ঢাকা: ভারতে লোকসভার ষষ্ঠ দফার ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে শনিবার। তার আগে এনডিটিভি-তে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজেকে ‘ঈশ্বর প্রেরিত’ বলে জাহির করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শুক্রবার এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ঈশ্বর আমাকে বিশেষ কাজের দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।” সেই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানান মোদি।
তিনি আরও বলেন, “আমাকে গালি দিয়ে কথা বলা অনেক মানুষ আপনি পাবেন। আবার আমাকে নিয়ে ভাল কথা বলা মানুষও পাবেন। আমার দায়িত্ব হচ্ছে, যারা আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, তাদের এই অনুভূতি যেন আঘাত না পায় বা তারা যেন হতাশ না হন সেটি নিশ্চিত করা।”
“কিছু মানুষ আমাকে পাগল বলতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে পরমাত্মা আমাকে পাঠিয়েছেন কোনও বিশেষ কাজ করার জন্য। একবার সেই লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেলে আমার কাজও শেষ হয়ে যাবে। সেকারণেই আমি পুরোপুরি ঈশ্বরের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি।”
কোন বিশেষ কাজের জন্য ঈশ্বর তাকে পাঠিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোদি বলেন, “ঈশ্বর পাতা খোলেন না। তিনি কেবল আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে যান। আর আমিও এরপর কি করব তা জিজ্ঞেস করার জন্য তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি না।”
এনডিটিভিতে এই সাক্ষাৎকারের দুদিন আগে বারাণসীতেও এক সাক্ষাৎকারে মোদি দাবি করেছিলেন, তার জন্ম জৈবিকভাবে হয়নি। তিনি ঈশ্বরের পাঠানো দূত। কাজের অফুরন্ত প্রাণশক্তি কোথা থেকে পান–এমন প্রশ্নের জবাবে মোদি বলেছিলেন এমন কথা।
তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, “মা যতদিন জীবিত ছিলেন, আমার মনে হত আমি হয়তো তার গর্ভ থেকে জৈবিক ভাবেই জন্মেছি। কিন্তু, মা চলে যাওয়ার পর আমি সমস্ত অভিজ্ঞতা বিচার করে উপলব্ধি করলাম, এবং তা থেকে নিশ্চিত হলাম, পরমাত্মা ঈশ্বরই আমায় এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তিনিই আমায় দিয়ে সব কাজ করাচ্ছেন।”
ঈশ্বর তাকে ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য পূরণের জন্য পাঠিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছিলেন মোদী। লোকসভা ভোটের মাঝে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এমন উপলব্ধি এখন জোর চর্চায়।
ষষ্ঠ দফা ভোটে মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আসন হারানোর আশঙ্কা মুখে নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার ফের একই ধরনের কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। ভারতকে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তির দেশে পরিণত করতে ভোটারদের কাছে এবারও বিজেপিকে জয়যুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
২৫ মে ভারতজুড়ে ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে ভোট হবে ৭ টি রাজ্য এবং ১ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৫৮ টি কেন্দ্রে। পশ্চিমবঙ্গের ৮ টি কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে এই দফায়। পাশাপাশি এই পর্বে দিল্লির ৭ টি এবং হরিয়ানার ১০ টি আসনে ভোট হবে।
ভোটের এই আবহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ঈশ্বর প্রেরিত বলার পর তার ‘আবির্ভাব’ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে চলছে তর্ক। কেউ কেউ এমন প্রশ্নও তুলেছেন, “তাহলে কি মোদি তার মাতৃগর্ভকেই অস্বীকার করছেন? পৃথিবীতে নিজের আসা নিয়ে যে অধ্যাত্মবোধের কথা তিনি বলছেন, তা একদিনে হতে পারে না।”
মোদিকে ছেড়ে কথা বলছেন না বিরোধীদলীয় নেতারা। উত্তর-পূর্ব দিল্লির দিলশাদ গার্ডেনে ভোটের প্রচারে গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জনতাকে প্রশ্ন ছোড়েন, তারা মোদির সাক্ষাৎকার দেখেছেন কি না?
রাহুল বলেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী খোলাখুলি বলছেন, তার জন্ম জৈবিক ভাবে হয়নি। তাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছে। যাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তিনি কোভিডের সময় বলছেন, থালা বাজাও। যখন গঙ্গায় লাশ ভাসছে, হাসপাতালের সামনে মানুষ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করছে, তখন প্রধানমন্ত্রী এসে বলছেন, ভাই ও বোনেরা, মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে দাও।
“তার কাছে তরুণরা রোজগার চাইলে তিনি বলছেন, নালায় গ্যাস রয়েছে। সেই নালায় পাইপ ফেললে গ্যাস বের হবে। তিনি শুধু ২২ জন কোটিপতির জন্য কাজ করেন। শুধু আদানি ও অম্বানীর জন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। এসব বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে গেলেও লোকসভা ভোটের ষষ্ঠ দফায় বাস্তবতা হচ্ছে, বিজেপি এ দফায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখোমুখি হবে।
এ দফায় তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর উপর বিশেষ নজর থাকবে। উত্তরপূর্ব দিল্লি আসন থেকে মুখোমুখি লড়াইয়ে থাকছেন বিজেপির মনোজ তিওয়ারি এবং কংগ্রেসের কানহাইয়া কুমার। ওদিকে, পুরী লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন বিজেপি’র সম্বিত পাত্র। বাংলার ঘাটাল থেকে নজর থাকবে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেবের উপর। তমলুকে লড়ছেন বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
ভারতে ৭ দফার লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ হয়েছে ১৯ ও ২৬ এপ্রিলে। ৭, ১৩ ও ২০ মে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ ও পঞ্চম দফার ভোট হয়েছে। ২৫ মে ষষ্ঠ দফা ভোট এবং ১ জুনে সপ্তম দফা ভোট হবে। আর ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :