সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন বণ্টনের দাবি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২০, ১১:১৪ এএম
সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন বণ্টনের দাবি

ঢাকা : সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে আনা হচ্ছে করোনা মহামারীর ভ্যাকসিন। এর জন্য সরকার চুক্তিও করেছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবেও ভ্যাকসিন আনা হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

দেশে যেভাবেই ভ্যাকসিন আনা হোক না কেন, তা যেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় বণ্টন করা হয়, এমনই দাবি বিশেষজ্ঞদের।

করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত পুরো পৃথিবী। ভ্যাকসিন পেতে মরিয়া সবাই। প্রথম ধাপে ভ্যাকসিন পেতে তৎপর বাংলাদেশ সরকারও।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার, বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা ও ভারতের কোম্পানি সিরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড আস্ট্রজেনেকা করোনা ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।

এর বাইরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়তো ভ্যাকসিন আসবে। সেক্ষেত্রে বণ্টন ব্যবস্থা কী হবে তা জানতে চান বিশেষজ্ঞরা। কারণ বেসরকারিভাবে আনা করোনা ভ্যাকসিন মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র আশ্বাস্ত করেছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভ্যাকসিন হাতে আসবে। প্রথম ধাপে ২০ শতাংশ মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে ভ্যাকসিন।

আরো পড়ুন : ভ্যাকসিন নিয়ে প্রতারণার শঙ্কা

মহামারী থেকে বাঁচতে বিশ্বের অনেক দেশ টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। এদের বড় অংশের এখনো মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হয়নি। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করা টিকাগুলো পশু বা প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করে এর কার্যকারিতা যাচাই করছেন। একে বলা হয় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এর পর মানুষের ছোট একটি গ্রুপের ওপর টিকা প্রয়োগ করে দেখবেন এটা নিরাপদ কিনা।

পাশাপাশি এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কতটা প্রভাব ফেলে, তাও যাচাই করা হবে। দশের অধিক টিকা রয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে। এসব টিকা কতটা নিরাপদ, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। কয়েকশ মানুষের ওপর টিকার পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এর নিরাপত্তা আর সঠিক মাত্রা নিরূপণের চেষ্টা করছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের (সেবা) সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ভ্যাকসিন আনার জন্য প্রাথমিকভাবে যে কাজগুলো করা দরকার সেগুলো আমরা করছি। কোল্ড চেইন কীভাবে আমরা মেইন্টেইন করবো, ডিস্ট্রিক লেভেল পর্যন্ত সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।

যে স্টোরজের সক্ষমতা আছে, তার বিকল্পও আমরা ভাবছি। যেখানে স্টোরেজের ব্যবস্থা হবে, সেখানে আমরা করবো। দুই থেকে আট তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। আশা করছি ফেব্রুয়ারিতে আমরা ভ্যাকসিন হাতে পাব।

ভ্যাকসিন যে প্রক্রিয়াই আসুক, তা সরকারি ব্যবস্থাপনায় বণ্টনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অনেকেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ভ্যাকসিন তো কোনো ব্যবসায়িক পণ্য না, এটি মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য একটি উপকরণ। এটিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দিলে বিশৃঙ্খলা তৈরি সম্ভাবনা থাকবে।

যাদের অর্থবিত্ত আছে, তারা ভ্যাকসিন কিনে আগে নেবে, যে মানুষগুলো বিত্তহীন তারা পরে পাবে। একটা বৈষম্য তৈরি হবে। এতে প্রকৃত পক্ষে যাদের ভ্যাকসিন দরকার তারা বঞ্চিত হবে। এমন যদি হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

ভ্যাকসিন যেভাবেই আসুক নিজে ব্যবস্থাপনায় রেখে বণ্টন করা উচিত সরকারের। আমরা প্রত্যাশা করব বাংলাদেশে কেউ ভ্যাকসিন নিয়ে বিজনেস করবে না। বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন আনা বিভ্রান্তিমূলক হবে।

সরকার গণমানুষের স্বার্থে ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য আউটলেট হিসেবে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে পারে। তবে তা হতে হবে সরকার নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি ইচ্ছেমতো নিজেদের মধ্যে বিতরণ করে তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। ভ্যাকসিনের অপব্যবহার এবং ছিনতাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এসেনশিয়াল ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন না দেওয়ার মানে হলো, সে নিজে শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়, তার সঙ্গে আরো অনেকেই আক্রান্ত হবে। কারণ তাকে অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। অতএব তার দ্বারা অনেক মানুষের আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি দেখা দেবে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সমীর সাহা বলেন, সরকারের তো একটা চিন্তা আছে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও দেশে ভ্যাকসিন আসবে। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে কোনো প্রতিষ্ঠান এনে সরকারকে দেবে। সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তা বণ্টন করবে। প্রথমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা ধরে নির্দিষ্ট মানুষদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কিন্তু তালিকার বাইরে কেউ যদি নিজ অর্থায়নে ভ্যাকসিন নিতে চায়, তাকে তো সে সুযোগ দেওয়া উচিত।

এমনও হতে পারে, কোনো ব্যক্তির ভ্যাকসিন প্রয়োজন, কিন্তু তিনি অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। সে ক্ষেত্রে তো বেসরকারিভাবে কেনা ছাড়া তার কোনো গন্তব্য থাকবে না। আর ভ্যাকসিন বণ্টনে কতগুলো পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে দেশে যে টিকাগুলো দেওয়া হয় তা শিশুদের। কিন্তু করোনা ভ্যাকসিন তো ১৮ কোটি মানুষকেই দিতে হবে। একসঙ্গে সবাইকে টিকা দেওয়া অসম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন ধরে প্রথমে ২০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এতে অগ্রাধিকার পাবে করোনার ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা, স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্মী, বয়স্করা।

এ বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন আসলে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে কি না বলা মুশকিল।

ব্যবসায়ীদের অনেকেই মুনাফা বোঝে, মানুষের জীবনের মূল্য বোঝে না। তবে সব ব্যবসায়ী এক রকম না। আর এখন তো ভ্যাকসিনের খুব ডিমান্ড। সরকার যদি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভ্যাকসিন বণ্টন না করে, তাহলে নকল ভ্যাকসিন বাংলাদেশেই তৈরি হবে। দেশে নকল ওষুধ তৈরি করার কারখানা অনেক আছে। এটা নিয়ে সরকারের ভাবা দরকার।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!