গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের এক বছর, ধ্বংসস্তূপে পরিণত এক সময়ের নগরী

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৪, ১১:০৮ এএম
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের এক বছর, ধ্বংসস্তূপে পরিণত এক সময়ের নগরী

ঢাকা : গত বছরের এই দিনে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে তারা। এরই জের ধরে ওইদিন থেকে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বর্বর ও নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

গত এক বছরে ইসরায়েলের হামলা ও অভিযানে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। উপত্যকাটির বেশিরভাগই ভবন বিধ্বস্ত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ভয়াবহ যুদ্ধের চিহ্ন বয়ে এখনো ক্ষতিগ্রস্ত ও কোনোরকম দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ভবন রয়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় একসময়ের ব্যস্ত সড়ক এখন ধ্বংসস্তূপে ভরে উঠেছে। সেখানে চলাচল করার মতো অবস্থা নেই। জাতিসংঘের ধারণা অনুযায়ী, গাজায় ৪ কোটি ২০ লাখ টনের বেশি ভগ্নাবশেষ সৃষ্টি হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় গত এক বছরে গাজায় কমপক্ষে ৪১ হাজার ৮৭০ জন নিহত এবং ৯৭ হাজার ১৬৬ জন আহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ধ্বংসাবশেষের নিচে এখনো অনেক মরদেহ চাপা পড়ে রয়েছে। তাদের হিসাবে এ সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হবে।

আন্তর্জাতিক রেডক্রসের হিসেবে, ধ্বংসস্তুপ থেকে বড় ধরণের রোগ বিপর্যয়ের হুমকিতে রয়েছে  ফিলিস্তিন। এছাড়া জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি বলছে, আনুমানিক ২৩ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ দূষিত, যা থেকে নানা রোগ সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, গত বছরে গাজায় তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের শিকার ১০ লাখ মানুষ।

শুধু ধ্বংসস্তুপ বা হতাহত নয়, গত এক বছরে গাজায় চরম মানবিক সংকট তৈরি করেছে ইসরায়েল। দেশটির অব্যাহত হামলা ও অবরোধের কারণে সহায়তা পৌঁছানোও ক্রমে কঠিন হয়ে পড়েছে উপত্যকাটিতে। এক বছরের যুদ্ধে ২২ লাখ ফিলিস্তিনিকে তীব্র খাদ্যসংকটে ফেলে দিয়েছে।

এছাড়া ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় খাদ্যের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিষক্রিয়ায় কৃষিজমি অনাবাদী করে ফেলা এবং খেতখামার, বন্দর ও মাছধরা নৌযানগুলো ধ্বংস করা। এতে গাজার পুরো জনগোষ্ঠী মানবিক ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

এমনকি ইসরায়েল গাজাতে জরুরি ঔষধ ও খাদ্যপণ্যের সরবরাহে বাধা দিয়ে সৃষ্টি করেছে চরম খাদ্য সংকটের। এতে করে অনাহারেও মৃত্যু হয়েছে অনেকের। বিশেষ করে খাদ্যের অভাবে সিমাহীন কষ্ট ভুগতে হয়েছে শিশুদের।

ইসরায়েলের হামলায় অঞ্চলটির শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি ধসে গেছে। প্রায় এক বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অঞ্চলটির ৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।

এদিকে গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধের এক বছর হয়ে গেলেও হামলার পরিমাণ কমায়নি ইসরায়েল। সমানতালে বিমান হামলা চালাচ্ছে উপত্যকাটির বিভিন্ন অঞ্চলে। ইসরায়েলের হামলায় প্রতিদিনই নিহত হচ্ছে মানুষ।

এক বছরেও যুদ্ধ বন্ধ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ। এই যুদ্ধ বন্ধ চান তারা। তাই ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবিতে ফ্রান্সের প্যারিস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ইতালির রোমসহ নানা দেশে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভে কোথাও পুলিশ বাধা দিয়েছে, কোথাও শান্তিপূর্ণ হয়েছে আবার কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এমটিআই

Link copied!