আজমির শরিফের নিচে শিব মন্দির থাকার দাবি নিয়ে যা বলল ভারতীয় আদালত

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৪, ০২:২০ পিএম
আজমির শরিফের নিচে শিব মন্দির থাকার দাবি নিয়ে যা বলল ভারতীয় আদালত

ঢাকা : হিন্দুত্ববাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে ভারতের মুসলিম স্থাপনাগুলো। এর আগে জ্ঞানবাপী মসজিদ হিন্দুদের মন্দির বলে দাবি করেছিল তারা। তাজমহলের নিচে মন্দির রয়েছে বলেও প্রচার করেছে হিন্দুত্ববাদীরা। এজন্য তাজমহল ভেঙে নিচে কী আছে দেখার দাবি করেছে। এসব দাবি এখনও পুরনো হয়নি।

এবার ভারতের রাজস্থানের আজমির জেলার বিখ্যাত আজমির শরিফের নিচে মন্দির আছে- এমন দাবি করে আদালতে পিটিশন করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু সেনা। গত সেপ্টেম্বরে এই পিটিশন দায়ের করার পর আজমিরের একটি আদালত দাবিটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, আজমির শরিফের নিচে শিব মন্দির রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের সম্ভালের জামে মসজিদ বিতর্কের পরপরই হিন্দুত্ববাদীর এই দাবির সপক্ষে আর্জি গ্রহণ করলেন আদালত। এ বিষয়ে নিজ নিজ মতামত জানাতে বুধবার সব পক্ষকে নোটিশ দিয়েছেন আজমির পশ্চিম দায়রা বিচারক সিনিয়র ডিভিশন মনমোহন চান্দেল। তিনি দরগা কমিটি, সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তর এবং ভারতের পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণকে নোটিশ দিয়ে পরবর্তী শুনানির দিন হাজিরার নির্দেশ দেন।

রাজস্থানের আজমিরে খাজা মইনুদ্দিন চিশতির এই দরগা আকবরের আমল থেকে বিখ্যাত। প্রতিবছর দেশ-দেশান্তর থেকে বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে আসেন। সেই আজমির শরিফের নিচে শিব মন্দির ছিল বলে হিন্দুরা দাবি তুলেছে। মামলাটি গ্রহণ করে আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আগামী ৫ ডিসেম্বর।

হিন্দু সেনার পক্ষ থেকে বিষ্ণু গুপ্তা দাবি করেছেন, আমাদের দাবি হলো আজমির শরিফকে ‘সংকট মোচন মহাদেব’ মন্দির হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। যদি দরগার কোনো ধরনের রেজিস্ট্রেশন থাকে সেটি বাতিল করতে হবে। ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থাকে দিয়ে জরিপ করাতে হবে এবং হিন্দুদের সেখানে পূজা করার অধিকার দিতে হবে।’

এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আদালতে দায়ের করা পিটিশনে ১৯১১ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক হর্বিলাস সার্দার লেখা একটি বইয়ের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আজমির শরিফের চারপাশে হিন্দু ধর্মের মৃৎশিল্প ও খোদাই রয়েছে। ওই বইয়ে দাবি করা হয়েছিল, শিব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে দরগাটি তৈরি করা হয়েছে ও এটির সবচেয়ে পবিত্রতম জায়গায় এখনো একটি জৈন মন্দির রয়েছে।

মাজার কমিটি এই দাবি অস্বীকার করেছে। আঞ্জুমান সৈয়দ জাদগানের সেক্রেটারি সৈয়দ সারওয়ার চিশতী বলেন, এখানে বহুতত্ববাদ প্রচার হয়। আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়াসহ সব ধর্ম বর্ণের মানুষ এই মাজারে আসেন। দরগা কমিটি বলছে, এই ধরনের পিটিশন ও আদালতের এমন সিদ্ধান্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আদালত আজ তিনটি পক্ষকেই নোটিশ পাঠিয়েছে। আমরা কী করতে পারি দেখব। কাশী ও মথুরার প্রাচীন মসজিদগুলিকে লক্ষ্য করেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যা মোটেই ভালো হচ্ছে না।

পিটিশনারদের আইনজীবী যোগেশ শিরোজা বলেছেন, দেওয়ানি বিচারক মনমোহন চান্দেল এ ব্যাপারে আজমির দরগাহ কমিটি, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থার নয়াদিল্লি অফিসকে নোটিশ পাঠিয়েছেন। তাদের সবাইকে নিজ নিজ জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এই বিচারক।

আজমির শরিফকে ২০২২ সাল থেকেই শিব মন্দির বলে দাবি করে আসছে হিন্দু সংগঠনগুলি। মহারানা প্রতাপ সেনা একে মন্দির বলে দাবি জানিয়ে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দাবি জানিয়ে আসছে। আজমির শরিফের জানালায় স্বস্তিকা চিহ্ন আছে বলে দাবি তাদের। সংগঠনের দাবি, এটা প্রথমে শিব মন্দির ছিল, পরে দরগায় পরিণত করা হয়।

এমটিআই

Link copied!