ভারতীয় ধরন ছড়ানোর শঙ্কা

  • রংপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৬, ২০২১, ০৪:০৩ পিএম
ভারতীয় ধরন ছড়ানোর শঙ্কা

রংপুর : সম্প্রতি ভারতে অতি সংক্রমণশীল নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে দেশটিতে করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এর প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও এমন শঙ্কায় বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। তবে এ সময় স্থলপথে পণ্যবাহী ও পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন পাথর বোঝাই ১২৫টি ট্রাক ও কুড়িগ্রামের রৌমারী নতুন স্থলবন্দর দিয়ে ২৫টি, লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ৩৫০,  পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা দিয়ে ৩৫০ এবং দিনাজপুরের হিলি পানামা স্থলবন্দর দিয়ে এখন প্রতিদিন ১৭০টি ট্রাক আসছে। অর্থাৎ প্রতিদিন কম্পক্ষে ৯৭০টি ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করে বাংলাদেশে। প্রতিটি ট্রাকে একজন চালক ও একজন সহকারি থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় এসব ট্রাকে থাকা চালক ও সহকারীরা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা মানছেন না। বাংলাদেশিদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন।

কাস্টম কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পণ্যবাহী ও পাথর বোঝাই ভারতীয় ট্রাকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর কাস্টমস কর্তকর্তারা কাগজ যাচাই বাছাই করেন। তখন ট্রাক চালক ও সহকারীরা গাড়িতেই অবস্থান করে। এরপর ওই ট্রাকগুলো যখন ডিপোতে যায় তখন ট্রাক আনলোড করতে অনেক সময় লেগে যায়। এই দীর্ঘ সময়টা তারা থাকছেন বাংলাদেশেই। হরহামেশাই মেলামেশা করছেন বাংলাদেশি শ্রমিক ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের কয়েক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, ভারতীয় এই ট্রাক চালকদের দিয়ে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ট্রিপল ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। ওই এলাকাগুলোতে সংক্রমণ বাড়লে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে গোটা দেশে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে যাতে ভারতীয় এই ভয়াবহ ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে না পারে এবং বন্দরের আশপাশসহ বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় কঠোর হতে অনুরোধ করেছেন।

বন্দর কর্মকর্তারা অনেকেই জানিয়েছেন, ভারতীয় ট্রাকচালকদের অবাধ চলাফেরায় বন্দর এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই অফিস করতেও ভয় পাচ্ছেন। বিষয়টি তারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সোনাহাট স্থল বন্দরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ গিয়াস বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। ওই বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি, থানার ওসিসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ছিলেন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে আমরা কঠোর হতে অনুরোধ জানিয়েছি।

এই বন্দর কর্মকর্তার দাবি, যখন ট্রাকগুলো প্রবেশ করে তখন আমরা চালক ও সহকারীদের জ্বর মাপার ব্যবস্থা করেছি। এরপর যখন তারা ডিপোতে যায় তখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করব তারা যেন বিষয়টি গুরুত্ব দেন। নির্দিষ্ট জায়গায় চলাফেরা করেন।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক জানান, বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপারদের থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং ট্রাকগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া তাদের চলাফেরা, গোসলসহ অন্যান্য কাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া আছে। তবুও তো শঙ্কা থেকেই যায়। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্য বিধি মানার চেষ্টা করছি।

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের ডেপুটি ডিরেক্টর মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় যেসব ট্রাকচালক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তারা যেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে সেজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি।

বুড়িমারী স্থল বন্দরের আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমীন বাবু জানান,  প্রথমদিন একটু সমস্যা হয়েছে। এখন যেসব ট্রাকচালক ঢুকছে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে। তারা যেন এই বিধিনিষেধ মানেন সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।

সোনাহাট স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি মোস্তফা জামান বলেন, আমাদের এখানে যারা আসে তারা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। ট্রাক আনলোড করার সময় তারা ট্রাকেই থাকে। তাদের হাতে হ্যান্ড গ্লাভস থাকে, হ্যান্ড স্যানিটাউজার থাকে। কোনো অসুবিধা নেই।

রংপুর বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আহাদ আলী বলেন, ভারতীয় যেসব চালক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তারা যেন গাড়ি থেকে না নামে সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে বন্দরগুলোতে। এরপরও কিছু বিষয় থাকে যেগুলোর কারণে গাড়ি থেকে নামতেই হয় চালকদের। সেজন্য নির্ধারিত জায়গার বাইরে তারা যেতে পারবে না। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি কঠারভাবে দেখবে। তারা কঠোর না হলে এর ভয়ানক পরিস্থিতি ভোগ করতে হবে।

বিভাগীয় এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু ভারতে করোনাভাইরাসের ট্রিপল ভ্যারিয়েন্ট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, সেহেতু এ বিষয়ে এখনই আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। নিজে রক্ষা এবং পরিবারকে রক্ষা করার জন্য হলেই আপাতত ভারতীয় ট্রাক চালকদের কাছ থেকে সমাজিক দূরত্ব মানতে হবে বাংলাদেশিদেরকেই।

রংপুর করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, এ ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বাংলাদেশেও ভারতের এ ভয়াবহ ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এখনই কঠোর হওয়া না গেলে ঝুঁকিতে পড়বে বিভাগসহ পুরো দেশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!