ঢাকা : বছরের শুরু থেকেই ২০২৪ সালকে বিশ্বজুড়ে নির্বাচনের বছর হিসেবে দেখা হচ্ছিল। বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এ বছর। বছরের শুরুতে বাংলাদেশের নির্বাচনও স্থান পায় আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনামে। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপু্র্যুপরি চাপ আর বিতর্কের মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন।
টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ভারত, চীন, রাশিয়ার মতো দেশগুলো দ্রুতই অভিনন্দন জানালেও নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে হয়নি বলে জানায় আমেরিকা ও ব্রিটেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র যতটা শক্ত অবস্থান নেয়ার ধারণা করা হয়েছিল তার প্রতিফলন নির্বাচনের পর দেখা যায়নি। অবশ্য সে নির্বাচনের ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যেই আরো বড় খবরের শিরোনাম হয় বাংলাদেশ।
আলোচিত নির্বাচনের মধ্যে ছিল পাকিস্তান, ভারত ও আমেরিকার নির্বাচন। ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের নির্বাচন, বিশেষত ইমরান খানকে ঘিরে নানা নাটকীয়তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল। নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে দেশের গোপন তথ্য পাচার করার অভিযোগে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় আগে থেকেই দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ইমরান খানকে।
তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই-এর 'ক্রিকেট ব্যাট' প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে না পারার মতো নির্বাচন কমিশনের আইনের কারণে দলের সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। স্বতন্ত্র হিসেবেই তারা ২৬৬টি আসনের মধ্যে ৯৩টি আসনে জয় পেয়ে শোরগোল বাঁধিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে ইমরানবিরোধীদের সমঝোতার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ।
ভারতে নির্বাচনের আগে বছরের শুরুতেই পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্লোগান দিয়েছিলেন, 'আবকি বার, চারশো পার!' অর্থাৎ ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৪০০ পার করার আত্মবিশ্বাস ছিল তার। তবে নির্বাচনে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপিকে হোঁচট খেতে হয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিয়েই।
ভারতের লোকসভায় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হলে একটি দলকে অন্তত ২৭২টি আসন পেতে হয়। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিজেপি এককভাবে পায় ২৪০টি আসন।
অন্যদিকে প্রত্যাশা ছাড়িয়ে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট পায় ২৩২টি আসন। এর মধ্য দিয়ে এক রকম পুনরুত্থান হয় কংগ্রেসের। আর জোটের ওপর ভর করে হলেও তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন মোদি, যেই রেকর্ড শুধু ছিল জওহরলাল নেহরুর।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরেও নাটকীয়তা হয়েছে বছরজুড়ে। জুলাই মাসে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর একটি সমাবেশে হামলা হয়। কানের পাশ দিয়ে চলে যায় গুলি। ট্রাম্পের রক্তমাখা ছবি শিরোনাম হয় গোটা বিশ্বেই। সেসময় নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক উঠলেও অনেক ভোটার এটিকে সাজানো নাটকও মনে করেন।
অন্যদিকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে চাপে থাকা জো বাইডেন বয়স নিয়েও তিনি কম বিতর্কে পড়েননি। তবে নির্বাচনের মাত্র সোয়া তিন মাস আগে জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট দৌড় থেকে সরে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে এগিয়ে দেন বাইডেন। তবে শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের হারিয়ে জয়ী হন ট্রাম্প।
এর বাইরে আলোচিত ছিল যুক্তরাজ্যের নির্বাচনও। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সেখানে ভোট হতে পারে ধারণা করা হলেও হুট করে আগেভাগেই জুলাই মাসে নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা দেন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
২০১৯ সালের কনজারভেটিভ পার্টির জয়ের পর ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে বরিস জনসন, লিজ ট্রাস, ঋষি সুনাক, সব মিলিয়ে পাঁচ বছর পূর্ণ হয়নি টোরি সরকারের। ২০২৪ সালের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন লেবার পার্টির স্যার কিয়ের স্টারমার।
রাজনৈতিক নাটকীয়তার বিবেচনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ করে দেশে সামরিক শাসন জারি করে বড় বিতর্কের মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। শেষ পর্যন্ত সংসদে ইমপিচ বা অভিশংসিত হয়ে সরকারি দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :