ঢাকা: করাচিতে এমকিউএম-পি (ঘুড়ি) এবং জামায়াতে-ই-ইসলামি (দাঁড়িপাল্লা) দলের নির্বাচনী পোস্টার দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা) থেকে এই ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং একটানা তা চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
এদিকে ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে পাকিস্তানজুড়ে মোবাইল পরিবেষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
বৃহস্পতিবার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘড়ির কাঁটা আজ সকাল ৮টা বেজে যাওয়ার সাথে সাথে দেশব্যাপী ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটারদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে এবং ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোনও ধরনের বিরতি ছাড়াই আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।
১৬তম এই সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তান জুড়ে নাগরিকরা ৯০ হাজার ৬৭৫টি ভোট কেন্দ্রে তাদের ভোট দিচ্ছেন। জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনে মোট ৫ হাজার ১২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩১৩ জন নারী।
পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার তাদের ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। যার প্রায় অর্ধেক ৩৫ বছরের কম বয়সী।
এদিকে সারাদেশে ‘সাময়িকভাবে’ মোবাইল পরিষেবা স্থগিত করা হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির’ আলোকে ‘সাময়িকভাবে সারা দেশে মোবাইল পরিষেবা স্থগিত করার’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি বলেছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির এবং প্রাণহানির ফলে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর এই কারণে নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’
এর আগে জিও নিউজ জানিয়েছিল, করাচি, লাহোর এবং পেশোয়ারসহ পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি জায়গায় মোবাইল ফোন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।
পাকিস্তানে সর্বশেষ ভোট ২০১৮ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে এবং ইমরান খানের নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গঠন করে।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৯০ হাজার ৬৭৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৪৬ হাজার ৬৫টিকে সংবেদনশীল এবং ১৮ হাজার ৪৩৭টিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) প্রার্থীদের মধ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল গত জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল।
আর ইমরানের অনুপস্থিতিতে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন)-এর নওয়াজ শরিফকে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ৩৫ বছর বয়সী ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও ভোটে জয়ের জন্য বেশ আক্রমণাত্মক প্রচারণাই চালিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে কে আসলে বিজয়ী হবেন তা স্পষ্ট না হলেও এটি নির্ধারণে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাধর জেনারেলরা বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৭৬ বছরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। আর ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের ও ১০টি আসন অমুসলিম প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।
সরকার গঠন করতে কোনও দল বা জোটকে কমপক্ষে ১৬৯টি আসনে জয় নিশ্চিত করতে হবে।
সোনালীনিউজ/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :