নেই বাংলাদেশি রোগী-বাতিল হচ্ছে অস্ত্রোপচার, বিপাকে কলকাতার হাসপাতালগুলো

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
নেই বাংলাদেশি রোগী-বাতিল হচ্ছে অস্ত্রোপচার, বিপাকে কলকাতার হাসপাতালগুলো

ঢাকা : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে চার মাস আগে শেখ হাসিনার সরকার পতন এবং দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকেই সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে। এরই জেরে ভারতের সীমান্তে ও ভিসাতে কড়াকড়ি আরোপ করায় পশ্চিমবঙ্গে নিম্নে নেমেছে বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা।

সম্প্রতি সাবেক ইসকন সদস্য এবং সম্মিলিত সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের জেরে আরো তিক্ত হয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক। এমনকি বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল।

এমন অবস্থায় ভারতের কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা। এছাড়া বাতিল ও স্থগিত হতে শুরু করেছে নির্ধারিত অস্ত্রোপচার এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট। খবর টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে বয়াল হয়, বাংলাদেশ-ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি রোগীরা কলকাতার হাসপাতালে তাদের অস্ত্রোপচার বাতিল বা অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরিকল্পনা করছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার কিংবা চিকিৎসার জন্য ভর্তি হতে কলকাতার হাসপাতালগুলোর কাছ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, কলকাতার বিখ্যাত পিয়ারলেস হাসপাতালে আগামী এক সপ্তাহে বাংলাদেশি রোগীদের মধ্যে ২০টি অস্ত্রোপচার করানোর কথা। এই রোগীদের শনিবার থেকে আগামী শুক্রবারের মধ্যে ভর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করেনি।

হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী সুদীপ্ত মিত্র জানান, ‘আমরা তাদের কারও কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি না। ধারণা করা হচ্ছে এই রোগীদের কেউই ভর্তি হবেন না। তারা তাদের ভ্রমণ পেছাতে পারেন। সুতরাং এসব অস্ত্রোপচারের বেশিরভাগই সময় পিছিয়ে দিতে হবে। যদি তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে তাহলে আমরা তাদের তারিখগুলি পুনরায় নির্ধারণ করব।‘

তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার আমাদের হাসপাতালে ৫০ জনেরও কম বাংলাদেশি রোগী ছিল এবং কাউকে ভর্তি করা হয়নি। কিন্তু ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে গড়ে ২০ জন রোগী ভর্তি করা হতো এবং প্রতিদিন ১৫০ জন ওপিডি রোগী থাকত।

কলকাতার আরেক রুবি জেনারেল হাসপাতালেও কমেছে বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা। সেখানে গত রের সপ্তাহে দুই বাংলাদেশি রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে, তবে কেউ এখনও ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। হাসপাতালের চিফ জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) শুভাশিস দত্ত বলেন, "আমরা তাদের (বাংলাদেশি রোগীদের) নির্ধারিত ভর্তির তিন দিন আগে কল করব এবং মেইল ​​করব যে তারা ভ্রমণ করতে পারবে কিনা। তিনি জানান, গত তিন দিনে হাসপাতালের ওপিডিতে মাত্র তিনজন বাংলাদেশী রোগী এসেছে এবং কেউ ভর্তি হয়নি।

মাল্টিস্পেশালিটি নারায়না হাসপাতালগুলোতে গত আগস্ট থেকে বাংলাদেশি ওপিডি রোগী এবং ভর্তির সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়াতে হাসপাতালগুলো রোগীদের ভিসা প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা দিয়ে সাহায্য করছে বলেও জানান হাসপাতালটির সিওও আর ভেঙ্কটেশ।

তিনি আরও বলেন, 'কিছু ক্ষেত্রে, আমরা বাংলাদেশের চিকিৎসক এবং নারায়না হেলথের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সমন্বয় করে চিকিৎসা দিচ্ছি।'

কলকাতার ডিসান হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের অনেকেই চিকিৎসা নেয়ার জন্য যান। তবে গত মাসে এই হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা প্রায় ৭৫ শতাংশ কমেছে। তবে উক্ত সময়ে অন্তত ৫০ জন রোগী হাসপাতালটিতে অনলাইনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন। হাসপাতালের পরিকল্পনা এবং ভিসা আমন্ত্রণ পত্র (ভিআইএল) দ্রুত ইস্যু করা সত্ত্বেও অনেক রোগীর নির্ধারিত ওপিডি অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং ভর্তি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

কলকাতার বিপি পোদ্দার হাসপাতালে ডিসেম্বরের শেষ দশ দিনের নির্ধারিত প্রায় ৫০টি অস্ত্রোপচার স্থগিত করা হয়েছে। ক্রিসমাসের সময় বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। ওই সময় বাংলাদেশি রোগীদের অনেকেই যেমন- হাঁটু প্রতিস্থাপন এবং মেরুদণ্ডের মাইক্রোস্কোপিক অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করেন। তবে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন।

বিপি পোদ্দার গ্রুপের উপদেষ্টা সুপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, ‘এই বছরও আমাদের ২০ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৫০টি ‘কোল্ড সার্জারি’ সূচি নির্ধারিত ছিল। তবে মনে হচ্ছে সবই পরবর্তী তারিখের জন্য স্থগিত করতে হবে।’

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানীর আরও কয়েকটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত আগস্টে বাংলাদেশি রোগীদের স্বাভাবিক প্রবাহ কমে যায় এবং পূজার পর তা বাড়তে শুরু করে। কিন্তু এখনকার মতো পরিস্থিতি আগে কখনও দেখা যায়নি বলে জানায় তারা।

এমটিআই

Link copied!