ঢাকা : ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১। এদিন হেমন্তের সূর্যোদয়ের পর সকালটা শুরু হয় বাংলাদেশের নতুন পরিচয় দিয়ে— বাংলাদেশ এখন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। এরই মধ্যে ভুটান স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
এদিকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, স্বীকৃতির তিলক বাংলাদেশের ললাটে। বাংলাদেশের আজ বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। সূর্যোদয়কে যাহারা অস্বীকার করে, তাহারা অন্ধ মাত্র, অস্বীকৃতির দৃষ্টিহীনতা সকালের রশ্মিজলকে মিথ্যা করিয়া দিতে পারে না।
বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এক যুক্ত তারবার্তায় বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষার সংগ্রাম ও গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্তে আমাদের আবেগাপ্লুত চিত্তের অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যশোরের সর্বত্র উত্তোলিত করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
এদিন ভারতীয় বেতার কেন্দ্র আকাশবাণী থেকে রাত ১০টায় হিন্দি, উর্দু ও পশতু ভাষায় ভারতের সেনাধ্যক্ষ জেনারেল মানেকশ’ বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তোমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য তোমাদের ঘিরে রেখেছে। তোমরা যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছ, তারা তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। অনেক দেরি হওয়ার আগেই তোমরা আত্মসমর্পণ কর।’
রণাঙ্গনে বিজয়ের বেশে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের আরও উৎসাহ দেওয়ার জন্য-স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত দেশাত্মবোধক ও যুদ্ধের গান বাজতে থাকে...। এই দিনে মুক্ত হয় দেশের বেশ কয়েকটি জেলা।
বাংলার দামাল ছেলেরা একের পর এক সফল অপারেশনের মাধ্যমে পাকবাহিনীকে পরাজিত করে এগিয়ে যেতে থাকে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে। ৭ ডিসেম্বর সকালে সেখান থেকে কয়েকজন রাজাকারকে গ্রেফতার করে মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীন হয় নোয়াখালী।
যুদ্ধের শুরু থেকেই নোয়াখালীর পিটিআই স্কুলটি শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলে পাকবাহিনী। ৬ ডিসেম্বর ভোরে ঘাটিটি ঘেরাও করে মুক্তিবাহিনী। দিনভর সম্মুখ যুদ্ধের পর রাতের আঁধারে পালিয়ে যায় পাকবাহিনী।
এদিকে, একই দিনে ৮ ও ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাস্ত হয় পাকবাহিনী। সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে দেবহাটা উপজেলার শ্রিপুর ও ভোমরা সীমান্তে যুদ্ধে পাকবাহিনীর সাড়ে তিন’শ সদস্য মারা যায়।
এছাড়া শেরপুর, হবিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় ১৯৭১ এর ৭ ডিসেম্বর বিজয়ের পতাকা ওড়ায় মুক্তিবাহিনী।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :