ঢাকা: নাক দিয়ে শ্বাস নিলে বাইরের বাতাসে শরীরে তাপমাত্রা চলে আসে। মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে যা সম্ভব নয়। কিন্তু নাক দিয়ে শ্বাস নিলে বাতাসে থাকা বড় বড় পার্টিকেল ফিল্টার হয়ে যায়, মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে সেই ব্যবস্থা নেই। ফলে নাক বন্ধ হয়ে গেলে সাময়িকভাবে মুখ দিয়ে শ্বাস বায়ু নিলেও তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এটি অনেক কারণে আপনার নাক বন্ধ হতে পারে। আর নাক বন্ধ হলে আমরা মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিই। কিন্তু এটা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা কি একবার ভেবে দেখেছেন? আর মুখ দিয়ে শ্বাস নিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো? আর যদি এ রকম কারও হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করলেন রুবি হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. শুভ্রজিৎ দাস।
তিনি বলেছেন, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে প্রায়ই নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। নাকের অভ্যন্তরের ঝিল্লিগুলোর প্রদাহ সৃষ্টি হয় বা নাকের হাড়ের গঠনগত সমস্যা থাকলে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন স্বাভাবিকভাবেই মুখ দিয়ে শ্বাসবায়ু নিতে হয়, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও উপযুক্ত নয়।
নাসাপথের ঝিল্লিগুলোতে অস্বস্তির ফলে নাকে যে গুমোট ভাব তৈরি হয়, তাকে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বলা হয়। অনেক কারণে নাক বন্ধ হওয়ার উপকরণ থাকতে পারে। সেই কারণগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ১. গঠনগত সমস্যা। ২. কার্যকরগত সমস্যা।
সেসব সমস্যা হলো এ রকম—
১. নাকের হাড় বাঁকা থাকলে শ্বাসগ্রহণে সমস্যা হয়।
২. সাধারণত ঠান্ডা লাগা।
৩. ফ্লু অথবা সাইনাসের সংক্রমণ।
৪. অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসা।
৫. গরম ও শুষ্ক বাতাসে শ্বাস নেওয়া।
৬. অ্যালার্জির সঙ্গে সম্পর্কিত হাঁচি।
৭. মসলাদার খাবার খাওয়া।
৮. মদপান করা।
৯. সিগারেট খাওয়া অথবা শিল্পজাত ধোঁয়া প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে নেওয়া।
১০. নাকের অঙ্গসংস্থানগত সমস্যা। যেমন— বিচ্যুত নাসামধ্য পর্দা।
১১. ডিকঞ্জেস্ট্যান্টের অতিরিক্ত ব্যবহার।
১২. ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা।
১৩. নাসাপথে সৃষ্ট পলিপ।
১৪. হরমোনের পরিবর্তন।
১৫. শ্বাসকষ্ট
১৬. রক্তচাপ, সিজার এবং ডিপ্রেশনের জন্য ব্যবহৃত কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ।
১৭. সাইনোসাইটিস
এবার আপনি বন্ধ নাসাপথ কীভাবে খুলবেন, তা জেনে নিন
১. আর্দ্রকারী পদার্থ: শুষ্ক হাওয়া নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এখন কিন্তু আবহাওয়ায় শুষ্কতা বা দূষণ বেশি। তাই আর্দ্রতা কম। ক্রমাগত আর্দ্রকারী পদার্থ ব্যবহার করলে নাকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
২. প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাষ্প গ্রহণ করা: যাদের নাক দিয়ে পানি পড়া বা সর্দি হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে ভেপার নেওয়া উপকারী। কী করে নেবেন? বেসিন বা বড় বাটিতে ফুটন্ত পানি রাখুন এবং এটিকে একটি টেবিলে রেখে দিন। তারপর টেবিলের কাছে একটি চেয়ারে বসুন এবং আপনার মুখটিকে বেসিন বা বাটির ওপর নিয়ে আসুন। ৫-১০ মিনিটের জন্য সাধারণভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিন। এ ছাড়া আপনি যে কোনো ওষুধের দোকান থেকে একটি স্টিম কাপ কিনতে পারেন।
৩. আর্দ্রতা: পানি পানের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। আর্দ্র থাকলে আপনার দেহের ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে শরীর থেকে সহজে বার করে দিতে পারে এবং আপনার সাইনাস থেকে শ্লেষ্মাগুলোকে পরিষ্কার করে দেয়। স্যুপ ও ব্রথের মতো গরম পানীয় পান করলে তা নাকের বন্ধ পথ খুলে দেয়।
৪. গরম সেঁক দেওয়া: একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন এবং পানি থেকে বার করে নিংড়ে নিন। এরপর নাকের ওপর দিয়ে এই উষ্ণতা তোয়ালেটিকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য রাখুন। বেশ কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন।
৫. অ্যালার্জির চিকিৎসা করুন: নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য মূল দোষী হলো অ্যালার্জেন। যে অ্যালার্জেনের কারণে আপনার নাক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেটি খুঁজে বার করুন এবং সেটি থেকে দূরে থাকুন। অ্যালার্জির ওষুধের জন্য একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৬. উত্তোলন পন্থা ব্যবহার: যখন ঘুমাবেন, তখন মাথাটিকে কিছুটা উঠিয়ে রাখুন। ফলে শ্বাস নিতে সুবিধা হবে। আপনার মুখের ওপর একটি গরম তোয়ালে রাখতে পারেন, যাতে আপনি সহজে শ্বাস নিতে পারেন।
৭. নাকের ড্রপ ব্যবহার করুন: ডিকঞ্জেস্ট্যান্ট স্প্রে ও ড্রপ বন্ধ হয়ে যাওয়া নাকের জন্য খুবই কার্যকরী। এটি নাক খুব তাড়াতাড়ি খুলে দিতে সাহায্য করে কিন্তু এগুলো সর্বাধিক পাঁচ থেকে সাত দিনের জন্যই কেবল ব্যবহার করা উচিত। যদি তার থেকে বেশি সময় ধরে এটি ব্যবহার করা হয়, তবে এটি পুনরায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা ও ডায়েট ফলো করা দরকার। তারপরও সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ইউআর
আপনার মতামত লিখুন :