শীতে যেভাবে বাতের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করবেন

  • সোনালীনিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২০, ০৯:৩৪ এএম
শীতে যেভাবে বাতের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করবেন

ঢাকা: আপনার বাতের সমস্যা থাকলে হয়তো ইতোমধ্যে জানেন যে শীতকালে রোগটির মাত্রা বেড়ে যায়। ঠান্ডা ও বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক ঘটনাকে আপনি থামাতে না পারলেও এসময় বাত সম্পর্কিত ব্যথা বা অন্যান্য উপসর্গের তীব্রতা এড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া অসম্ভব কিছু নয়।

বাতের সমস্যাকে মেডিক্যালের পরিভাষায় আর্থ্রাইটিস বলা হয়। আর্থ্রাইটিসের আক্ষরিক অর্থ হলো জয়েন্টের প্রদাহ, বলেন মেডিসিন ও সার্জারির চিকিৎসক সারাহ ব্রুয়ার। তিনি আরো জানান, ‘বাতের সবচেয়ে প্রচলিত ধরন হলো অস্টিওআর্থ্রাইটিস, যেখানে জয়েন্টের হাড়কে সুরক্ষা প্রদানকারী নরম আবরণের ক্ষয় হয়। এই আবরণকে মেডিক্যালের পরিভাষায় কার্টিলেজ বলা হয়।’ কার্টিলেজের সুরক্ষা ছাড়া টেন্ডন ও লিগামেন্টের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়। কার্টিলেজ খুব বেশি ক্ষয়ে গেলে হাড়ে হাড়ে ঘষা লেগে জয়েন্টে প্রদাহ ও ফুলে যায়।

বাতের আরেকটি প্রচলিত ধরন হলো রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম জয়েন্টের কোনো অংশকে বহিরাগত শত্রু মনে করে আক্রমণ করে। যাদের ফাইব্রোমায়ালজিয়া তথা শরীরের সর্বত্র দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা রয়েছে তারা বাতের সমস্যায়ও ভুগতে পারেন। বয়স্ক মানুষদের মধ্যে বাতের প্রচলন বেশি হলেও যেকেউ সমস্যাটিতে ভুগতে পারেন, এমনকি শিশুরাও।

ডা. ব্রাউনের মতে আরো কিছু প্রচলিত বাতের সমস্যা হলো গাউট বা গেঁটেবাত, সেপটিক আর্থ্রাইটিস বা সংক্রমণজনিত বাত, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস বা সোরিয়াসিস জনিত বাত ও রিয়্যাক্টিভ আর্থ্রাইটিস। রক্তপ্রবাহে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে গেঁটেবাত হয়, শরীরের কোনো সংক্রমণ রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে ছড়িয়ে জয়েন্টকে আক্রমণ করলে সেপটিক আর্থ্রাইটিস হয়, সোরিয়াসিস থেকে সৃষ্ট বাতকে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস বলা হয় এবং শরীরের সংক্রমণকে ঠেকাতে শরীরে যে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয় তা জয়েন্টকে আক্রমণ করলে রিয়্যাক্টিভ আর্থ্রাইটিস হয়।

সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিসের প্রথম লক্ষণ হলো ব্যথা। প্রাথমিক পর্যায়ে নিস্তেজ ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়ে থাকে। আক্রান্ত জয়েন্টকে প্রচুর ব্যবহারের পর ব্যথা অনুভূত হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস বড় জয়েন্ট বা ভারবহনকারী জয়েন্টকে আক্রান্ত করে, যেমন- নিতম্ব ও হাঁটু। কিন্তু ঘাড়, হাতের আঙুল ও পায়ের আঙুলেও অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে।

রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস পুরো শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে। এই সমস্যাতে জয়েন্ট অনমনীয় হয়ে যায়। একারণে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর জয়েন্টকে নড়াচড়া করাতে বেশি সময় লাগে। বাতের প্রদাহ বেড়ে গেলে জয়েন্ট বা এর আশপাশে ফুলে যায়। চিকিৎসা না করলে বা নিয়ন্ত্রণের উপায় না মানলে সময়ের আবর্তনে জয়েন্ট কার্যক্ষমতা হারায় ও অঙ্গহানি হতে পারে।

