সরকারি কর্মচারিদের দুঃখের কথা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১, ১১:২৯ এএম
সরকারি কর্মচারিদের দুঃখের কথা

ঢাকা: এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের ডাল, ভোজ্যতেল, আদা-রসুন-পেঁয়াজ, হলুদ-মরিচ, চিনি-লবণ দাম বেড়েছে। গরুর মাংস ও মুরগির দামও বেড়েছে। বাড়তি দরে পণ্য কিনতে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠেছে নিন্ম গ্রেডের কর্মচারীদের।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ১৬ ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে প্রতি কেজি ছোট দানা মসুর বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। প্রতি কেজি মুগ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা।

খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৬ টাকা, এক মাস আগে যা বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬২০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকা।

প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১০৭ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০২ টাকা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম  বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এরপর নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে নিু আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। তিনি আরও বলেন, বাজার নজরদারির জন্য আমরা সব সময় বলে আসছি; কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

কী কারণে দাম বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এক্ষেত্রে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

টিসিবির তথ্যমতে সোমবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৫ টাকা, এক মাস আগে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি হয়, এক মাস আগে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হয় ৩০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা। দেশি হলুদ বিক্রি হয় ২৪০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকা।

প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৯২০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৬০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকা।

প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ ও দেশি মুরগি বিক্রি হয় ৪৫০ টাকা, এক মাস আগে ১৩৫ ও ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পাশাপাশি প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা ও প্রতি কেজি খেজুর (সাধারণমানের) বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বর্তমানে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মূল বেতন ৮২ হাজার টাকা। এছাড়াও তিনি বাসা ভাড়া হিসেবে পাচ্ছেন ৪১ হাজার টাকা। গাড়ী রক্ষণাবেক্ষনের জন্য পাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা। রান্না করার জন্য বাবুর্চির বেতন এবং দারোয়ানের জন্য পাচ্ছেন ১৬ হাজার করে। টেলিফোন বিল এবং সভার সম্মানিসহ মাসে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা পাচ্ছেন তিনি। বছরে তিন থেকে পাঁচটি বিদেশ সফরে পান অতিরিক্ত কয়েক লাখ টাকা।

অথচ ২০ তম গ্রেডের একজন কর্মচারী সর্বসাকুল্যে বেতন পাচ্ছেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই তাকে বাড়ীভাড়া, খাবারসহ সব ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎবিল, গ্যাসবিলসহ সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে ৭ হাজার টাকা। এর পর পুরো মাসের খরচ চালানোর জন্য তার হাতে থাকে মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তাকে পুরো মাসের সংসারের খরচ, পরিবারের কাপড়সহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হয়। এর বাইরে তার আয়ের আর কোনো উৎস নেই। বেতনের আকাশ পাতাল বৈষম্য থাকলেও দৈনন্দিন খরচে নেই খুব বেশি পার্থক্য। ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের মাসের ১৫ দিন না অতিবাহিত হতেই শুরু হয় টানাটানি। সংসারের খরচ নির্বাহ করতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই স্ত্রী সন্তানকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। 

পে-স্কেল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০ থেকে ১১তম গ্রেডের কর্মচারীদের মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকায় শুরু হয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় শেষ হয়। এই ১০টি গ্রেডের বেতন স্কেলের মোট পার্থক্য ৪২৫০ টাকা। পাশাপাশি ১০ থেকে প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে ৭৮ হাজার টাকায় শেষ হয়। এই ১০টি গ্রেডের পার্থক্য ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে গাড়ি, আবাসনসুবিধা, সুদমুক্ত গাড়ির ঋণসহ নানাবিধ সুবিধা। অথচ প্রত্যেকে একই বাজারব্যবস্থার কাঠামোর আওতায় জীবন ধারণ করেন, এতে শ্রেণীবৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে নানাভাবে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সরকারি কর্মচারীরা। তারা পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বহুবার। মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন দীর্ঘদিন।

সোনালীনিউজ/এইচএন

জাতীয় বিভাগের সাম্প্রতিক খবর

Link copied!