গাজায় ১৫ মাসের ধ্বংসযজ্ঞ দশ বছরেও পূরণ হবে না

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম
গাজায় ১৫ মাসের ধ্বংসযজ্ঞ দশ বছরেও পূরণ হবে না

ঢাকা : ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে গাজায়। সহিংসতার অবসানের জন্য ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু ১৫ মাসের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে গাজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুনর্গঠনে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণের পর থেকে এই সংঘাতের শুরু হয়েছিল। হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিশোধ নিতে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ইসরায়েল। সেখানে মানবিক সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ৪৬ হাজার ৭৮৮ জনের মৃত্যুর হিসাব পেয়েছেন। হাসপাতাল এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই সংখ্যা তৈরি করেছেন তারা।নভেম্বরে জাতিসংঘের বিশ্লেষণে নিহতের মধ্যে নারী এবং শিশুর সংখ্যা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, এক লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন ফিলিস্তিনি এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে জানায়, এই আহতদের মধ্যে ২৫ শতাংশের আঘাত এতোটাই গুরুতর যে তাদের জীবন আর আগের অবস্থায় ফিরবে না। তবে ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে সম্প্রতি একটি প্রবন্ধে বলা হয়, নিহতের সংখ্যা মন্ত্রণালয়ের হিসাবের চাইতেও উল্লেখযোগ্য হারে বেশি হতে পারে।

এই সংঘাতে গাজার অবকাঠামোগত ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। সিএনওয়াই গ্র্যাজুয়েট সেন্টারের অধ্যাপক কোরি শের এবং ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জামন ভ্যান ডেন হোক স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে গাজার ক্ষয়ক্ষতির পরিসর যাচাই করেছেন।

১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণে তারা অনুমান করেছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ৫৯ দশমিক আট শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহুরে এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে এবং কিছু অবকাঠামোয় একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে।

জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টারের (ইউএনওস্যাট) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শুরুতে গাজার ৬৯ শতাংশ ভবন ও স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসাথে গাজার রাস্তাঘাটের ৬৮ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যে বলা হয়েছে, গাজার ৫০ শতাংশ হাসপাতাল এখন বন্ধ গেছে। বাকি হাসপাতালগুলোয় আংশিকভাবে কাজ চলছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী চলমান সংঘাতে অন্তত এক হাজার ৬০ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় দশ লাখ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজন যা মোকাবিলা করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।

গাজার শিক্ষার খাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আইডিএফ জানায়, তারা জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে ৪৯টি স্কুল ভবনে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু স্কুল ভবনে হামলায় যে ক্ষতি হয়েছে তা গাজায় শিক্ষা স্বাভাবিক করতে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে।

গত মে মাসে জাতিসংঘ অনুমান করেছিল যে, গাজা পুনর্গঠনে ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলার খরচ হতে পারে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার সমন্বয় অফিস-ওসিএইচএ ধারণা করছে, গাজায় অন্তত ১৯ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে যা কিনা গাজার মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ।

গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় সবাইকে বাড়িঘর ছেড়ে যেতে হয়েছে, কারণ ইসরায়েল টানা আক্রমণ চালিয়েছে এবং বড় আবাসিক এলাকাগুলো দ্রুত খালি করার নেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল।

সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা থেকে মানুষকে সরে যেতে বলা হয়। কারণ ইসরায়েল উত্তর গাজায় বড় আকারে হামলা চালায়।

জাতিসংঘের ধারণা, ৯১ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে আছে। এই সংকটগুলোর মধ্যে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কৃষিজমির ক্ষতি। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে যে, গাজার ৬৭ দশমিক ছয় শতাংশ কৃষিজমি গোলাবর্ষণ, যানবাহনের চলাচল ও অন্যান্য সংঘর্ষজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত কয়েক মাসে গাজায় পৌঁছানো ত্রাণ সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হরে কমে গেছে। আগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় ঢুকত। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ত্রাণ আসা কমে গিয়েছে যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

জাতিসংঘের ধারণা, প্রায় ১৯ লাখ মানুষের জরুরি আশ্রয় এবং প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সামগ্রীতে প্রয়োজন। যুদ্ধবিরতি হয়তো ত্রাণ পৌঁছানো সহজ করবে, কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো, গাজা কীভাবে আবার গড়ে তোলা হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমটিআই

Link copied!