ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানার কয়েক ঘণ্টা পরই রাজ্যটির মধ্যাঞ্চলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় মিল্টন। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেমন্টার জানিয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সিয়েস্তা কি এর কাছে ক্যাটাগরি-৩ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হেনেছে। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার সময় এর বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ মাইল (১৯৫ কিলোমিটার ছিল।
স্থানীয় সময় রাত ১১ টা নাগাদ বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০৫ মাইলে (১৬৫ কিলোমিটার) নেমে আসে। মিল্টন ক্যাটাগরি-২ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। বর্তমানে তা ক্যাটাগরি-১ এ ঘূর্ণিঘড়ে নেমে এসেছে। তবে এখনও তাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির লক্ষ্য ছিল রাজ্যের কেন্দ্রস্থল অরল্যান্ডো থেকে ৭৫ মাইল (১২০ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পশ্চিমে।
এদিকে এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হারিকেন (ঘূর্ণিঝড়) মিল্টন দুর্বল হচ্ছে। এখন এটি ক্যাটাগরি ওয়ানের একটি হারিকেনে পরিণত হয়েছে। তবে দুর্বল হলেও এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে তাণ্ডব অব্যাহত রেখেছে ভয়ংকর এই ঘূর্ণিঝড়। এরই মধ্যে ২২ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃত্যুর খবরও আসছে।
মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মিল্টন আরও দুর্বল হয়ে এখন ক্যাটাগরি ওয়ান হারিকেনে পরিণত হয়েছে। এটি ফ্লোরিডার মিল্টন কেপ ক্যানাভেরাল থেকে ১০৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। সেখানে সর্বাধিক ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় সময় বুধবার (৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হারিকেন মিল্টন ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে সারাসোটা কাউন্টির সিয়েস্তা কি এলাকায় ভূভাগে আছড়ে পড়ে। তারপর থেকে এটি শক্তি হারাতে শুরু করে। আঘাত হানার সময় তিন মাত্রার হারিকেন থাকলেও এখন এটি এক মাত্রার হারিকেন।
আলজাজিরার খবর অনুযায়ী, হারিকেন মিল্টনের কারণে সৃষ্ট একাধিক টর্নেডোর আঘাতে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূলের সেন্ট লুসিতে প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
সেন্ট লুসি কাউন্টির শেরিফ কিথ পিয়ারসন স্থানীয় এবিসি নিউজ অ্যাফিলিয়েটকে বলেছেন, প্রাণহানি হয়েছে। অনুসন্ধান ও উদ্ধার দল স্প্যানিশ লেক সাইটে রয়েছে। তবে কতজন মারা গেছেন সেটা বিস্তারিত বলেননি তিনি।
এদিকে পাওয়ারআউটেজ ডট ইউএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ফ্লোরিডায় প্রায় ২২ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন রয়েছে। রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা।
হারিকেন মিল্টনের আঘাতে ফ্লোরিডায় বড় ধরনের হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আগে থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণটা শত বিলিয়ান মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদিও ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে ওই রাজ্য ছেড়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যানটিস জানান, দানবীয় এই হারিকেনের কবল থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁচাতে নিরাপদ এলাকায় কয়েক ডজন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সংকটময় পরিস্থিতিতে লুটপাট ঠেকাতে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ কথা (লুটপাট) চিন্তাও করবেন না। ঘরেই থাকুন। এমন কাজ করলে পরে অবশ্যই পস্তাতে হবে।’
মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগেই ভয়াবহ হারিকেন হেলেন দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রে তাণ্ডব চালিয়েছে। ২০০৫ সালে আঘাত হানা হারিকেন ক্যাটরিনার পর থেকে মার্কিন মূল ভূখণ্ডের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঝড় এটি। এতে অন্তত ২২৫ জন মানুষ নিহত হন। শত শত মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। শুধু ফ্লোরিডায় অন্তত ১৪ জন মারা গেছেন।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :