দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার

ভারত-কানাডা সম্পর্কে চরম উত্তেজনা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম
ভারত-কানাডা সম্পর্কে চরম উত্তেজনা

ঢাকা : গত জুনে কানাডায় খুন হন  ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্সের’ (কেটিএফ) প্রধান হারদীপ সিং নিজ্জার। এ হত্যার সঙ্গে  ভারত সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে কানাডা। এ ঘটনার জেরে অটোয়ায় ইন্ডিয়ার গোয়েন্দা বাহিনী 'র' এর প্রধানকে বহিষ্কার করেছে কানাডা। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, কানাডিয়ান শিখ নেতা নিজ্জার হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে।

ভারত কানাডার অভিযোগকে 'উদ্ভট' বলে অভিহিত করার পাশাপাশি তা নাকচ করেছে। কানাডা সরকারের এই উদ্যোগে অটোয়া ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্কে বড় পর্যায়ের টানাপড়েন দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে, এ ঘটনার পর এক জ্যেষ্ঠ কানাডীয় কূটনীতিককে ইন্ডিয়া ছেড়ে যেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই তথ্য জানিয়েছে। কানাডায় নিযুক্ত  ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) প্রধানকে বহিষ্কারের কয়েক ঘণ্টা পরেই এলো নয়াদিল্লির এই ঘোষণা।

কানাডায় থাকা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্সের’ (কেটিএফ) প্রধান হারদীপ সিং নিজ্জারকে গত (১৮ জুন) গুলি করে হত্যা করা হয়। ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের পাঞ্জাবি অধ্যুষিত শিখদের ধর্মীয় উপাসনালয়ের পার্কিংয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। দীর্ঘদিন হারদীপ সিংকে খুঁজছিল নিরাপত্তা বাহিনী। তার মাথার দাম ১০ লাখ রুপি ঘোষণা করেছিল ইন্ডিয়া সরকার।

যা বলছেন ট্রুডো: গত সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টে বলেন, হরদীপ সিং খুনের সঙ্গে  ভারতের এজেন্টদের যুক্ত থাকার বিষয়ে তার সরকারের কাছে 'বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ' আছে। জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে বিষয়টি তুলেও ধরেছিলেন তিনি।

ট্রুডো বলেন, কানাডার ভূখণ্ডে একজন কানাডিয়ান নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকা আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য লঙ্ঘন। যা অগ্রহণযোগ্য এবং মৌলিক নিয়মের পরিপন্থি।

তিনি আরও বলেছেন, শিখ নেতা নিজ্জারের মৃত্যুর ঘটনায়  ভারতের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে কানাডা সরকার। এ বিষয়ে আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গেও আলোচনা করেছি।

ট্রুডো আরও বলেন, কানাডার মাটিতে কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন। বিষয়টি পরিষ্কার করতে সহযোগিতার জন্য  ভারত সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান ট্রুডো।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি জানান, এ ঘটনায় ট্রুডো সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, আজ আমরা এক জ্যেষ্ঠ ইন্ডিয়ান কূটনীতিককে কানাডা থেকে বহিষ্কার করেছি। এরপর জোলি জানান যাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তিনি কানাডায় ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) প্রধান ছিলেন।

হরদীপকে 'পলাতক সন্ত্রাসী' ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে  ভারত সরকার।

গত ১৮ জুন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের এক শহরতলিতে হরদীপকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এটি কানাডার শিখ অধ্যুষিত এলাকা। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পর কানাডাতেই শিখ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি মানুষ থাকেন।

ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের কিছু অংশ নিয়ে স্বাধীন শিখরাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলেন হরদীপ। ভারতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে নয়াদিল্লি। তবে এ অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

অভিযোগ অস্বীকার ভারতের: মঙ্গলবার  ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কানাডার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, কানাডার কোনো সহিংস ঘটনায় ইন্ডিয়া সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এতে  আরও বলা হয়, আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ। আইনের শাসনের প্রতি আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার আছে।

বিবৃতি অনুসারে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ট্রুডো একই ধরনের অভিযোগ করেছেন, যা  ভারত সরকার ‘নাকচ’ করেছে।

বলা হয়, একটি অপ্রমাণিত অভিযোগের মাধ্যমে খালিস্তানি সন্ত্রাসী এবং উগ্রবাদীদের ওপর থেকে নজর সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই খালিস্তানি সন্ত্রাসীদের কানাডায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কানাডার সরকারের উদাসিনতা একটি দীর্ঘস্থায়ী ও অব্যাহত উদ্বেগ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে,  এসব ক্ষেত্রে কানাডার রাজনীতিবিদদের প্রকাশ্য সহানুভূতি খুবই চিন্তার বিষয়। কানাডায় অবৈধ কর্মকাণ্ড, যারমধ্যে রয়েছে হত্যা, মানবপাচার এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ নতুন কিছু নয়। এ ধরনের ঘটনায়  ভারত সরকারকে জড়িত করার যে কোনো প্রচেষ্টাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি। আমরা কানাডার সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই কানাডার মাটিতে  ভারত বিরোধী যে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত: গত শুক্রবার  ভারতের সঙ্গে পূর্বঘোষিত ‘বাণিজ্য মিশন’ নামের বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা সরকার। নির্ধারিত সূচি মোতাবেক আগামী মাসে  ভারতের একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা ছিল অটোয়ার। কিন্তু হঠাৎই সেই সফর বাতিল করা হয়েছে। অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও কারণ উল্লেখ না করেই এ ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি নাগের মুখপাত্র শান্তি কসেন্টিনো।

জানা গেছে, কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি এনজির নেতৃত্বে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালাতে অক্টোবর মাসে দিল্লিতে আসার কথা ছিল একটি প্রতিনিধিদলের। কিন্তু সেই সফর বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট করেনি কানাডা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভারতে নিষিদ্ধ খালিস্তানপন্থিদের কানাডায় বিতর্ক কর্মকাণ্ডে দিল্লি অটোয়ার সম্পর্কের অবনতি ২০২৩ সালে দৃশ্যমান হলো।

এমটিআই

Link copied!