কুমিল্লা: কুমিল্লা নগরীতে আবাসিক ভবনে হাসপাতাল চালু না করার নির্দেশ থাকলেও সেগুলোর যেন কোনো তোয়াক্কাই করছেন না বেসরকারী ক্লিনিক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলো। প্রতিনিয়তই আবাসিক ভবনে চালু করে চলছেন নামে বেনামে বিভিন্ন হাসপাতাল। সেসব হাসপাতালে ডাক্তারদের রোগী দেখার পাশাপাশি আবার চলছে রোগীর অস্ত্রোপচার। রয়েছে রোগীর শয্যার ব্যবস্থাও। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়মনীতি না মেনে চলছে এসব হাসপাতালের কার্যক্রম। আর এসব দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। নেওয়া হচ্ছে না সেগুলো বন্ধের কোনো উদ্যোগও।
সম্প্রতি এমনই একটি অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার সালাউদ্দিন মোড় সংলগ্ন তাকওয়া হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তাকওয়া হাসপাতালের ভবনটি আবাসিক ভবন হলেও নিয়মনীতি না মেনে এক প্রকার জোর করেই হাসপাতাল খুলে বসেছে কর্তৃপক্ষ৷ এই বিষয়ে ভবনটির এক অংশীদার সিভিল সার্জন কার্যালয়, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুফল পান নি৷ প্রশাসন যেন এর তোয়াক্কাই করছেন না। তাক্বওয়া হাসপাতালের ভবনটির পাশেই লাগোয়া আরেকটি আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা জীবন নিয়ে হুমকিতে পড়েছেন। আশঙ্কা করছেন নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, ঠাকুরপাড়া এলাকার সালাউদ্দিন মোড় সংলগ্ন তাকওয়া হাসপাতালের ভবনটি সহ পাশের আরও একটি ভবন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক দেওয়া একই হোল্ডিং নম্বরের অন্তর্ভূক্ত। উক্ত হোল্ডিং এর অধীনস্থ ভবনসমূহ আবাসিক ভবন হিসেবে সিটি কর্পোরেশনে তালিকাভুক্ত থাকলেও উক্ত হোল্ডিং এর দক্ষিণ দিকের ভবনটিতে তাকওয়া হাসপাতাল তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। আবাসিক ভবন হওয়ায় সকল দিক বিবেচনায় এটি হাসপাতাল পরিচালনায় উপযুক্ত নয় এবং একই প্রাঙ্গনে ঠিক পাশের ভবনে বসবাসকারীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকিরও কারণ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে তাকওয়া হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, আমরা বাড়ির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি। আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নেওয়া লাইসেন্সও রয়েছে। এছাড়াও, একটি হাসপাতাল পরিচালনা করতে যত অনুমোদন প্রয়োজন সবই রয়েছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হাসপাতাল পরিচালনা করছি৷ আর কুমিল্লা শহরের অধিকাংশ হাসপাতালই আবাসিক ভবনে করা।
এই বিষয়ে তাকওয়া হাসপাতাল চালু হওয়া সেই বাড়ির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অংশীদার ও ভুক্তভোগী বলেন, আমাদের বাড়িটি আবাসিক ভবন হওয়া সত্ত্বেও এখানে হাসপাতাল কিভাবে চালু করতে পারে তারা। আমি এই বিষয়ে সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও সিটি কর্পোরেশনে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাইনি। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ছামছুল আলম এই বিষয়ে শালিস করেছেন আমাদের দুই পক্ষকে নিয়ে। কিন্তু, শালিসে আমরা রায় পেলেও তিনি আমাদেরকে লিখিত দেন নি কোনো। পরে আমরা লিখিত চাইলে তিনি আমাদেরকে তা দিতে নারাজ ছিলেন। আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা চাই৷ এমতাবস্থায় আবাসিক ভবনে এবং সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত পরিবেশে চালু হওয়া তাকওয়া হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করছি প্রশাসনকে।
এই বিষয়ে জানতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শহরে পাঁচ হাজার বিল্ডিং রয়েছে। আমি কি করে জানবো কোনটা আবাসিক, কোনটা কমার্শিয়াল। সাংবাদিকদের এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বসে নেই। আপনি বিল্ডিং শাখায় যোগাযোগ করুন।’
তাকওয়া হাসপাতাল উল্লেখ করে শালিসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন রেখে দেন৷ পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয় নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার বলেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিলো আবাসিক ভবনে কোনো হাসপাতাল চালু করা যাবে না। কিন্তু, বাংলাদেশের আর কোথাও এমন নিয়ম নেই। জেলা প্রশাসনের হাতে এটা। আমরা তাকওয়া হাসপাতালকে গত বছর এই আইনে নিষেধ করেছিলাম হাসপাতাল চালু করতে। তারা যদি পুনরায় চালু করে থাকে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়সার বলেন, কোনোভাবেই আবাসিক ভবনে হাসপাতাল চালু করতে দেওয়া যাবে না। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়ে থাকলে আমরা এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :