হাসিনার মতোই পালিয়েছেন আসাদ, অদৃশ্য ছিল বিমানের সংকেত

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৪, ০২:৪০ পিএম
হাসিনার মতোই পালিয়েছেন আসাদ, অদৃশ্য ছিল বিমানের সংকেত

ঢাকা: রাজধানী দামেস্ক দখলে নেওয়ার বিদ্রোহীদের ঘোষণার মুখে সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। আসাদ সিরিয়া ছাড়ার পর সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দামেস্ক বিমানবন্দর এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবন ত্যাগ করে সরে যায়।  

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বিমানের সংকেত গোপন করে ভারতে পালিয়ে যান, বাশার আল আসাদও সংকেত অদৃশ্য করে দেশ ছেড়েছেন।

বিদ্রোহীরা দামেস্ক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কিছুক্ষণ আগে ওপেন সোর্স ফ্লাইট ট্র্যাকাররা সিরিয়ার আকাশসীমায় একটি বিমান উড্ডয়নের রেকর্ড করে।  

এতে দেখা যায়, ইলিউশিন ৭৬ বিমানটির ফ্লাইট নম্বর সিরিয়ান এয়ার ৯২১৮। দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড়ে যাওয়া শেষ ফ্লাইট ছিল এটি। ওই ব্যক্তিগত উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পর বিমানবন্দর থেকে সরকারি সেনারা সরে যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, দামেস্ক থেকে ছেড়ে যাওয়া শেষ ফ্লাইটে অবস্থান করছিলেন আসাদ। তবে তার গন্তব্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সোর্স ফ্লাইট ট্র্যাকারদের দাবি, এটি পূর্বদিকে উড়েছিল। তারপরে এটি উত্তরে ঘুরছিল। কয়েক মিনিট পরে, এটি হোমস শহর প্রদক্ষিণ করার সঙ্গে সঙ্গে এর সংকেত অদৃশ্য হয়ে যায়।

গত ৫ আগস্ট তীব্র প্রাণঘাতি গনআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ দেখে গণভবন থেকে কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে দেশ ছেড়ে পালান হাসিনা। হাসিনার পলায়নের পরপরই গণভবণ দখল নেয় লাখো বিক্ষু ছাত্র-জনতা।

 

হাসিনার ফ্লাইটপথ ও অবস্থান অন্যদের না জানাতে ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ওই সময়। একটি উড়োজাহাজের অবস্থান, নাম, উচ্চতা, গতি এবং স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম জানাতে থাকে ট্রান্সপন্ডার। হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ভারতীয় আকাশসীমার কাছাকাছি প্রবেশের আগ পর্যন্ত এর ট্রান্সপন্ডার চালু করা হয়নি।  

হাসিনার নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিতের পর গণভবন ছেড়েছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ঠিক একইভাবে আসাদ উড়োজাহাজে চেপে বসার পর বিমানবন্দর ছেড়ে যায় সরকারি বাহিনী।

৫ আগস্ট কারফিউ চলাকালীন আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল সেনাবাহিনী। ঠিক একইভাবে সিরিয়ার জেনারেলরা আসাদের সাথে কথা না বলেই হোমস থেকে সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। আরব দেশ ও পশ্চিমাশক্তির সঙ্গে কথা বলে তারা এ সিদ্ধান্ত নেয়।

সিরিয়ান সংবাদসংস্থা সাউত আল আসিমার সূত্র বলছে, আরব দেশগুলো গত দুই দিন আসাদকে পদত্যাগের আহ্বান জানালেও উপস্থাপিত সব উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান হয়। আসাদ একটি দীর্ঘ ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে জোর দিয়ে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে একটি সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন করা হবে।

সামাজিকমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক ব্যবহারকারী এমন খবরে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে জালিয়াতি করে নির্বাচন করার পর, অবশেষে তিনি (আসাদ) বৈধ নির্বাচন করতে চান?

গুনি ইয়াজার নামে আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, আসাদের একগুয়েমি ব্যক্তিত্ব দুঃখ ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনেনি। এটা কোনো নেতৃত্ব নয়; তার অহংকার বন্যপশুর মতো হয়ে গেছে, তাকে বুঝতে হবে তার পতন ঘটতে যাচ্ছে।

২০১১ সালে আরব বসন্তের জের ধরে সিরিয়ার বিক্ষোভ শুরু হয়।  ক্রমে তা রুপ নেয় গৃহযুদ্ধে। রাশিয়া আর ইরানের সমর্থনপুষ্ট বাশার আল আসাদ নিজের ক্ষমতা অনেকটা সংহত করে রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত আক্রমণ হাতে গত সপ্তাহ থেকে।  নতুন লড়াইয়ে একের পর এক বড় বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায় সরকারি বাহিনী।

রোববার বিদ্রোহী দলগুলো টেলিগ্রাম বার্তায় জানায়, ‘বাথ শাসনের অধীনে ৫০ বছরের নিপীড়নের পরে, এবং ১৩ বছরের অপরাধ ও অত্যাচার এবং (জোর করে) বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর... আমরা আজ এই অন্ধকার সময়ের অবসান এবং সিরিয়ার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করছি।’

১৯৭০ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সামরিক বাহিনীর জেনারেল হাফিজ আল আসাদ সিরিয়ায় ক্ষমতা দখল করেন। তিনি ছিলেন আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টির নেতা। হাফিজ শক্ত হাতে তিন দশকের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেন। তিনি সিরিয়াকে ক্রমেই মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে নিতে থাকেন। 

হাফিজ নিজের গোত্র আলাওয়াতিদের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন। গোটা দেশে নিজের ধ্যান ধারণা আর ব্যক্তিগত ক্যারিশমা প্রচার করার পাশাপাশি নিজের ক্ষমতাও অনেক বাড়িয়ে নেন। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হয়।

এরপর ওই বছরই মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ক্ষমতা গ্রহণ করেন তার কনিষ্ঠ ছেলে বাশার আল-আসাদ। বাশার প্রায় দু যুগ ধরে স্বৈরাচারি কায়দায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখেন। টানা ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং বহু মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছে। 

৫ আগস্ট, আওয়ামী সরকারের পতনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। ঠিক একইভাবে বাশার আল-আসাদের প্রয়াত পিতা ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদের একটি মূর্তি ভেঙে ফেলেছে বিক্ষোভকারী জনতা।

দামেস্কের শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে জারমানা এলাকার একটি বড় মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও হাফিজ আল-আসাদের মূর্তি ভেঙে ফেলার ছবিও ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এছাড়া হোমস শহর থেকে হাফিজ আল-আসাদের মূর্তি ভেঙে টেনে হিঁচড়ে নেওয়া যাওয়া হয়।

আইএ

Link copied!