মোদীর সামনে কঠিন পথ, কংগ্রেস শিবিরে স্বস্তি

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম
মোদীর সামনে কঠিন পথ, কংগ্রেস শিবিরে স্বস্তি

ঢাকা : মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিজেপির জনপ্রিয়তা তুমুল ভাবে হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ২০১৪ সালে ২৮২ ও ২০১৯ সালে ৩০৩টি আসনে এককভাবে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল দলটি। তবে ২০২৪ সালে কঠিন বাধার মুখে পড়েছে দলটি। আগেই ধারণা করা হচ্ছিল, নানা ইস্যুতে মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। তাই এবার তৃতীয় মেয়াদে একক নয় জোট সরকার গঠন করতে হচ্ছে বিজেপিকে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) লোকসভা নির্বাচনের ফল মোদির দল বিজেপি এককভাবে সর্বোচ্চ  ২৪০টি আসন। সংখ্যক আসন পেলেও তাদের এনডিএ তিন শ আসনও ছুঁতে পারল না। তাদের প্রাপ্ত আসন ২৮৬। সরকার গড়লেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদিকে এখন থেকে হতে হবে পরমুখাপেক্ষী। ফলে মোদী সরকারকে প্রধানত নির্ভর করতে হবে তার দুই শরিক নীতীশ কুমারের জেডি–ইউ ও অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) ওপর। এই দুই দলের সম্মিলিত আসন ২৮টি।

আর এবারের লোকসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া জোট’। গত নির্বাচনে চরম ভরাডুবির পর এবার কংগ্রেসের নেতৃত্বে ‘ইন্ডিয়া জোট’ পেয়েছে ২০২টি আসন। স্বাভাবিক ভাবেই বলা যাচ্ছে,  আগামী পাঁচ বছর মোদী ঘাড়ে প্রতিনিয়ত নিঃশ্বাস ফেলবে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া।

এদিকে আবারও টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। এতে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পাশে নিজের নামটি লেখাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তবে সরকার গঠন করতে চললেও বিজেপি পথ মসৃণ নয়। এখানে রয়েছে নানা হিষাব আর কিতাব। কারণ  চন্দ্রবাবু নাইডুর ও নীতীশ কুমারের অতীত রাজনীতি।

এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আগামী দিনগুলোয় প্রশাসক নরেন্দ্র মোদিকে নতুনভাবে আবির্ভূত হতে হবে। সেই ভূমিকা কোনো দিন তিনি পালন করেননি। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সরকার ছিল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। কারও ওপর নির্ভর করতে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও তাঁর নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে কখনো অন্য কারও মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়নি।

২০১৪ সালে সরকার গড়েছিলেন ২৮২ আসন পেয়ে। পাঁচ বছর পর পান ৩০৩ আসন। এবার এক ঝটকায় তা ২৪০– এ নেমেছে। সরকার গড়ার এই যে ৩২টি আসন ঘাটতি, তা মেটাতে হবে জেডি–ইউ, টিডিপি, শিবসেনার শিন্ডে গোষ্ঠী, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি ও উত্তর প্রদেশের জয়ন্ত চৌধুরীর আরএলডির মতো দলগুলোর সমর্থন নিয়ে। এদের কাউকেই উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করার মতো অবস্থায় মোদির বিজেপি থাকবে না; বরং সারাক্ষণ তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। দাবি মানতে হবে। পছন্দের মন্ত্রিত্বও দিতে হবে। না হলে জোট ছাড়ার প্রচ্ছন্ন শঙ্কার মধ্যে থাকতে হবে। নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবুর অতীত মোদির জানা। বারবার তাঁরা জোটে এসেছেন, বেরিয়েও গেছেন।

নাইডু এবার আরও শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান। অন্ধ্র প্রদেশে একার ক্ষমতাতেই সরকার গড়ার মতো অবস্থায় তিনি। মোদি তাকে এতটাই গুরুত্ব দিচ্ছেন যে গণনা চলাকালীনই তাকে ফোন করে জানিয়ে দেন, তার শপথে নিজে উপস্থিত থাকবেন। চন্দ্রবাবু শপথ নেবেন ৯ জুন, ওই দিনটিই মোদী বেছে রেখেছিলেন তৃতীয়বার শপথ নেওয়ার জন্য।

অন্যদিকে কংগ্রেস স্বভাবতই এই ফলে উৎফুল্ল। গতকাল বিকেলে দলীয় দপ্তরে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে পাশে নিয়ে সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ফল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয়। গোটা নির্বাচনটাই বিজেপি লড়েছিল মোদীর নামে। যাবতীয় গ্যারান্টিও দিয়েছিলেন মোদি। এটা ছিল তাঁর পক্ষে অথবা বিপক্ষের গণভোট। জনতা তার বিরুদ্ধেই মত দিয়েছে।

খাড়গে ও রাহুল দুজনেই জানিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে বুধবার (আজ)। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ওয়েনাড ও রায়বেরিলি, দুই জেতা আসনের কোনটি রাখবেন কোনটি ছাড়বেন—সেই সিদ্ধান্তও সবার সঙ্গে আলোচনার পর নেবেন বলে রাহুল জানান। দুই নেতাই বলেন, এই জয় জনতার জয়।

এমটিআই

Link copied!