কাবুলের মার্কেটে বোরকা বিক্রির হিড়িক

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২১, ০৭:৪৬ পিএম
কাবুলের মার্কেটে বোরকা বিক্রির হিড়িক

ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা : পশ্চিমাসমর্থিত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি অবশেষে ক্ষমতা ছাড়ছেন। তালেবানের অস্থায়ী সরকারের কাছে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল সাত্তার মির্জাক্বল।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুসারে, রেকর্ড করা এক বার্তায় আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আফগান জনগণের চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই… শহরে কোনও হামলা হবে না। অস্থায়ী সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

তালেবান জানিয়েছে, বিদ্রোহী যোদ্ধারা এরই মধ্যে রাজধানী কাবুল ঘিরে ফেলেছে। তবে ‘শান্তিপূর্ণ’ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আলোচনা চলাকালে আক্রমণ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জোর করে কাবুল দখলের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। বিদ্রোহীদের এক নেতার বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চান তাদের নিরাপদে যেতে দিতে যোদ্ধাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে তালেবানদের অগ্রযাত্রায় আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হু হু করে বাড়ছে বোরকা বিক্রি। সেখানকারই একটি মার্কেটে বোরকা বিক্রি করেন আরেফ। দেশটির বর্তমান পরিস্থিতিতে বিক্রি বেড়েছে আরেফের দোকানে। দূর থেকে আরেফের দোকান দেখলে মনে হতে পারে সেখানে নীল রঙের পর্দা টাঙানো। কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যায় দোকানের হুকে ঝোলানো আছে অসংখ্য নীল বোরকা।

সম্প্রতি তালেবান দখলকৃত এলাকায় কঠোর শরিয়া আইন জারির হুঁশিয়ারি দিলে দেশটির তরুণী থেকে বৃদ্ধা সবাই নিজেদের বোরকার মজুদ বাড়ানো শুরু করেছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তালেবান কাবুলের চারদিক ঘিরে ফেলায় সেখানকার নারীরাও তৈরি হচ্ছেন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য। আরেফ জানান, আগে বিভিন্ন প্রদেশের নারীরাই তাদের প্রধান ক্রেতা ছিলেন। এখন শহরাঞ্চলের নারীরাও তাদের কাছে থেকে বোরকা কিনছেন।

আয়ালিয়া তেমনই একজন ক্রেতা। তিনি বোরকার দাম কমানোর জন্য আরেকজন দোকানদারের সাথে দরদাম করছিলেন। তিনি জানান, গত বছরও বোরকার দাম ছিল দুইশ আফগানি মুদ্রা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে, দুই হাজার থেকে তিন হাজার আফগানি মুদ্রায়।

কাবুলে দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে আসা নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বোরকার দাম বেড়ে গেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। অনেক দশক ধরে ঐতিহ্যবাহী আফগানি বোরকা বিশ্বে আফগান নারীদের পরিচয় বহন করে আসছে। ঐতিহ্যবাহী এই বোরকা অধিকাংশ সময় নীল রঙের হয়ে থাকে। ভারী কাপড়ে বানানো এই বোরকা এমন ভাবে নকশা করা হয় যেন পরিধানকারীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা থাকে।

বোরকার চোখের কাছে থাকে পাতলা জালের মতো কাপড়, যা দিয়ে পরিধানকারীরা বাইরের দৃশ্য দেখতে পান, কিন্তু বাইরের কেউ পরিধানকারীকে দেখতে পাবেন না। ১৯৯০-এর দশকে তালেবান সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন কড়াকড়ি ভাবে এ ধরনের বোরকা পরে মেয়েদের বাইরে বের হওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়। কেউ এই নির্দেশ না মানলে তালেবানের নৈতিক পুলিশের হাতে জনসম্মুখে বেত্রাঘাতের মতো নির্মম শাস্তি পেতে হতো।

২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত কারণে অনেকে অনেকেই বোরকা পরা অব্যাহত রাখলেও লাখ লাখ আফগান নারী দেশটির নবযুগের সূচনার প্রতীক হিসেবে বোরকাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তবে চলতি বছরে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর তালেবান দখলে নিলে পরিস্থিতি বদলে যায়। সূত্র : গার্ডিয়ান

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!