আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা, নিহত অন্তত ১৫

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৮:৫৩ এএম
আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা, নিহত অন্তত ১৫

ঢাকা: আফগানিস্তানে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) আফগানিস্তানের ভেতরে নিষিদ্ধ ঘোষিত পাকিস্তানি তালেবানের (টিটিপি) একাধিক সন্দেহজনক আস্তানায় এই বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির চার নিরাপত্তা কর্মকর্তা। খবর আরব নিউজ।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হামলাগুলো পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় চালানো হয়। তবে এই কর্মকর্তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। কারণ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি তাদের নেই। তবে পাকিস্তানি বিমানগুলো আফগানিস্তানের কতটা ভেতরে ঢুকেছিল এবং হামলাগুলো কিভাবে পরিচালিত হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

পৃথক প্রতিবেদনে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই এবং আফগান সংবাদমাধ্যম খামা প্রেস জানিয়েছে, আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দফায় দফায় বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খামা প্রেসের রিপোর্ট অনুসারে, পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলার লামানসহ সাতটি গ্রামকে লক্ষ্য করে মঙ্গলবার রাতে এসব বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। এই হামলায় একটি পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান এই বোমা হামলার জন্য দায়ী। প্রতিবেদনগুলোতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, বিমান হামলায় বারমালের মুর্গ বাজার গ্রামটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া বিমান হামলার ফলে বেসামরিক মানুষ গুরুতর ভাবে হতাহত হয়েছে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে, যা এই অঞ্চলে চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। হামলার পর উদ্ধার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করতে এবং হামলার দায় স্পষ্ট করতে আরও তদন্ত প্রয়োজন বলে খামা প্রেস রিপোর্ট করেছে।

এদিকে পাকতিকার বারমালে বিমান হামলার পর তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আফগান এই মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের ভূখণ্ড এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা তাদের বৈধ অধিকার। একইসঙ্গে তারা এই হামলার নিন্দা করেছে।

অপরদিকে কাবুলে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের এই বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, বোমা হামলায় নারী ও শিশুসহ বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। অধিকাংশ হতাহতই ছিল পাকিস্তানের সংঘাতপ্রবণ ওয়াজিরিস্তান এলাকা থেকে আসা শরণার্থী।

তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আফগানিস্তান এই বর্বর কর্মকাণ্ডকে সব আন্তর্জাতিক নীতিমালার বিরুদ্ধে এবং খোলামেলাভাবে আক্রমণাত্মক বলে মনে করে এবং এটিকে কঠোরভাবে নিন্দা জানায়।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারিজমি জানান, বোমা হামলায় বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন শিশু ও অন্যান্য বেসামরিক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে কোনো সংখ্যা বলেননি তিনি।

এক্স প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পাকিস্তানকে বোঝা উচিত যে এ ধরনের একতরফা পদক্ষেপ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। আফগানিস্তান এই কাপুরুষোচিত হামলার জবাব দেবে এবং নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষাকে তাদের অক্ষুণ্ণ অধিকার বলে মনে করে।

অন্যদিকে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটির সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, সীমান্তের কাছে তালেবানদের আস্তানাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।  তবে গত মার্চ মাসের পর এটি দ্বিতীয় হামলা। তখন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকায় হামলা চালানোর দাবি করেছিল পাকিস্তান।

ইসলামাবাদ প্রায়ই দাবি করে যে পাকিস্তানি তালেবান আফগান ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালায়। যদিও তা কাবুল অস্বীকার করেছে। সাম্প্রতিক মাসে সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর মারাত্মক হামলা চালিয়েছে টিটিপি।

আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তানের এই হামলার ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত জঙ্গিদের উপস্থিতি নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি তালেবান বা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছে। আর পাকিস্তান এই জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আফগান তালেবানকে অভিযুক্ত করে আসছে।

এসএস

Link copied!