে নেন। তিনি এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। ভুয়া দলিল করে অন্যের জমি দখলে সিদ্ধহস্ত পলকের জমি বাণিজ্যের মূল কারিগর ছিলেন সাজ্জাদ। ওই এলাকার রাজা রমনি কান্ত রায় বাহাদুরের শত শত একর জায়গা (অর্পিত সম্পত্তি) ভুয়া দলিল করে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া জমিদার বাগাচি, মজুমদার ও মধু ভাদুরির ৭০০-৮০০ বিঘা জমি ভুয়া ওয়ারিশ দেখিয়ে দলিল করে নিতে সহায়তা করেন এই সাজ্জাদ। সিংড়া এলাকায় আবাসন ব্যবসা রয়েছে সাজ্জাদের।
সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইটালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম। তিনি পলকের মূল পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত। জালিয়াতি করে মহিলা কোটা উপেক্ষা করে ছোট ভাই যুবদলের উপজেলা সেক্রেটারি আনিসুর রহমান লিখনকে নিয়ে দিয়েছেন প্রভাষক পদে চাকরি। সহোদর এই দুই ভাই পলকের হয়ে এলাকায় বিচার-সালিশ, পুকুর দখল, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করতেন।
উপজেলার চাঁদপুর মহল্লায় রাজপ্রসাদের মতো দুই বাড়ির মালিক এই দুই ভাই। এছাড়া শত শত বিঘা জমি, শতাধিক পুকুরে মাছচাষ, ইটভাটা, অটোরাইস মিলের ব্যবসা রয়েছে তাদের।
আরেক সদস্য ডালিম আহম্মেদ ডন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার বাবা সাবেক কমিশনার মান্নান পুরো এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেন। পলকের হয়ে গরুর হাট নিয়ন্ত্রণ, সরকারি জায়গা দখল করে দোকান ও গোডাউন বাণিজ্য, শত বিঘা জমিতে মাছের ঘের নির্মাণ, নদী থেকে অবৈধ বালুর ব্যবসা, ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার নামে চাঁদা উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
শেষজন পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল। সিন্ডিকেটের প্রতিটি সদস্যর সঙ্গে রয়েছে তার সম্পৃক্ততা। এছাড়া আলাদাভাবে তিনি আত্রাই নদীর বালু পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন। অবৈধভাবে তোলা এই পয়েন্টে সবসময় শতকোটি টাকার বালুর স্টক থাকতো। লিঙ্গইন ও জোরমল্লিকাতে বালুর পয়েন্টগুলোও ছিল তার। পরিবহন ব্যবসা, ফিলিং স্টেশন, গরুর খামার, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছচাষ ছিল তার উপার্জনের মূল খাত।
সিংড়ার অদূরে চলনবিলের মধ্যে হাই-টেক পার্ক ঘিরে এলাকায় শত শত বিঘা জমি কিনে রাখা ও জমির দালালি, দখলবাজিও করেছেন এই রুবেল। বড় বোন আরিফা জেসমিন কনিকার (পলকের স্ত্রী) ব্যবসা ও নগদ টাকা দেখভালের দায়িত্বও ছিল তার ওপরে। বোন-দুলাভাইয়ের দেশের বাইরের আইটি রিলেটেড ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। তারও ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে দুবাইয়ে। সেখানেই বর্তমানে অবস্থান করছেন তিনি এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে পারিবারিক একাধিক সূত্র।
এ বিষয়ে কথা বলতে এলাকায় গিয়ে ফাইভ স্টার বাহিনীর সদস্যদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যক্তিগত অফিসগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। পরে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।
সূত্র-জাগোনিউজ
আইএ
আপনার মতামত লিখুন :