ঢাকা: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ৩০ মার্চ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ৩০ এপ্রিল আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এর এক মাসের মধ্যে নিয়োগের কথা থাকলেও হাইকোর্টের রায়ের কারণে নিয়োগ স্থগিত হয়ে আছে। তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) মোমিনুর রশিদ আমিন জানিয়েছেন, তারা এ সপ্তাহের মধ্যেই শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করতে চান।
শনিবার (১৯ জুন) মোমিনুর রশিদ আমিন গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমাদের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করা হয়েছে। আগামী সোমবার আপিলের শুনানি হওয়ার কথা। সেদিনের শুনানি যদি এনটিআরসিএর পক্ষে আসে, তাহলে দু-একদিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা সম্ভব। কারণ, ফল প্রকাশের সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, খুব দ্রুতই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে। কারণ, স্কুলগুলোতে অনেক শিক্ষক ঘাটতি আছে। আমরা সেগুলো পূরণ করতে চাই। কিন্তু, এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাই মেধাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে। শিক্ষক নিয়োগের গাইডলাইনে জাতীয় মেধাক্রমের ভিত্তিতে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। যাদের রেজাল্ট ভালো, তারাই আগে নিয়োগ পাবেন। এতে তুলনামূলক বেশি নাম্বারধারী নিবন্ধিতরা উপযুক্ত জায়গায় যেতে পারবেন।’
কম্বাইন্ড লিস্টের কথা উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) বলেন, ‘এখন কেউ যদি ৪০ মার্ক পেয়ে নিয়োগের জন্য রিট করেন, তাকে নিয়োগ দিলে যিনি ৮০ মার্ক পেয়েছেন, তিনি বঞ্চিত হবেন। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন রিটকারী দেড় হাজার শিক্ষককে ৪ সপ্তাহ অর্থাৎ জুনের মধ্যে নিয়োগ দিতে। কিন্তু, সে আদেশ অনুযায়ী নিয়োগ দিতে গেলে জাতীয় মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার এ দেড় হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিলে আরও অনেকেই রিট করবেন। তখন বিষয়টি আরও বেশি গোঁজামিল হয়ে যাবে। তাই এনটিআরসিএর পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে।’
মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, ‘এর আগেও কম্বাইন্ড লিস্ট থেকে জাতীয় মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এতে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় প্রকৃত মেধাবীরা নিয়োগ পেয়েছেন। আমরা আশা করছি, আপিলের রায় এনটিআরসিএর পক্ষে আসবে। যাদের নাম্বার বেশি আছে. তারা নিয়োগ পাবেন। শুনানি হলে দু-একদিনের মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ লাগতে পারে। কারণ সবকিছুই রেডি। সফটওয়্যারেই নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হবে। সেখানে আমাদের কারো হাত থাকবে না। আমরা চাই না, যাদের নাম্বার বেশি আছে, তারা কোনোভাবেই বঞ্চিত হোক। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেশি নাম্বারধারীরা জাতীয় মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ পাবেন।’
২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে একটি রায় দিয়েছিলেন। ওই রায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল— সম্মিলিত মেধাতালিকা অনুযায়ী রিট আবেদনকারী (১ থেকে ১২তম নিবন্ধনধারী) এবং অন্যান্য আবেদনকারীদের নামে সনদ জারি করতে হবে। কিন্ত ২ বছরেও রায় বাস্তবায়ন না করায় রিট আবেদনকারীরা আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেন। সে আবেদনের শুনানি করে ২০১৯ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ৫৪ হাজার পদে নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। এরপর নিয়োগ থেকে বিরত থাকতে একটি আবেদন করেন রিটকারীরা। হাইকোর্ট গত ৬ মে এ রিটকারীদের পক্ষে রায় দেন এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের নির্দেশ দেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৩ জুন আপিল করে এনটিআরসিএ। আগামী সোমবার এ আপিলের শুনানির কথা রয়েছে। শুনানি এনটিআরসিএর পক্ষে আসলে এ সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘রিটকারীদের পক্ষে আদালত যে রায় দিয়েছেন, সেটি চ্যালেঞ্জ করে আমরা আপিল করেছি। সোমবার আপিলের শুনানি কথা রয়েছে। শুনানিতে রায় আমাদের পক্ষে থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। আদালতের স্থগিতাদেশ পেলে চলতি সপ্তাহেই গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করা যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিপ্রত্যাশী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি শান্ত আহমেদ বলেন, ‘সারা দেশের বেকার নিবন্ধিত শিক্ষকরা আর বসে থাকবেন না। তারা বুঝে গেছেন, তাদের আর বসে থাকলে হবে না। নিবন্ধনধারীদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। আমাদের এক সপ্তাহের মধ্যে সুখবর দেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেনি এনটিআরসিএ।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশ থেকে নিবন্ধনধারীরা দাবি আদায়ে সোচ্চার হচ্ছেন। যেহেতু, কষ্টের টাকায় আবেদন করেছে, সেহেতু গণবিজ্ঞপ্তির ফলের জন্যও রাজপথে নামতে প্রস্তুত। আর বসে থাকবে না কেউ। যৌক্তিক দাবি আদায়ে বৃহত্তর কর্মসূচি আসবে শিগগিরই।’
সোনালীনিউজ/এমএইচ
আপনার মতামত লিখুন :