বিভিন্ন বাতের উপসর্গ ও লক্ষণ একই হতে পারে, কিন্তু রোগীকে সঠিক ও কার্যকর চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকেরা নির্দিষ্ট বাত শনাক্ত করতে যা করা প্রয়োজন তা করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন বাত ব্যথা বিশেষজ্ঞ রোগীর কয়টা জয়েন্ট আক্রান্ত হয়েছে তা দেখেন, আক্রান্ত স্থানের প্রকৃতি দেখেন, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে উপসর্গের মাত্রা বাড়ে কিনা প্রশ্ন করেন ও সিস্টেমিক সিমটম আছে কি নেই দেখেন।

শীতে যেভাবে আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণ করবেন

বিভিন্ন গবেষণা ও রোগীর ভাষ্য এটা বলছে যে, শীতকালে বা ঠান্ডাময় সময়ে আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা তীব্র হতে পারে। ডা. ব্রুয়ার বলেন, ‘ঠান্ডা আবহাওয়ায় অনেক বাত রোগীর ব্যথা বেড়ে যায়, কিন্তু এর কারণ স্পষ্টভাবে বোধগম্য হয়নি। সম্ভাব্য একটি কারণ হচ্ছে, শীতকালে শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি। আরেকটি কারণ হলো, ঠান্ডা শনাক্তকারী টেম্পারেচার রিসেপ্টর বেশি সক্রিয় হয় বলে পেইন রিসেপ্টর আরো সংবেদনশীল হয়।’

শীতে বাতের সমস্যা নিয়ন্ত্রণের একটি সর্বোত্তম উপায় হলো- ঠান্ডার সময় বাইরে বের হলে গরম পোশাক পরা, হাতে গ্লাভস পরা ও পায়ে মোজা পরা। শীতকালে অনেকে বাতের উপসর্গ প্রশমনকারী ওষুধের প্রতি অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, কিন্তু এসব ব্যথানাশক ওষুধ দীর্ঘসময় ব্যবহার করলে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হতে পারে। ডা. ব্রুয়ার বলেন, ‘বর্তমানে বাতের চিকিৎসায় ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার কমছে, এর পরিবর্তে ব্যথা প্রশমক টপিক্যাল ক্রিম ও জেলের ব্যবহার জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।’ কিন্তু আপনি শরীরকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে পারলে উভয় প্রকার ওষুধের প্রতি নির্ভরশীলতা কমবে।

আমেরিকার আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশনের মতে, হিটেড সুইমিং পুলে সাঁতার কাটলেও জয়েন্টের বাত ব্যথা কমতে পারে। এছাড়া কুসুম গরম পানিতে গোসল করলেও বাতের উপসর্গকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে উষ্ণ পানিতে কিছুক্ষণ বসে থাকলে রাতে ভালো ঘুম হবে, কারণ বাত ব্যথার মাত্রা কমে যায়।

ডা. ব্রুয়ারের মতে, ‘কিছু সাপ্লিমেন্ট ও হার্বাল মেডিসিনও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে পারে, যেমন- গ্লুকোস্যামাইন ও কন্ড্রয়েটিন, হাইড্রোলাইজড কোলাজেন, জিনজার সাপ্লিমেন্ট, টারমেরিক সাপ্লিমেন্ট ও ক্রিল অয়েল।’ অথবা শীতকালে টারমেরিক সাপ্লিমেন্ট ও জিনজার সাপ্লিমেন্টের পরিবর্তে প্রতিদিন হলুদ পানি ও আদা চা পান করতে পারেন। এতে আশাতীত ফল পেতে পারেন। এসময় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতেও ভুলবেন না।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Link copied!