ঢাকা : ইউক্রেনে হামলার পর থেকে সাধারণত দেশের বাইরে খুব কম যান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে সেই নীরবতা ভেঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি বিরল সফর শেষ করার পর বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সৌদি আরব গেছেন তিনি। সেখানে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে আলোচনার কথা তার। বৈঠকে ইউক্রেন, তেল ও গাজা আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে আবুধাবিতে পুতিনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। এমনকি তাকে ‘প্রিয় বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করেন।
অপরদিকে সম্পর্কের দৃঢ়তা প্রকাশ করতে গিয়ে পুতিন মন্তব্য করেন, ‘আপনার অবস্থানের কারণে আমাদের সম্পর্ক অভূতপূর্ব উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আরব বিশ্বে আরব আমিরাত রাশিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার।’
আবুধাবির পর রিয়াদে রুশ প্রেসিডেন্টের সফরকে একটি অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, কারণ ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে খুব কমই রাশিয়া ছেড়েছেন তিনি। বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের, যিনি ব্যাপকভাবে ‘এমবিএস’ পরিচিত, সাথে পুতিনের মুখোমুখি বৈঠক হতে পারে বৃহস্পতিবার।
পুতিন তেল বা ভূ-রাজনীতির বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান তা স্পষ্ট করেনি কোনো পক্ষ।
২০১৯ সালের পর পুতিন এমবিএসের সাথে তার প্রথম ব্যক্তিগত সাক্ষাতের জন্য সৌদি আরব গেছেন। তবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সাথে দেখা করেছিলেন।
এদিকে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এমবিএসের মস্কো সফরের পরিকল্পনা রয়েছে।
জিও টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিনের সাথে আসা রাশিয়ান প্রতিনিধি দলে তেল, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র, মহাকাশ এবং পারমাণবিক শক্তিসহ বিভিন্ন খাতের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয়পক্ষের আলোচনায় তেল, ইসরাইল-হামাস সংঘাত, সিরিয়া ও ইয়েমেনের পরিস্থিতি এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার বিষয়গুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রসঙ্গ আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। অবশ্য একজন সহযোগী উল্লেখ করেছেন যে, ইউক্রেন সংকটও এজেন্ডায় থাকবে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পুতিন এবং এমবিএস পশ্চিমা নানা চাপের মধ্যেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তারা যৌথভাবে দৈনিক তেল উৎপাদনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছিল ২০১৮ সালের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যখন পুতিন ও এমবিএস হাই-ফাইভ ও হ্যান্ডশেক (জোরে জোরে হাত মেলানো) করেছিলেন। বিশেষ করে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা নিয়ে এমবিএস যখন মার্কিন চাপ ও নানা সমালোচনার মুখে ছিলেন।
৩৮ বছর বয়সি এমবিএস সৌদি আরবকে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছেন যখন দেশটির প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে ৭১ বছর বয়সি পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন যে, রাশিয়া পশ্চিমাদের সাথে একটি অস্তিত্বের যুদ্ধে নিযুক্ত রয়েছে এবং মস্কোকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য পশ্চিমা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং এশিয়াজুড়ে জোট গঠনের প্রচেষ্টা চলছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ নিশ্চিত করেছেন যে, পুতিন বৃহস্পতিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সাথেও গাজা যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করবেন। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে পুতিন রাশিয়ান-অধিকৃত ইউক্রেন, ইরান এবং চীনে তার সফর সীমিত করেছেন। তবে এবার তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব সফরে গেলেন।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :