‘মশার যন্ত্রণায় এই শহরে থাকার আর উপায় নেই’

  • লাইজুল ইসলাম | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৩, ০৯:৪০ পিএম
‘মশার যন্ত্রণায় এই শহরে থাকার আর উপায় নেই’

ঢাকা: দেশে আশঙ্কাজনকহারে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মশা নিধনে দায়িত্বরতদের আরও কার্যকরী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হাসপাতালগুলো ভরে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা দিনরাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রোগীর যেন মৃত্যু কম হয় চিকিৎসকরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে রোগীদেরও দায়িত্ব রয়েছে। যথাসময়ে হাসপাতালে আসতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীতে প্রতিদিন ডেঙ্গু বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে দুই সিটি করপোরেশন। ভ্রাম্যমান আদালত দিয়ে বাড়ি বাড়ি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অফিস ও নির্মাণাধীন বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট। তাদের এ অভিযানের পরও রাজধানীর হাসপাতালগুলো রোগীতে ঠাসা। 

চলতি বছরে বৃষ্টি শুরু হয় মে মাসের মাঝামাঝি থেকে। তবে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে জুনের প্রথম থেকে। আর লাগাতার বৃষ্টি শুরু হয়েছে জুনের মাঝামাঝি থেকে। বৃষ্টি ছাড়াও প্রায় সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রভাব ছিলো দেশে। তবে মে মাস থেকে ডেঙ্গু বাড়তে থাকে। এখন প্রায় প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যাচ্ছে।

এদিকে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুই সিটি করপোরেশনের মশোন নিধন কার্যক্রম ও অভিযানের ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। এমনকি তাদের এই কার্যক্রম ও অভিযানকে লোক দেখানো বলেও অনেকে অভিহিত করছেন। 

মিরপুরের বাসিন্দা শরীফ শাওন সোনালীনিউজকে বলেন, ‘এই শহরে আর থাকার কোনো উপায় নেই। ট্যাক্স দিয়েও নাগরিক সেবা বঞ্চিত নগরবাসি। মশার যন্ত্রণায় বাসায় থাকা দায়। এর ওপর শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর প্রদুর্ভাব। ডেঙ্গুর ভয়ে বাচ্চাদের দেখভাল করতে হচ্ছে অতি শতর্কতার সঙ্গে।’

যাত্রাবাড়ীর বসিন্দা আহমেদ আমির জানান, ‘এখানে গত পাঁচ দিনে কাউকে দেখিনি মশার ওষুধ ছেটাতে। মশা নিধনের যে গল্প শোনানো হয় তা আসলে শোনানোর জন্য। তাদের এই কার্যক্রমের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। তাই বাসায় এরোসল এনেছি। গ্লুব ধরিয়ে রাখি সারা দিন। যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়।’   

বর্ষা আসার আগেই এত রোগী, এত মৃত্যুর পর পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘একটি হলো মৌসুমের আগে স্বাভাবিকভাবে কিছু রোগী হওয়া। আরেকটি হলো মৌসুমের সময় হওয়া। মৌসুমের আগে যেটা হয় যদিও সেটা পূর্ণ হিসেবে চলে আসে। কিন্তু আসলটা কিন্তু মৌসুমের মধ্যে কী হচ্ছে- সেটা বিষয়।’

‘এখন মৌসুম তুঙ্গে। জুলাই মাস চলে এসেছে। জুলাই থেকে বৃদ্ধিটা শুরু হয়। আগস্ট মাসে সবচেয়ে তুঙ্গে যায়। সেপ্টেম্বর মাসে কমে আসে। কিন্তু গত বছর আমরা পরিবর্তন দেখেছি। চরিত্রে পরিবর্তন দেখেছি। আগস্ট মাসে কেবল বৃদ্ধি পায়নি, সেপ্টেম্বরে আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কমা শুরু হয়েছে নভেম্বর গিয়ে।’

এবার ডেঙ্গু আগেই চলে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে সময় তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল সেই সময়েও ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। সেই সময় এটা হওয়ার কথা নয়। আমরা এগুলোকে আমলে নিয়ে কার্যক্রম বিস্তৃত করেছি। ২০২১ সালে আমরা দুই মাসের কার্যক্রম নিয়েছিলাম। এখন আমরা চার মাসের কার্যক্রম নিয়েছি। আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। কার্যক্রমও বৃদ্ধি করছি।’

উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ডেঙ্গু থেকে রাজধানীর নাগরিকদের বাঁচাতে আমরা সব কর্মকর্তা-কর্মচারির ছুটি বাতিল করেছি। উত্তর সিটির সব এলাকায় লার্ভিসাইট ও ফগিং করা হচ্ছে। আমরা ড্রোনের সহযোগিতা নিচ্ছি। যাতে কোনো ভাবেই বাড়ির ছাদে পানি জমে থাকতে না পারে। সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। উত্তরায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছাদ বাগান আছে। সেটা নজরদারিতে আনতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তাছাড়া, নির্মানাধীন বাড়িতেও যাতে পানি জমে থাকতে না পারে সেজন্য আমরা ড্রোনের সহযোগিতা নিবো।’ 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণিবিদ্যাবিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার সোনালীনিউজকে বলেন, ‘এখন আর দুই সিটি করপোরেশনের হাতে নেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আরো আগেই প্রস্তুতি নিতে হতো। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই। এখন সাধারণ মানুষসহ সবার সহযোগিতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না।’

তিনি বলেন, ‘বাসা বাড়িতে এখন নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে। যেহেতু মশার বিস্তার অনেকখানি বেড়েছে। তাই নিজেদের কাজটুকু পরিপূর্ণ রুপে করতে হবে। এতটা মশা বৃদ্ধির পেছনে কিছুটা আমাদেরও দ্বায় আছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Link copied!