ঢাকা : ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ বৈঠকটি স্থগিত করা হয়েছে। ফলে ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর চুক্তি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার ভার্চুয়াল বৈঠকটি ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ১৬ ডিসেম্বর বা ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন চুক্তির প্রত্যাশা বাংলাদেশের। যদিও এ ধরনের কোনো চুক্তি বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে আদৌ থাকছে কি না, সে বিষয়ে এই আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা এখনো নিশ্চিত নন।
এরই মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ভার্চুয়াল এই বৈঠকের সময় ৪টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। তবে, সমঝোতা চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে কিছু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। তবে এসব চুক্তির বিষয়ে এখনো নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনার আগে বৈঠকের এজেন্ডা চূড়ান্ত করতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের নয়াদিল্লি সফর করার কথা ছিল। কিন্তু পররাষ্ট্র সচিবের করোনা পজিটিভ আসায় তার ভারত সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
নিয়ম অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ২৯ নভেম্বর ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি স্থগিত করা হয়েছে। করোনার কারণে ভারতের প্রতিনিধি দল আসছেন না। ফলে নির্ধারিত সময়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের এজেন্ডা আগেই চূড়ান্ত করা হয়। এরপর ওই এজেন্ডার আলোকে বৈঠকের আলোচনা চলে। পররাষ্ট্র সচিবের অনুপস্থিতিতে এজেন্ডা নির্ধারণে বিকল্প ব্যক্তির কথা ভাবছে ঢাকা।
ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের প্রসঙ্গ এলেই তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিচুক্তির বিষয়গুলো উঠে আসে। গত বছরের অক্টোবরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বিষয়টি অমীমাংসিত থাকার পর পরবর্তী বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
এরমধ্যে দুই মাস আগে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে ৬ষ্ঠ যৌথ পরামর্শ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকেও অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয় অনির্ধারিত ইস্যু হিসেবে স্থান পায়। কথা ছিল চলতি বছরে ডিসেম্বরে মন্ত্রী-পর্যায়ে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে সাতটি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু এই বৈঠক বাতিল হওয়ার পর অভিন্ন নদীর চুক্তির বিষয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।
যদিও এই বিষয়ে একমাত্র আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে চলতি বছরের মার্চে সরকারি সফরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার আশ্বাস।
শ্রিংলা বলেছিলেন, ‘উভয় দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও ন্যায্যবণ্টন করার মধ্যেই আমাদের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ নিহিত।
আমি বলতে পেরে খুশি হচ্ছি যে, আমাদের দুই পক্ষই স্বীকার করে, অভিন্ন নদী বিষয়ে আমাদের আরো উন্নতির সুযোগ আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আগস্ট ২০১৯ থেকেই দুপক্ষের মধ্যে সংলাপ শুরু হয়েছে।’
জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে অনুষ্ঠিত এই সংক্রান্ত দুই দেশের বৈঠকে অভিন্ন সব নদীর বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিশেষ করে ২০১৭ সালের এপ্রিলে দিল্লিতে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত ছিল, তা পর্যালোচনা করা হয়। পাশাপাশি কথা হয় দুই দেশের অভিন্ন সব নদীর ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়েও। দীর্ঘ ৯ বছর দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়নি।
সর্বশেষ গত বছর বৈঠক হয়। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানের কারণে অমীমাংসিত অনেক বিষয়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকের পর গত এক বছরে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে একটি সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব। কারণ প্রস্তুতির জন্য আরো কয়েকদিন সময় হাতে রয়েছে। তবে, বিষয়গুলো নির্ভর করছে দুই পক্ষের ওপর।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, দুই দেশের সচিব পর্যায়ের সর্বশেষ বৈঠকে ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গা নদীর পানি বাড়ানো, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত নদীর ভাঙন রোধসহ পানি ব্যবস্থাপনার বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। পাশাপাশি ধরলা, দুধকুমার, মনু, খোয়াই, গোমতী, মুহুরী নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনার আগ্রহ দেখানো হয়। এই ছয় নদীর পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এখনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
সামগ্রিক বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বৈঠকের এজেন্ডা নির্ধারণের আগে এই বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মোট ৫৭টি অভিন্ন নদী আছে। যার মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি বাংলাদেশে আসে।
এরমধ্যে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে প্রবাহিত হয় ৬০ শতাংশ পানি। ৩০ শতাংশ পানি আসে গঙ্গা-পদ্মা নদী দিয়ে। বাকি ১০ শতাংশ আসে অন্যান্য নদী দিয়ে। ১ হাজার ২০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানির মধ্যে জুন থেকে সেপ্টেম্বরে আসে ৮০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি। আর অক্টোবর থেকে মে মাসে আসে ৪০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :